প্রেম সুখ, আত্মিক সুখ
অনিন্দ্য অন্তর অপু (অঅঅ)
আমি আর আমার প্রেমিকা,
সুদৃশ্য একটা পার্ক ধরে হাঁটছিলাম,
ওর খোলা চুলগুলো আমার গাল ছুঁয়ে যাচ্ছিল,
চুলের মিষ্টি সুবাস আমার মুগ্ধতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল।
পাশাপাশি হাঁটছিলাম কাঁধে কাঁধ রেখে,
ওর শরীরের স্পর্শ আমায় মাঝে মাঝে দুঃসাহসী প্রেমিক করে তুলছিল।
ও আমার বাহুলগ্না হয়ে কাঁধে মাথা রেখে অলস পায়ে হাটতে থাকে।
লেকের উপরের ছোট্ট পুলটা পার হচ্ছিলাম আমরা,
হঠাৎ একটা মেয়ে আমার টি-শার্টের খুঁট ধরে টান দিল।
অন্ধ, এক পা নিয়ে একটা মেয়ে, লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে,
হাতে ভিক্ষার থালা, বছর আটেক হবে,
গায়ে অগ্রহণযোগ্য ময়লা ছেঁড়া জামাকাপড়।
নাক দিয়ে ঠাণ্ডা ঝড়ছিল অবিরত।
আমায় কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, “দাদা, আমায় পার্কের
সামনের বড় রাস্তাটা পার করে দিবে?”
আমি ইতস্তত না ভেবে প্রেমিকার হাত ছাড়িয়ে
বাচ্চাটার এক হাত কাঁধে নিলাম।
প্রেমিকাকে অপেক্ষায় রেখে অতি সাবধানে
চলন্ত গাড়ির গতি এড়িয়ে বাচ্চাটিকে রাস্তা পার করে দিলাম।
মেয়েটির নোংরা শরীর আমার টি-শার্টে দাগ রেখে গেল,
ওর অবিরত নাকের ঠাণ্ডা আমায় স্মৃতিচিহ্ন দিতে ভুলল না।
তবু আমার ঘেন্না লাগল না, বাচ্চাটিকে ওর পথে যেতে দেখে ভালো লাগল,
আত্মিক সুখবোধে ওর দেয়া নোংরাকে মনে হল উপহার।
আমি ফিরে এসে দেখি আমার প্রেমিকা নেই,
কিছুক্ষণ পর আমার মুঠোফোনে ওর বার্তা,
“তুমি থাক তোমার নোংরা, খোঁড়া, কানা গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে,
আমি চললাম।”
আমি একা পায়চারি করতে থাকলাম পার্কে,
একটা বোধ জন্মাল মনে- প্রেম সুখ আর আত্মিক সুখ এক নয়।
কখনও কখনও একটা দৌহিক, বাকিটা মানসিক।
বাচ্চাটির দেয়া উপহার যেন বলে দিল, ও আমার যোগ্য নয়,
আমি যেভাবে পৃথিবীটাকে দেখি, এমন একজনকেই পাশে চাই
যে আমার মত করে দেখে পৃথিবীটাকে।
মানসিক, মানবিক সমতা ছাড়া একসাথে থাকা যায়না।
একসাথে থাকতে নেই।