শিল্পীর কল্পনায় আফ্রোদিতি
গ্রিক পুরাণে রয়েছে এক আবেগ স্পন্দিত বাসনা সম্মোহিত জগৎ !! যে জগতে অহর্নিশি চলে আলো-আধারির খেলা !!
হেরা গ্রিক পুরাণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।হেরা ছিলেন স্বর্গরাণী ও উর্বরতার দেবী। ক্রোনোস এবং রিয়ার কন্যা হেরার সঙ্গে তার সহোদর জিউসের বিয়ে হয়। সেই কারনে স্বর্গরাণী হিসেবে পূজিত হতেন।হেরার জন্ম হয়েছিল এক অনাকাংখিত ঘটনার মাঝে! হেরার পিতা ক্রনাসের স্ত্রী ছিল তার সুন্দরী ভগিনী রিয়ার সঙ্গে। রিয়া গর্ভবতী হলে ক্রনাসের হঠাৎ মনে পড়ে যায় পিতৃ অভিশাপের কথা। অভিশাপে বলা হয়েছিল স্বীয় পুত্রদের দ্বারা ক্রনাস একদিন সিংহাসনচ্যুত হবে।
হেরা এবং জিউস
পিতা ইউরেনাসের অভিশাপের ভয়ে ভীত ক্রনাস প্রতিবারই রিয়ার সন্তান জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তাকে গিলে ফেলতে থাকে। অতঃপর রিয়ার কৌশলে বেঁচে যায় কনিষ্ঠ পুত্র জিউস।কালক্রমে জিউস বড় হয়ে ক্রনাসের উদর থেকে ভাই-বোনদের উদ্ধার করেন এবং তাদের মধ্য থেকে অনিন্দ্যসুন্দরী হেরাকে বিয়ে করেন।
জিউসের প্রথম কন্যা এথেনা ছিলেন যুদ্ধবিগ্রহ এবং চারুশিল্পের দেবী। তার নাম অনূসারেই এথেন্সের নামকরণ করা হয়। এথেনার জন্ম কাহিনী আরও চমকপ্রদ! মেটিসের গর্ভস্থ সন্তান জিউসের উপর প্রাধান্য বিস্তার করবে, এই ভয়ে জিউস গর্ভবতী মেটিসকে গিলে ফেলেন। কিছুদিন পর জিউস মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা বোধ করতে থাকেন।দেব-কারিগর হেফেস্টাস তখন কুড়াল দিয়ে জিউসের মাথা ফাঁক করে দেন। আর ঠিক সেই মুহূর্তে পূর্ণযুবতী এথেনা চারদিক প্রকম্পিত করে আবির্ভুত হন। এথেনা গ্রিক পুরাণের একজন অনিন্দ্যসুন্দরী যিনি কঠোরভাবে সতীত্ব রক্ষা করতেন।
আফ্রোদিতি গ্রিক পুরাণের প্রেমের দেবী এবং চিরকালের রূপের রানী। রোমানদের কাছে তিনি ভেনাস নামে জনপ্রিয়। আজকের ভেনিস শহর তার নামেরই স্মৃতি বহন করে চলছে। তার জন্ম সমুদ্রের ফেনা থেকে। মায়ের অনুরোধে টাইটান ক্রনাস তার পিতা ইউরেনাসকে নির্বীর্য করে দিলে ইউরেনাসের অন্ডকোষ সিথেরার সমুদ্রে পতিত হয়। মুহূর্তের মাঝে উন্মত্ত আবেগে সমুদ্র চঞ্চল আর মাতাল হয়ে ওঠে। তরঙ্গে তরঙ্গে ফেটে পড়তে থাকে সমুদ্রের উচ্ছ্বসিত ফেনা। ইউরেনাসের অন্ডকোষ আবরিত হয় সেই ফেনপুঞ্জে। এবং সেই রক্ত ফেনপুঞ্জের মাঝে আবির্ভূত হয় বিচিত্র বর্ণশোভিত একটি ঝিনুক এবং ঝিনুকের ওপরই স্ফুটযৌবনা আফ্রোদিতি।
কামদেবতা এরস বা কিউপিড আফ্রোদিতির সন্তান।
দ্যা জাজমেন্ট অব প্যারিস
রাজা পেলাউস ও সমুদ্রদেবী থেথিসের বিয়ে উপলক্ষে দেবরাজ জিউস অলিম্পাস পর্বতে একটি অনুষ্টানের আয়োজন করেন। সকল দেব-দেবী কে সেখানে নিমন্ত্রন জানানো হলেও রোষের দেবতা এরিখ কে নিমন্ত্রন জানানো হয় নি। তাই ইর্ষান্বিত হয়ে এরিখ সেখানে সোনার একটি আপেল ছুড়ে মারেন যেটার গায়ে লিখা ছিল ''সবচেয়ে রুপবতীর জন্য'' !!
হেরা (স্বর্গরানী), এথেনা (এথেন্সের প্রধান রক্ষক) ও আফ্রোদিতি (রূপের দেবীখ্যাত) এই তিন অসামান্য সুন্দরী একসাথে হাঁটতে গিয়ে একটা ঝরনার সামনে দাঁড়ালেন। অমনি সেই সোনার আপেলটি টুপ করে সামনের সবুজ ঘাসের ওপর পড়ল। তিন জনই সে আপেলের জন্য জিউসের কাছে দাবী জানায় এবং জিউস এই বিচারের দায়িত্ব প্যারিসকে দেন। নিজে আপেলটি পাওয়ার জন্য ''হেরা-প্যারিসকে ইউরোপ ও এশিয়ার রাজা বানাতে চান'' , ''এথেনা-তাকে সর্বশ্রেষ্ট যোদ্ধা বানাতে চান, এবং ''আফ্রোদিতি -তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে রুপবতী নারী ''স্পার্টার রানী হেলেনের প্রেম'' নিবেদন করেন।
প্যারিস হেলেনের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আফ্রোদিতিকে বিজয়মাল্য পরিয়ে দেন। আফ্রোদিতির করুণায় প্যারিস হেলেনের উপর অধিকার স্থাপনে সমর্থও হন। ফলে হেরা ও এথেনা প্রতিহিংসায় প্যারিসের ক্ষতি সাধনের যে চক্রান্ত করেন তারই পরিণতিতে সংগঠিত হয় ট্রয়যুদ্ধ বা ট্রোজান ওয়ার।ট্রোজান ওয়ার নিয়ে পূর্বের পোষ্টে আলোচনা করেছি।
গ্রীক পুরাণের অনিন্দ্যসুন্দরী হেলেন : সর্বনাশা সৌন্দর্য এবং ভালবাসার হিংস্রতার মিশেলে এক ট্র্যাডেজি ট্রোজান ওয়ার
বি: দ্র: এই পোষ্ট টি আমার প্রিয় ব্লগার দূর্যোধনকে উৎসর্গ করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩৩