রমজান মাসে প্রতিটি মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে অফুরন্ত রহমত ও বরকত বয়ে আনে। বান্দার জন্য নিয়ে আসে শান্তি ও মুক্তির সুসংবাদ। সেহেতু এই মাসের আগমনে প্রতিটি মুমিন বান্দার হৃদয় আনন্দে আবেগপ্লুত হয়ে যায়। স্বর্গীয় আনন্দে উদ্বলিত হয়ে যায় সারা শরীর ও মণ। বান্ধার প্রতি বিশেষ ভালোবাসার প্রতীক স্বরূপ আল্লাহতায়ালা বান্ধাকে মাহে রমজানের মতো একটা অফুরন্ত নেয়ামত পূর্ণ মাস উপহার দিয়েছেন।
মুসলিম সমাজ ও সংস্কৃতিতে রোজার ধর্মীয় অনুশাসন এক সুদূর প্রসারী প্রভাব বিস্তার করে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনাতীত। তবে সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে দেখা যায়, রোজা একজন প্রকৃত রোজাদারকে নৈতিকতার চরম উৎকর্ষে নিয়ে যায়। সুর্যদয় থেকে সুর্যাস্ত পযন্ত কোন খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ না করা, কোন মিথ্যা কথা না বলা,জগড়া ফ্যাসাদ না করা , হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে চলা, সন্ত্রাস জাতীয় কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি বিষয়ে নিষ্টার সঙ্গে একমাস পালন করতে পারলে মানুষ এমনিতেই নৈতিকতার শীর্ষদেশে আরোহণ করতে সক্ষম হবে।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, "রোজা মুমিনের ঢাল স্বরূপ।" ঢাল যেমন যুদ্ধাস্ত্রের আঘাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। রোজা ও তেমনি একজন মানুষকে সমুহ অপকর্মের হাত থেকে রক্ষাকরে। রোজার উপবাস দারিদ্র্যকেও উপলব্ধি করার সুযোগ এনে দেয়। ফলে বিত্তবান রোজাদার তার নৈতিক তাড়নায় গরিব মিসকিনদের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। এভাবে মানব সমাজে আর্থিক সমতা ও শান্তি ফিরে আসে।
রমজানের রোজা ফরজ হয়। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা মকাররমা থেকে মদিনায় হিজরত করে আসার প্রায় ১৭ মাস পর হিজরী দ্বিতীয় সনের শাবান মাসের মাঝা মাঝি সময়ে কেবলা পরিবর্তন হওয়ার দশ দিন পর। আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ হচ্ছে,
"হে ঈমানদারগণ তোমাদের প্রতি রোজাকে ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্বপুরুষদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। "(সুরা বাকারাহ ১৮৩)
গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পুরর্ণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। (সুরা বাকারাহ ১৮৪)
রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথ যাত্রিদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধান কারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যেলোক এ মাসটি পাবে ,
সে এ মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্যদিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না, যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তায়ালার মহত্ব বর্ণনাকর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সুরা বাকারাহ ১৮৫)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:৪৪