মহাসমুদ্রের মৎসকন্যা বা সাইরেন(মারমেইড) ছিল গ্রিকপুরাণের মায়াবিনী গায়িকা। সুরের মায়াজাল সৃষ্টির মাধ্যমে তারা জাহাজের যাত্রীদের মৃত্যুর দিকে আকর্ষণ করতো। তাদের গানের গলা এতই চমৎকার ছিল যে সেই গান নাবিকদের কানে পৌঁছালে নাবিকরা সেই দ্বীপের দিকেই ধাবমান হতো। ফলে সেই জাহাজ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে মৃত্যুবরণ করত সবাই। সাইরেন ছিল নদীদেবতা একিলেপাসের কন্যা। হোমারের ওডিসিতে সাইরেনদের ঊর্দ্ধাংশ মানবী এবং নিম্নাংশ পাখির মত দেখতে বলা হয়েছে।
ওডিসি অনুসারে সাইরেন
কিন্তু অন্যান্য সূত্রে সাইরেনদের দেহের ঊর্দ্ধাংশ মানবী এবং নিম্নাংশ মাছের মত বলে জানা যায়। সাইরেনিয়া নামক একটি দ্বীপে ছিল সাইরেনদের বাস।
আর্গোনটরা ( সোনালী ভেড়ার চামড়া সংগ্রহ অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের দল ) একবার সাইরেনদের দ্বীপ অতিক্রম করতে যাচ্ছিল। তাদের পরিণতির কথা ভেবে দেবী আফ্রোদিতি অর্ফিউসকে সাইরেনদের দ্বীপ অতিক্রমনের সময় তাঁর বীনায় মোহময় সুর সৃষ্টি করতে নির্দেশ দেন। অর্ফিউস ছিল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব সুর স্রষ্টা।
দেবতাদের পর মরণশীলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম সুরের জাদুকর এই অর্ফিউস। সে এক বিশেষ ধরনের বাশি বাজাত, যেটার নাম ছিল লাইর। দেবতা হারমিসের তৈরি এ বাশি পূর্ণতা পেয়েছে অর্ফিউসের কাছে। অর্ফিউস ছিল দেবতা অ্যাপোলোর পুত্র। অর্ফিউসের মা ছিল ক্যালিউপ। অর্ফিউসের বাস ছিল পিম্পলিয়ায় , যেখানে সে তার শৈশব মা এবং বোনদের সাথে কাটিয়েছে। দেবতা অ্যাপোলো অর্ফিউসকে খুব ভালবাসতেন এবং তিনিই প্রথম অর্ফিউসকে লাইর বাজানো শেখান।
জেসন ছিল আর্গোনট দলের নেতা। জেসনের দল যখন সাইরেনিয়া দ্বীপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো , তখন অর্ফিউস তার বাঁশি বাজানো শুরু করলো । তার সুর সাইরেনদের সুরকে ছাপিয়ে গেলো । নাবিকরা নিরাপদে দ্বীপ পার হতে পারলো ।কিন্তু একজন আর্গোনট জাহাজের পাল ওড়ানোর কাজে ব্যস্ত থাকায় তার কানে অর্ফিউসের সুর প্রবেশে ব্যর্থ হয়। ফলে সে উন্মাদের মতো জাহাজ থেকে লাফিয়ে সাগরে পড়ে যায়। আফ্রোদিতি অবশ্য পরে তাকেও ঊদ্ধার করেন।
ট্রয়যুদ্ধ শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথে মহাসমুদ্র দেবতা পোসিডনের ষড়যন্ত্রে দিকভ্রান্ত অডিসিউসও সাইরেনদের কবলে পড়েন। ফলে তিনি সাইরেনদের দ্বীপ অতিক্রম করার আগে প্রত্যেক নাবিকের কান মোম দিয়ে বন্ধ করে দেন এবং নিজেকে মাস্তুলের সঙ্গে বেঁধে রাখেন।
ফলে সাইরেনরা প্রথমবারের মতো ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার লজ্জায় তারা সমুদ্রে ডুবে আত্মহত্যা করে। মৃত্যুর পর সাইরেনরা সমুদ্রশিলায় পরিণত হয়। এভাবেই গ্রীক পূরাণের একটি চমৎকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
বি : দ্র : প্রিয় এই ব্লগ এবং ব্লগারদের আমি অনেক ভালবাসি সত্যি কিন্তু আমার ক্ষুদ্র ব্লগ জীবনে সবার এত বেশি ভালবাসার পাত্র হব কখনও ভাবিনি। আমি সত্যিই আপ্লুত এবং অবিভূত। এই ভালবাসাকে অপমান করার দুঃসাহস আমি দেখাতে পারব না কখনও। তাই ব্লগ ছেড়ে চলে যাবার কথা ভাবতে পারলাম না। তবে নিজের মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছুদিন দূরে থাকতে চাই। আপনাদের প্রাণ উজার করা ভালবাসা থেকে যাতে বেশিদিন দূরে থাকতে না পারি, সবার কাছে সেই কামনাই চাই। সেই সূত্রে এই পোষ্টের অবতারণা। সকল ব্লগারদের জন্য প্রাণভরা ভালবাসা এবং শুভকামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩৩