somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ের কার্ড

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার বিয়ের কার্ড প্রথম আমার হবু শ্বশুরকে দিলাম;
শ্বশুর হতবাক, তার মেয়ের আসন্ন দুর্যোগ চিন্তায় স্তব্ধ।
আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।
তার ছল ছল চোখে দেখলাম শুধুই হতাশা।

আমার অফিসের বসকে আমার বিয়ের কার্ডটা দিতেই
তিনি তেড়ে উঠলেন। একটা কড়া ঝাড়ি দিয়ে বললেন,
“গত সপ্তাহেই তো ছুটি নিয়েছো।
আজ আর ছুটি পাবেনা। যাও।”
ওটা আমার বিয়ের কার্ড বলতেই ভ্রু- কুচকে বস
খামটা খুললেন, আমার দিকে উদাসীন চোখে তাকালেন।

আমার বন্ধু ইকবালকে বিয়ের কার্ডটা দিলাম।
ও খামটা খুলেই আমার দিকে ওর দীর্ঘ লোমশ
শরীরটা নিয়ে তেড়ে আসল।
আমি দৌড় দিলাম ওর বিখ্যাত ঘুষিটা এড়ানোর জন্য।
শুনলাম ও বলেছে, “শালা, আমার সাথে ফাজলামি।
এটা তোর বিয়ের কার্ড? তোকে পেয়ে নেই হাতের নাগালে।”

নীতার হাতে বিয়ের কার্ডটা দিলাম,
এই কার্ডে আমার নামের পাশে কনে হিসেবে ওর নাম লেখা।
পাতলা হলুদ খামে, সাদাকালো নকশাবিহীন একটা ফটোকপি কাগজ।
আমার বিয়ের কার্ড।

নীতা উল্টে পাল্টে কয়েকবার পড়ল কার্ডটা,
ওর চোখে অঝড় বৃষ্টি ঝড়ল, কাপা ঠোঁটে
কিছু হয়ত বলতে চাচ্ছিল, কিন্তু ওর ঠোঁটের ক্ষমতা নেই
ওর ভিতরটা শব্দ দিয়ে বাইরে বের করে আনবে।
ওর ভিতরের ঝড় শুধু বৃষ্টি হয়েই ওর চোখে নামল।

নীতা শুধু ঝুকে এসে আমায় প্রণাম করল।
বুঝলাম ওর হৃদয়, ওর সমস্ত অস্তিত্ব আমার কাছে
সমর্পন করে দিয়ে ও অপেক্ষা করছে
আমার আত্মায় একাত্ম হওয়ার জন্য।

শুধু নীতাই বিয়ের কার্ডের উল্টো পিঠ পড়েছিল।
ওখানে লেখা ছিল,

“হিসেব করে দেখলাম, আমার ৫০০ অতিথির জন্য
৫০০ টা কার্ড ছাপতে অন্তত ৫০,০০০ টাকা লাগবে।
এ টাকায় আমি অন্তত ৫০০ দুঃস্থ, অভাগার মুখে
একবেলা একটু ভালো খাবার তুলে দিতে পারব।
তাই ২৫০ টাকায় ছাপানো আমার ৫০০
বিয়ের কার্ডের একটি আপনাকে।”

৫০০ মানুষের কয়েক সেকেন্ডের দৃষ্টি ক্ষুধা মেটানোর
চেয়ে ৫০০ মানুষের একবেলা বেঁচে থাকার ক্ষুধা
মেটানোই কি বেশি প্রয়োজন নয়? বেশি সুন্দর নয়?
কাগজে আঁকা কাল্পনিক সৌন্দর্য্যের চেয়ে
মনের বাস্তব সৌন্দর্য্যই কি আরও বেশি সুন্দর নয়?


-------------------- শালিকের ফ্ল্যাটে সাবলেট থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের সেকাল এবং একালের ঈদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:১৩



কানাডার আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে কিনা সেটা খুঁজতে গতকাল সন্ধ্যায় বাসার ছাদে বা খোলা মাঠে ছুটে যাইনি। শৈশবে সরু এই চাঁদটা আকাশে দেখতে পেলেই দেহকোষের সবখানে একটা আনন্দধারা বয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

লিখেছেন অপলক , ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×