সকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। এই অবিরাম বৃষ্টি, তবুও সবাই কাজে বেড়িয়ে গেছে। কাজ নেই শুধু পারমিতার। সে বসে আছে একা। জানালায় তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে।
বৃষ্টির সাথে স্মৃতির কি সম্পর্ক আছে? আছে নিশ্চয়ই, নয়তো বৃষ্টি দেখলেই পুরনো কথা মনে পরে কেন?
সেই একদম ছেলেবেলায় বৃষ্টি নামলেই মায়ের কাছে ভেজার আবদার। সবসময় মানা হত না। আর তাই কোনোদিন সুযোগ পেলে লুকিয়ে ভেজাও চলত। একটু বড় হয়ে ভিজতে মন চাইলেও কিন্তু শুধু গ্রিলের ফাঁকে হাত গলিয়ে বৃষ্টি ছোঁয়াটাই বেশি হত।
এরপর ঢাকায় এসে বৃষ্টির দিনগুলো বিরক্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। বৃষ্টি হলে জ্যাম বাড়ে, ঢাকার বদ্ধ ঘরে সব কিছু আরও অসহ্য হয়ে যায় বর্ষাকালে। যদিও গরম কমে কিন্তু ভোগান্তিটা বাড়েই।
ধুর এই সব এইসব বিরক্তির বিষয়গুলো বাদে আরও কত ভালোলাগা স্মৃতি আছে বৃষ্টি নিয়ে। কোনও পুকুর এ বৃষ্টি পড়া দেখতে খুব মজা। আর নদীতে বৃষ্টির দৃশ্য তো অসাধারণ। পারমিতার আবার ইচ্ছা হয় সন্ধ্যা নদী পার হয়ে নানাবাড়ি যেতে। কিন্তু এখন যে যাওয়া হবে না। অনেক গুলো বছর হয়ে গেছে নানাবাড়ি যায়না পারমিতা। হুহ, বাস্ততা। ছেলেবেলায় ৩-৪ মাস পর পর যেখানে যাওয়া নিয়মিত ছিল, আজ বহু বছর সেখানের কথা মনেও পরেনা।
চিন্তায় ছেদ পরল, ডোরবেল বাজছে। দরজাটা খুলে দিল পারমিতা। বেনুও চলে এসেছে নিজের কাজে। শুধু পারমিতার ই কোনও কাজ নেই। এমন অখণ্ড অবসর কবে পেয়েছে মনে আসছে না। নাহ, এমন কাজহীন অবসর এত বেশি সময়ের জন্য আর পায়নি পারমিতা। কি যেন জানতে চাইছে বেনু, কিন্তু আজ শুধু স্মৃতির সাগরেই ভাসতে ইচ্ছে করছে পারমিতার। তবুও কথার জবাব দিল।
হটাৎ ঘড়িতে চোখ পড়ল, ১০ টা বেজে গেছে! সময় যে কখন গড়িয়ে যায় কেউ জানেনা। বেনু গোছলের তাড়া দিচ্ছে, অনিচ্ছা সত্তেও গেল পারমিতা।
আবার সেই জানালার ধারেই বসলো পারমিতা। এখন বৃষ্টিটা কমেছে, তাই রাস্তায় শব্দও বেড়েছে। আর ভালো লাগছে না। ফোনটা বেজে উঠলো। ওপাশে রায়হান, "তোমার ডাক্তার এর সাথে কথা হয়েছে, ১২ টা নাগাদ রেডি হয়ে থেকো, আমি এসে নিয়ে যাব। আর গোছগাছ ও কিছুটা করে ফেলো"। "আচ্ছা", পারমিতার জবাব। আবার জানতে চায় রায়হান, "দুষ্টুটা জ্বালাচ্ছে নাতো? পারমিতা ছোট্ট ধমক দেয়, ও কে দুষ্টু বলবে না। আর এভাবে বললে পরে আর তোমাকে পছন্দ করবে না"। একথায় দুজনেই হাসে। ফোন রাখে রায়হান।
কিছুদিন পর এই অখণ্ড অবসর টা আর থাকবে না। আর একজন আসবে যে কিনা পারমিতার সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা সবটুকু সময় নিয়ে নেবে, তবুও তাঁর জন্যই অপেক্ষা। মধুর অপেক্ষা, অপেক্ষা করতেও যে এত ভালো লাগে আগে তো জানা ছিল না। ইস, কবে আসবে সেই কাঙ্খিত অতিথি? উহু, আসবে কি, সেই অতিথি তো এসেই পরেছে, তাঁর ভিতর বড় হচ্ছে। ভাবতেই শিহরণ জাগল মনে। বেনু এসে তাড়া দিতে তৈরি হতে গেলো পারমিতা, মনের কোনে সঙ্গী হয়ে রইল বৃষ্টিস্নাত দিনে অদ্ভুত সুন্দর কিছু ভালোলাগা।