প্রতিদিনের মত সকাল বেলায় ঘুম ভেঙ্গে বাগানে হাঁটতে বের হলেন মামুন। আজ হটাৎ তাঁর ইচ্ছে হল একটু রাস্তায় বের হতে। যেই ভাবা, সেই কাজ। গেট থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকালেন, আষাঢ় এর মেঘ হীন উজ্জ্বল আকাশ। একটু পরেই রোদের আঁচ বাড়বে। তবুও চলতে শুরু করলেন। খানিকটা দূরেই একটা স্কুল। কিছু বাচ্চারা এসেছে, কিছুক্ষণ দাড়িয়ে কচি মুখ গুলো দেখলেন। আরও মিনিট পাঁচেক যাবার পর মোবাইল টা বেজে উঠল। ওপাশে মিথিলা বলছেন, “কতদুর গেলে, চা নামিয়ে রাখব?”। “না আসছি”, মামুনের উত্তর। আবার বাড়িমুখো হাটা দিলেন মামুন। বাড়ি পৌঁছে ফ্যানের নিচে বসতেই চা নিয়ে আসলো মিথিলা। চা ঢেলে দিয়ে নিশ্চুপ বসে রইল। “পায়ের বেথাটা কমেছে”, মামুন জানতে চাইল মিথিলার কাছে। “কিছুটা”, মিথিলার উত্তর। তারপর আবার সব চুপ। “আজও কেঁদেছ ভোরে, যায়নামাজে?”, মিথিলার প্রশ্ন। মামুন কিছু বলল না, শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। “দেখতে দেখতে ৮ বছর হয়ে গেল, তবুও তুমি মানতে পারলে না। আর ওরা তো স্বেচ্ছায় যায়নি। বিনা কাজেও যায়নি। তুমি কষ্ট পেলে কি ওরা ভাল থাকতে পারবে?” এ কথা, এ প্রশ্ন কোনও কিছুয় মামুনের অজানা নয়। তবুও মানতে পারেনা, কান্না চাপতে পারেনা। কিছুই বলেনা মামুন। চা শেষ। ডোরবেল বাজে। বুয়া এসেছে, তাকে কাজ বুঝাতে উঠে যায় মিথিলা। কিছুক্ষণ পর এসে বাজারে যেতে বলে মামুন কে, মামুন প্রস্তুতি নেয়। দরজায় দাড়িয়ে জুতা পড়ছে মামুন, হটাৎ মোবাইল বেজে উঠে। দাড়িয়ে পরে মামুন। ওপাশ থেকে ভেসে আসে মহুয়া আর মিথুন এর কণ্ঠ। একসাথে বলে উঠে “বাবা, তোমাকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা”। আনন্দে বুক ভোরে উঠে মামুনের। ছেলে-মেয়ের কণ্ঠ শুনে খুশি হয় মিথিলাও। এই ৫ মিনিটের কথপকথনের সুখস্মৃতি নিয়ে আবার অপেক্ষা _ _ _ _ _
এবার বাড়ি থেকে ফেরার সময় বাবাকে দেখেছি জায়নামাজে বসে কাঁদতে। দুই ভাইবোন একসাথে চলে আসাতে মা’র কাল মুখটাও দেখেছি। কিন্তু আমাদের আস্তেই হয়েছে তাদের কে একা রেখে। আমি ৫ বছর থেকে হল এ আছি, ভাই এক বছর। আজ বাবা দিবসে এই লেখাটি সেই সব একাকি বাবা-মা দের উৎসর্গ করছি।
একটি বিশেষ শুভেচ্ছা, আমার ছোট কাকা কে, যিনি আজ বাবা দিবসে প্রথম বাবা হয়েছেন।