যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আড়ালে সরলমনা তরুণ সমাজের আবেগকে পুঁজি করে নাস্তিক-মুরতাদসহ ইসলামবিদ্বেষী একটি মহল মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে, যা কোনো অবস্থাতেই এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সহ্য করবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষ আলেম ও সর্ববৃহত্ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সভাপতি পীরে কামেল হজরত আল্লামা শাহ্ আহমেদ শফী (দা.বা.)। তিনি দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপে ব্লগার আহ্মদ রাজীব হায়দার শুভ ওরফে ‘থাবা বাবা’র ইসলামবিরোধী জঘন্য অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে একথা বলেছেন।
বিবৃতিতে আল্লামা শাহ্ আহমেদ শফী বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, আখেরি নবী হজরত রাসুলুল্লাহ্ (সা.), পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্ম ও ইসলামের রীতিনীতি নিয়ে ব্লগার রাজীব যেসব মিথ্যা, বানোয়াট, জঘন্য অশ্লীল ও উদ্ভট কল্পকাহিনী তার ব্লগে তুলে ধরে দীর্ঘদিন থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করার যে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তার এই জঘন্য ও ঘৃণ্য অপপ্রচার আজ প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে চরম আঘাত হেনেছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে এত বড় দুঃসাহস এ পর্যন্ত আর কেউ কখনও করেনি।
আল্লামা শাহ্ আহমেদ শফী হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পবিত্র ইসলাম ধর্ম ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুসলমানদের নয়নের মণি রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র ও কটূক্তি এদেশের মানুষ সহ্য করবে না।
তিনি বলেন, ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণীত হওয়ার ফলে নতুন প্রজন্ম ইসলামের ভাবাদর্শ থেকে ছিটকে পড়ে নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতনের দিকে দ্রুত ধাবিত হয়ে পড়ছে। যার কুফল এরই মধ্যে আমরা অবলোকন করতে শুরু করেছি। দাড়ি-টুপিধারী ও ইসলামপন্থীদের ওপর আক্রমণ এবং আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে ইসলামবিরোধী মনোভাব তৈরি হওয়া ছাড়াও দেশব্যাপী সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, ধর্ষণ-ব্যভিচার বিরামহীনভাবে বেড়ে গিয়ে আদর্শ ও নৈতিকতায় ধস নামতে শুরু করেছে।
আল্লামা আহমেদ শফী উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে সরকার ইসলামবিরোধী ব্লগার ও অপপ্রচারকারী নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতা কীভাবে করতে পারে? কীভাবে সরকারি মহল একজন স্বঘোষিত নাস্তিক ও ইসলামের বিরুদ্ধে জঘন্য কুত্সা রটনাকারীকে ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করার প্রয়াস চালাতে পারে?
তিনি দলমত নির্বিশেষে সব ইসলামপ্রিয় মুসলমানের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল এবং ইসলামের ইজ্জত রক্ষায় নাস্তিক-মুরতাদদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিসহ সব ইসলামবিরোধী অপতত্পরতার প্রতিবাদে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
একই বিবৃতিতে হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম বলেন, নিহত ব্লগার রাজীবসহ আরও কিছু নাস্তিক ইন্টারনেট মিডিয়ায় মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে যে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করে চলেছে, তাঁর জীবন সম্পর্কে এবং তাঁকে হেয় করে যে মিথ্যা কল্পকাহিনী রচনা করেছে, তাতে ঈমানদার প্রতিটি মুসলমানই চরম মর্মাহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, মুসলমানদের প্রাণাধিক প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সা.) থেকে শুরু করে ইসলামের সব বিধিবিধান, ধর্মীয় আচার, পবিত্রতার বিভিন্ন প্রসঙ্গ ব্লগার রাজীব ওয়াজরীতি অনুসরণ করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। যৌনতাকে তার ব্লগে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে হাজির করা হয়েছে। নূরানি ছাপাসমগ্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এমন কুরুচির মন্তব্যধর্মী লেখা ইসলামের দুশমনের পক্ষেও সম্ভব নয়। আর অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ধরনের ইসলামবিদ্বেষী ব্লগাররাই শাহবাগের যুদ্ধাপরাধী বিরোধী আন্দোলনকে পরিচালনা করছে। এই আন্দোলনের আড়ালে যে দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দেয়াই মুখ্য উদ্দেশ্য, এটা আর কারও কাছেই গোপন নেই। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে এদেশে ইসলামের যে ক্ষতি হয়েছে, অতীতে আর এমনটা দেখা যায়নি। রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধে এত জঘন্য অপপ্রচারের সাহস পশ্চিমা বিশ্বের ইসলাম-বিদ্বেষীরাও দেখায়নি। অথচ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের জাতীয় সংসদে এই কুলাঙ্গারের জন্য শোক প্রস্তাব উত্থাপন হয়, এটা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচারের এত জঘন্য অবমাননার প্রতিবাদে শরিক না হয়ে কোনো মুসলমানেরই নিশ্চুপ বসে থাকার পথ এখন আর খোলা নেই।
হাটহাজারী মাদরাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এবং লেখক ও হাদিস গবেষক আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ধর্ম কারও সম্পত্তি নয়। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু কুলাঙ্গার রাজীব ইসলামকে আক্রমণ করে যেসব লেখা লিখেছে, তা পুরোটা পড়ার সাধ্যও কোনো মুসলমানের নেই। এতটা কুৎসিত ও জঘন্য ভাষায় ইসলামের অবমাননা করার সাহস এ পর্যন্ত কেউ দেখায়নি। দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা নতুন করে চালু হওয়ার পর থেকেই ইসলামবিরোধীদের আস্ফালন লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আড়ালে সারা দেশে অনাচার-ব্যভিচার ছড়িয়ে দেয়ার অপতত্পরতা চলছে। সরলমনা জনসাধারণ প্রথমে বুঝতে না পারলেও এখন পরিষ্কার বুঝে গেছে, ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকরা সরকারের ছত্রছায়ায় তরুণ সমাজের আবেগকে বিভ্রান্ত করে এক জঘন্য ইসলামবিদ্বেষী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
তিনি তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত না হয়ে নাস্তিক-মুরতাদদের প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারকে অবিলম্বে রাসুলের অবমাননাকারীদের কঠোর শাস্তিসহ সব ইসলামবিরোধী অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় ইসলামী নেতৃবৃন্দ তৌহিদি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে এর প্রতিরোধে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
Click This Link