আমি তখন জানতামও না প্রেম মানে কি?
মনে মনে ভাবতাম
সুন্দরি এক পরীর হাত ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছি।
মুখটা ভালোভাবে কল্পনাও করতে পারতাম না
শুধু ভাবতাম সুন্দরি এক পরী!
দিন চলে যায়, বয়স বাড়ে
শুধু আমার না আমার স্বপ্নেরও বয়স বাড়ে
ভরা কৈশোর বা উঠতি যোবনে তখন আমি
তোমাকে বাইকের পেছনে নিয়ে ছুটে চলি সুদূর-বহুদূর
চাঁদের আলোয় ভরা কোন এক নদীর পাশে,
কিংবা কুয়াশার চাদরে ভেজা ধানক্ষেতের আইলে বসে
কত শতবার করে গেছি একটাই অন্যায় আবদার
দিয়ে শত শত ভালবাসার দোহাই,
বিনিময়ে একটা ছোট্ট আদর আমার চাই।
আমার কাছে তখন ভালোবাসা মানে
তোমার একটা ছোট্ট আদর, হঠাৎ জড়িয়ে ধরা,
অতঃপর লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া।
মাঝখানে একটি বছর গেল চরম হতাশায়
কি করে যে পড়ালেখার এত বাঁধা ডিঙ্গায়।
মনে ছিল শুধু একটাই আশা
ঢাকায় আসলে হয়ত পাব তোমার দেখা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন আমি,
তোমায় নিয়ে কত স্বপ্ন আমার কত পাগলামি।
পরী নামটা কি আর মানায়?
বদলে দিলাম তোমার নাম ‘রাজকন্যায়’
লিখে ফেললাম তোমায় নিয়ে জীবনের প্রথম কবিতা-
“রাজকন্যা,
শুধু একবার বলো,
কতোবার ভালবাসি বলতে হবে
শুধু একবার ভালোবাসা শব্দটি শোনার জন্য ?”
এখনো কল্পনাতে শুধু তুমি,
বয়স বাড়ে তোমার, আমার আর আমাদের স্বপ্নের
তোমায় নিয়ে বিচিত্র কল্পনায় সবসময় ভরে থাকে আমার মন
ছোট্ট স্বপ্নগুলোও মনে হয় কৈশোর হতে যোবনে করেছে পদার্পণ।
এখন কল্পনাতে ঢাকার রাস্তায় তোমার হাত ধরে হেঁটে বেড়ায়
বয়সের সাথে সাথে তোমার দুষ্টামিও বেড়েছে বেশ;
কিন্তু কোন দিক দিয়ে আমি কি কম !
তুমি দুষ্ট হলে আমি মহা শয়তানি,
সুযোগ পেলেই করে বসি অন্যায় আবদার খানি ।
কিন্তু মাঝে মাঝে অবাক হই,
যখন দেখি বেয়াড়া স্বপ্ন গুলোর চুড়ান্ত পাগলামি ।
যেই আমি ভালোবাসা মানে বুঝতাম
হাতে হাত ধরা কিংবা ছোট্ট একটা আদর
সেই আমি এখন তোমার খাচায় বন্দি আস্ত একটা বাঁদর!
আমি জানি তুমি খুব লজ্জা পাও
যখন আমরা একসাথে ছাদে বৃষ্টিতে ভিজি
শরীরে লেপ্টে যাওয়া কাপড় সামলাতে খুবই ব্যাতিব্যাস্ত তুমি
অনিমেষ তাকিয়ে রই অসভ্য, হিংস্র, বর্বর, জানোয়ার আমি
আমি জানি না, একবারের জন্যও বুঝতে চাই না
আমার এই কামনীয় দৃষ্টি তোমার লাগছে কেমন
প্রেমের আদি নিষিদ্ব কথাগুলো আমার কাছে এখন কবিতার মতন।
যতই তুমি ভ্রুকটি করো না কেন, এড়িয়ে যাওয়ার শক্তি তোমারও নাই
যত ইচ্চা শাসাও, ভালো হচ্ছে না বলে যত ইচ্ছা বকা দাও
আমি একটা মুহূর্তের জন্যও মিস করব না এই মাহেন্দ্রক্ষণ
জড়িয়ে পেছন হতে তোমায়, সিক্ত চুলের মাতাল গন্ধ নিব অনেক্ষন।
বৃষ্টিস্নাত উন্মুক্ত কাঁধে একটা একটা করে এঁকে দিব কামনার ছাপ
উষ্ণ দু হাতের স্পর্শ দিয়ে বুঝে নিব সৌষ্ঠব শরীরের বক্রতার মাপ।
আমার উষ্ণতা তোমায় পাগল করবে
আদুরে গলায় তুমিও বলবে ভালোবাসার আদি কবিতা
বলবে আমার মাঝে তুমি হারাতে চাও তোমার স্বকীয়তা।
তুমি পাগল হবে, হতে বাধ্য
তোমার লজ্জা ভেঙ্গে আমি নেব যুদ্ব জয়ের আনন্দ।
আমি এখন শুধু তোমাকে নিয়ে ভাবি না
তোমার স্বপ্নগুলো নিয়েও ভাবি
আমাদের ছোট্ট একটা বাড়ি হবে,
ব্যালকনিতে দোলনা সহ জারবারা ফুলের ছোট্ট একটা বাগান হবে।
আর...
প্রতিদিন বিকালে তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাওয়া
বেইলি রোডে কামাল মামার ঝাল ফুচকা খাওয়া
বৃহস্পতিবার বিকাল হবে আমাদের হাই ফাইভ
যদি থাকে গাড়ি, তাতে হবে বিশাল লং ড্রাইভ।
সুদূর দুরের উচ্চবিলাসি মারমেইড ক্যাফে
থাই, চাইনিজ যা ইচ্চা তাই
সপ্তাহের একদিন হিসাবের বাইরে থাকা চাই
দরকার হলে দুজনে মিলে খাব লাল পানি
রাস্তার রাজা মোরা, একদিনের ধনী।
অতঃপর...
এক্কেবারে প্রথম বছরেই আমাদের ছোট্ট দুইটা টুইন বেবি হবে
নাম নিয়ে তোমার আমার সে কি ঝগড়া
কিন্তু তুমিই তো বলেছিলে মেয়ে হলে আমার
এখন আমি দুই তুমি শুন্য ।
আফসোস হয়, যদি আমি আঁকতে পারতাম
তাহলে ঠিকই তোমার ছবি চিত্রপটে আঁকতাম।
কিন্তু আমি যে কেবলই এক ব্যর্থ কবি
তাই কবিতা দিয়েই আঁকতে হল তোমার জলছবি।
সে দেখতে কেমন ??
দুধে-আলতা তার গায়ের রঙ
চোখ গুলো তার কালো, আমার কল্পনাতে ভাসে
মিটিমিটি চোখ গুলো তার কথা বললে হাসে।
ঠোঁট দুটি তার চিকন, শান্ত সকালের মত কোমল
হালকা গোলাপের আভায় তা হয়ে ওঠে অপরূপ লাবন্যজ্জ্বল।
দুই ঠোঁট আর পাপড়িতে হালকা গোলাপি আভা,
স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি সে, সে এক অনন্য বিভা।
বাতাসে উড়ু উড়ু কালো চুলে তার হালকা কিত্রিম রঙের দোলা
পড়ন্ত বিকেলে তাতে জলতরঙ্গের মত সূর্যের আলো করে খেলা।
হাসলে রূপসীর গালে পড়ে টোল।
টোল পড়া হাসিতে রয়েছে তার এক অনন্য মমতা,
বিন্ম্র লজ্জিত সে হাসি যেন শুভ্র সকালের পবিত্রতা।
অভিমানীর রূপ কোমল থেকে কঠিন হতে লাঘেনা ক্ষণ
কারো কঠিন রূপ এত সুন্দর হতে পারে!
তা দেখার জন্য আবুঝ মন তাকে জ্বালায় সর্বক্ষণ।
শান্ত সকালের মত কোমল মুখখানির পানে
আমি আজীবন তাকিয়ে রব তৃষ্ণার্ত চোখে,
স্রষ্টার কাছে আমার আকুল প্রাথনা
আমার প্রতিটি সকাল যেন হয় তার অপরূপ মুখখানি দেখে।
এদিক তাকাই, ওদিক তাকাই
কত খুজলাম, চারদিকে কত দেখলাম
পাইনি কোথাও সেই দুধে-আলতা মুখ,
লজ্জায় আনত মুখের শোভা কিংবা সলজ্জ রক্তিম আভা।
কাউকে দেখিনি তোমার মত হাসতে
কেউ তো পারে না তোমার মত আদুরে গলায় কথা বলতে।
কাউকে পাইনি যাকে রেগে গেলে রাঙ্গাপরীর মত মনে হয়,
কাউকে পাইনি যার হাসিতে জলতরঙ্গের শব্দ হয়।
আমি জানি তোমার দেখা আমি পাব একদিন
কিন্তু সন্দেহ হয়
সাহস করে কি কিছু বলতে পারব সেদিন-
“ ভালোবাসার যে বীজ বপন করেছিলাম জীবনের প্রথম কৈশোরে,
ভালোবাসার সে গাছ আজ ডাল-পালা, ফুল-ফলে গেছে ভরে।
একটি জীবন তুমি অনায়সে পার করে দিতে পারবে নির্দ্বিধায়
হয়তবা তার পরেও পারবে না পোঁছাতে
আমার ভালোবাসার শেষ সীমানায় ”।
-----------------------------------------
"রাজকন্যা"
কতোটুকু ভালবাসলে তুমি আমায় পাগল বলবে ?
কতদিন তোমার পানে চেয়ে থাকলে
তুমি আমায় তৃষ্ণার্ত বলবে ?
কত অনন্ত সময় তোমার পিছু পিছু ঘুরলে
তোমার বিরক্তির অবসান হবে ?
পৃথিবীর কতো ফুল তোমায় এনে দিলে বলবে
তুমি এতো পাগল কেন ?
কতোবার চাঁদ এর সাথে তুলনা করলে
তুমি একটি বার লজ্জা পাবে ?
কতো সমুদ্রের ঢেউ আর
কতো সহস্র নদীর স্রোত এর সাথে তুলনা করলে
ধ্বনিত হবে তোমার জলতরঙ্গ হাসি ?
রাজকন্যা,
শুধু একবার বলো
কতো বীর এর সাথে খোলা ময়দানে যুদ্ধ করতে হবে
তোমায় জয় করবার জন্য ?
কতো সমুদ্র পাড়ি দিলে পাওয়া যাবে
তোমার সেই কাঙ্ক্ষিত নীল পদ্মমনি ?
রাজকন্যা,
শুধু একবার বলো,
কতোবার ভালবাসি বলতে হবে
শুধু একবার ভালোবাসা শব্দটি শোনার জন্য ?
-------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৪