ফুটপাথ দিয়ে আপন মনে হেটে যাচ্ছে অর্থী। আজ তাঁর ছাত্রীটি বেড়াতে গিয়েছে, তাই আগেই ছুটি মিলল অর্থীর। কিছু এলোমেলো চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে অর্থীর মন। অথচ মাস ছয়েক আগেও এমন কোনও চিন্তার লেশমাত্রও মনে ছিলোনা।
চিন্তায় ছেঁদ পড়ল, মোবাইল বাজছে। অপরিচিত নাম্বার। "এইডা কি খাগড়াছড়ি?", একটা কর্কশ কণ্ঠ জানতে চাইল। "না, ঢাকা", অর্থী বলল। "আপনে কে?" আবার বিরক্তিকর কণ্ঠস্বরের প্রশ্ন। মেজাজ টা চরম বিগরে গেলো অর্থীর। কোনও উত্তর না দিয়ে ফোন টা কেটে দিল। একটা সুন্দর অবসরের বিকালে এভাবে মেজাজ টা বিগরে যাওয়াতে খুব খারাপ লাগছে অর্থীর।
বাস স্ট্যান্ড এ এসে দাঁড়াল। আজ বাস এ জায়গা পেতে কোনও সমস্যা হলনা। আবার জানালার পাশের সীট ও পেল। ২ মাস হয়ে গেছে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাঁর মানে ওর বেকার জীবনের মেয়াদ ও ২ মাস পেরিয়ে গেলো। আরও কতদিন মেয়াদ হবে কে জানে? নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অর্থী। গত ২ মাসে বেশ কি ইন্টারভিউ দেয়া হল। কিন্তু হইনি একটাও। আর যেকয়টার রেজাল্ট বাকি আছে তাও হবেনা, সেটা খুব ভালো করেই জানে অর্থী।
অবশ্য ইদানীং কালে মাস্টার্স পরীক্ষা দেবার ২ মাসের ভিতর কারো চাকরি হওয়াটাই বাতিক্রম। আর এত দ্রুত চাকরির জীবনে ঢুকতে অর্থীর ও ইচ্ছা নেই। কিন্তু চাকরি তো করতেই হবে। যদিও বাবা-মা অর্থী কে চাকরি পাওয়া নিয়ে কোনও চাপ দিচ্ছেন না। অর্থীরও ইচ্ছা অন্তত মাস ৬ বেকার জীবন এ থাকে। কিন্তু তবুও এই বেকারত্ব নিয়ে এখন অর্থীর মন খারাপ।
হটাৎ কান্না পাচ্ছে অর্থীর। "যে দিন যায় ভালো যায়, যে দিন আসে খারাপ আসে" এই কথাটা যে কতখানি সত্যি তাই ভাবে অর্থী। দিন দিন জীবন শুধু জটিল ই হচ্ছে। আশেপাশের পরিচিত মানুষ গুলো কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। কারো কারো কথায় মনে হয়, অর্থীর জায়গায় থাকলে তারা যেন পৃথিবী উদ্ধার করে ফেলত। অথচ তারা যে তাদের সময়ে কি করেছে টা খুব ভালই জানে অর্থী। অথচ তারা মুরুব্বী বলে তাদের এই সবজান্তা ভাব টা সব সময় সইতে হবে। উফফ, কি অসহ্য। 'সময় হলে তাদের পোলাপানকেও আমি উপদেশ দিব', ভাবে অর্থী।
জ্যাম এ আটকেছে গাড়ি। খবরের কাগজ, ফেরিওয়ালা পিচ্চিগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে। ও, কাল তো আবার হরতাল। তাঁর মানে পি,এস,সির ফর্ম টা পরশু জমা দিতে হবে। এমনিতে হরতাল এ বিরক্তই হয় অর্থী, কিন্তু কালকের এই "কনকো-ফিলিপ্স এর সাথে চুক্তি বাতিলের দাবীতে" ডাকা এই হরতালে পূর্ণ সমর্থন আছে অর্থীর। অর্থী একটা কথা প্রায়ই মনে হয়, যারা সরকারে আছে তারা কখনও জানেই না জনগন কি চায়? কি ভাবে? তারা মনে হয় সেই আদ্যিকাল থেকে জনগন সম্পর্কে একটাই ধারনা জানে, যে জনগন মাত্রেই বোকা, আর তাদের যা বোঝানো হবে সেটা নিয়েই তারা বসে থাকবে।
বাস থেকে নামতেই এক বন্ধুর সাথে দেখা। "শওকত, তোকে আর আমার পেনড্রেরাইভ দিতাম না। অই টা তোর কাছে গেলেই আর হদিস পাওয়া যায়না। এক্ষন দিবি।" বলে অর্থী। "আরে তোর টা বড় তো তাই মুভি আনতে সুবিধা, তাই একটু ইউস করি আরকি, তাতে চেতার কি হইল? নে ধর, আজই দিতাম" , শওকত বলে, " নাহ, আমার তো আর লাগে না?, আমি মানুষের টা ধার করে চলি আর ওনারা আমারটা দিয়া মুভি আনে, কি সৌন্দর্য! যাকগে, মুভি আছে এতে এখনও?" , বলে অর্থী। "হ্যাঁ", বলে শওকত। এবার খুশি হয় অর্থী, শওকত কে নতুন মুভি দেবার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে হল মুখো হয় অর্থী।
আবারও সুন্দর লাগছে পরন্ত বিকেল টা . . .
----------------------------------------------------------------------------
গল্পটিতে কিছু রাজনৈতিক এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে সম্পর্কিত মতামত আছে, যা সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব ধারনা। কাউকে আঘাত করার উদ্দেশে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:৩০