অ্যাডভেঞ্চার মুভির বিশাল ভক্ত? হলিউড, কোরিয়ানসহ আরও যা থ্রিলার মুভি আছে সব গুলে খেয়েছেন? তাহলে আসুন এবার জমজয়াট অ্যাডভেঞ্চার দেখি বাংলায় গোয়েন্দা "প্রদোষ চন্দ্র মিত্র" এর, যার ভাল নাম "ফেলুদা"। আর মুভির নাম "বোম্বাইয়ের বোম্বেটে"।
[img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/156387/small/?token_id=c772b8d1fca52ddc443e6c99acef3fcd
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ লেখক ফেলুদার অন্ধ ভক্ত। কাজেই অতিরিক্ত প্রশংসা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
অনেকদিন থেকেই ফেলুদা মুভির রিভিউ লেখার ইচ্ছা। প্রথমে সবচেয়ে প্রিয় ফেলুদা মুভি "সোনার কেল্লা" নিয়ে লিখব ভাবছিলাম। কিন্তু সেটা রিভিউ হত না, জটায়ুর মত শুধু বিশেষণ দিয়ে প্রশংসাই হত। এখনও যে কতটা রিভিউ হবে তা নিয়ে আমি নিজেই শঙ্কিত। তাই পাঠকদের নিজ দায়িত্বে পড়ার অনুরোধ করছি।
গল্প তো সবার-ই পড়া। তবুও বলছি গল্পের লেখক শ্রী সত্যজিৎ রায়। আর পরিচালনায় সন্দীপ রায়। সত্যজিৎ রায় এর লেখাগুলোই আমার কাছে চিত্রনাট্যের মত মনে হয়। যা নিয়ে যে কেউ চিত্রায়ন করতে পারবে। এটি ফেলুদার গল্প হলেও প্রধান চরিত্র জটায়ু। আর জটায়ুর রহস্য জানতে হলে মুভিটা দেখতে হবে।
এবার আসি চরিত্রে। ফেলুদা চরিত্রে সব্যসাচী চক্রবর্তী আমার কাছে বেস্ট। যদিও শেষের কিছু মুভিতে পেটমোটা আর বয়সী ফেলুদাকে দেখতে ভাল লাগেনি ও সর্বশেষ তোপসে হিসাবে সাহেব কেও পছন্দ হয়নি। আর তোপসে হিসাবে আমার সবচেয়ে পছন্দ শাশ্বত চ্যাটার্জী কে। জটায়ুর চরিত্রে লিজেন্ড সন্তোষ দত্ত এর পর বিভু ভট্টাচার্য কেই চেহারার সাদৃশ্যে সবচেয়ে যথাযথ লেগেছে। তবে "বোম্বাইয়ের বোম্বেটে" এর ফেলুদা টিম আমার কাছে পারফেক্ট। আর গোরের চরিত্রে আশীষ বিদ্যার্থী তো অসাধারণ। অনেক ছোট চরিত্রেও কাস্টিং যথাযথ।
লোকেশন মুম্বাই। আর মুম্বাই মানেই সমুদ্র, বলিউড, ফিল্ম মেকিং; অপরাধ জগৎ আর অ্যাকশন, থ্রিল। এর সবই আছে তবে ষোলআনা বাঙ্গালীয়ানায়।
জটায়ু ওরফ লালমোহন বাবুর গল্প নিয়ে ছিনেমা তৈরি হবে বলিউড খ্যাত মুম্বাইতে। আর সেই ছিনেমার শুটিং দেখতেই ফেলুদা আর তোপসেকে নিয়ে জটায়ুর মুম্বাই যাত্রা। ওদিকে লিফটের ভিতর হল খুন আর হাতবদল হল বইয়ের প্যাকেট। কিন্তু বইয়ের প্যাকেট মানেই কি সবসময় নির্দোষ? খুন হলই বা কেন? দুর্ধষ দুশমন কে বা কারা? কি চায়? তারা কার পিছনেই বা ছুটছে? গুলমোহর সেন্টের-ই বা রহস্য কি? ফেলুদা কি স্রেফ বেড়াতেই এসেছে নাকি আগে থেকেই জানত? এত প্রশ্নের উত্তর পেতে আপনাকে মুভিটা দেখতে হবে।
এই মুভির সবচেয়ে মজাদার দিক হচ্ছে মুভির ভিতর আরেকটি মুভির শুটিং দেখা। গল্পটাই এই শুটিং কে ঘিরে। এছাড়া প্রথম দৃশ্যের বিস্ফোরন, ফেলুদার কারাতে লড়া, শিবাজি কাসলের জানালা দিয়ে দেখা আরব সাগর, মুম্বাই শহর আর শেষ দৃশ্যে ট্রেনের সাথে ঘোড়ার দৌড় তো অসাধারণ। সেই সাথে ফেলুদার মগজাস্রের প্রয়োগ তো আছেই।
এই মুভি তো অনেকবার দেখাই তার সাথে গল্প টাও অনেকবার পড়া। এই মুভির ফেলুদার একটা ডায়ালগ " রহস্য যখন জাল বিস্তার করে তখন এভাবেই করে লালমোহন বাবু। এ না হলে জাত রহস্য হয়না, তা না হলে ফেলু মিত্তিরের মস্তিষ্কপুষ্টি হয়না।" সবচেয়ে প্রিয় ডায়ালগ। আমার ফেবু প্রোফাইলেও আছে।
এই মুভিকে নিয়ে কিছু সমালোচনাও আছে। যেমন ফেলুদার হাতে মোবাইল দেখা যায়। ফেলুদার হাতে থাকা চারমিনার এর সিগারেট নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। আমি নিজে ধুমপান ঘৃণা করি। তবে শুধু দুইটি চরিত্রকে সিগারেট ছাড়া ভাবতে পারিনা। দুটোই সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি। একটা তো ফেলুদা, অন্যটি আরেক লিজেন্ড উত্তম কুমার অভিনীত নায়ক। নায়ক মুভির সিগারেট খাওয়ার কিছু দৃশ্য তো আমার রীতিমত ফেভারেট।
যদি এখনও মুভিটি না দেখে থাকেন আর ডিটেকটিভ গল্পের ভক্ত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই মুভিটি দেখুন। কথা দিচ্ছি ভাল লাগবে। তবে যারা এখনও গল্পটি পড়েননি তাদেরকে সাজেশন করব আগে মুভিটি দেখে পরে গল্পটি পড়ুন। কারন দেখলেই জানতে পারবেন।