বাংলাদেশ রেলওয়ে ফেসবুক ফ্যানপেজ ও কিছু কথাঃ
বাংলাদেশ রেলওয়ে ফেসবুক গ্রুপটা একটা অদ্ভূত জায়গা। ১ লক্ষাধিক মানুষ এই গ্রুপে নিজের কাজে বা আকাজে (রেলের প্রতি ভালোবাসায়) সারা বছর ধরে ধরে নানা কর্মকান্ডে প্রানবন্ত করে রাখে। রেল স্পটিংয়ের কাজ, নানা ধরনের রেল বিষয়ক তথ্য বিতরণ কোন রকম প্রত্যাশা ছাড়াই করে চলেছে একদল তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, এমনকি অনেক বয়োজোষ্ঠ মানুষও ওতোপ্রোতভাবে এই গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট আছে।
আমাদের অতিপ্রিয় বন্ধু রোকনুজ্জামান রোকনের কারণে আমাদের এই গ্রুপে প্রবেশ।এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে রোকনের অবদান আমাদেরও গর্বিত করে। জার্নি টু জিরো পিকনিক দিয়ে গ্রুপের মেম্বারদের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। তারপর ফেসবুকে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব। আর এখন সবাই মোটামুটি আত্মার আত্মীয়, টাইপ সম্পর্ক । বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে বাহনটি ছিলো অনিয়মের জন্য কুখ্যাত সেই রেল বা ট্রেন নামক চারকোনা ধাতব শরীরের বাহনটির জন্য একদল মানুষ যে কি পরিমান ভালোবাসা ধারন করতে পারে সেটা বলে বিশ্বাস করানো সম্ভব নয়। প্রথমেই বাংলাদেশ রেলওয়ে গ্রুপের সকল সদস্যকে আমার প্রানঢালা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
এবার আসি বাংলাদেশ রেলওয়ে গ্রুপের ঈদ পুনর্মিলনী, নাপিত্তাছড়া ঝর্না ভ্রমণ বিষয়ে। গত ফেব্রুয়ারীতে পঞ্চগড় জেলায় ভ্রমণের পরে আমি ঠিক করেছিলাম আগে থেকে ঠিক করা নাপিত্তাছড়া ভ্রমণে অবশ্যই যেতে হবে। কারন গত বছর নাপিত্তাছড়ার পিকনিকটি অতিরিক্ত বৃষ্টিতে সুপ্তধারায় সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো। তখন থেকেই সবার মনে একটা সুপ্ত বাসনা ছিলো যে নাপি্ত্তাছড়া মিস দেয়া যাবেনা। এই দলে আমিও ছিলাম। তবে আমি নাপিত্তাছড়া অভিযানের আগের দিন পর্যন্ত অভিযান বিষয়ে কোন খোঁজখবর করিনাই। কারন আমার অভিজ্ঞতা বলে এই গ্রুপের এডমিনরা, যাদের সাধারনত ভচ বলে ডাকা হয়, তারা অত্যন্ত দক্ষ, সৎ, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব সম্পন্ন। তার প্রমান আমি জার্নি টু জিরো পিকনিকে পেয়েছিলাম। সবকিছু মিলিয়ে আমি ছিলাম, ফুরফুরে মেজাজে, নিশ্চিন্ত। ভালো কিছুই হতে যাচ্ছে। জানতাম।
সত্যি বলছি আমি প্রথম থেকেই কোন কিছু সম্পর্কে খোঁজ নেইনি। বন্ধু বস লিটনের কাছে শুনলাম আমাদের যাওয়া আসার টিকেট হয়েছে বার্থে। শুয়ে শুয়ে যাওয়া যাবে। সবার সাথে হইচই করতে যাওয়াটা মজার। তবে কিনা, নাপিত্তাছড়া থেকে ফিরেই আমার ভারতের ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার কথা আছে। ঘুমের দরকার হবে। বয়সও হয়েছে, আগের মতো সারাদিন রোদে দৌড়াদৌড়ি করে পাহাড় ঝর্ণা ঠেঙ্গিয়ে তার পরের দিনই হাওয়াই জাহাজে বেঙ্গালোরে যাওয়ার পথে বিমান থেকে কে নামাবে, সেই দুঃচিন্তায় বার্থের টিকেটে মনে মনে সন্তোষ প্রকাশ করলাম।
১২ জুলাই ঢাকা থেকে রাতের ট্রেনে চট্টগ্রামে যেয়ে সকালে স্টেশনের বাহিরে বেরুতেই এক অপূর্ব দৃশ্য। রেলওয়ে গ্রুপের ছেলেমেয়েদের দিয়ে প্লাটফর্ম ভরে আছে। ভোরের আলো কেবল চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের পুব আকাশকে নানা রঙে রাঙিয়ে তোলায় ব্যাস্ত। ভোরের নরম আলোকে পিছনে রেখে ফ্লাডলাইটকে সামনে রেখে সেলফি তোলার ধুম চলছে। উত্তেজনায় যেন টগবগ করে ফুটছে দেড় শতাধিক মানুষ। নানা বয়সি মানুষের মধ্য ৯০ ভাগ মানুষ বয়সে তরুণ। ছোট ছোট ভাগ হয়ে সেলফি তোলা, হইচইয়ে ব্যাস্ত। হ্যান্ড মাইকে রেলওয়ে ভচদের ডাকে সবাই নিশ্চুপ হয়ে নাপিত্তাছড়া অভিযানের নিময় কানুন শুনে নিলো। এই সময় সবার মনোযোগ ছিলো দেখার মতো। কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদপুর সাগরিকা এক্সপ্রেসে চেপে মিরেরসরাইয়ের বারতাকিয়া স্টেশনে নেমে পরেছিলাম আমরা সবাই।
১৫০ জনের বিরাট দলটি যেন হ্যামিলিয়নের বাঁশি ওয়ালার ডাকে রেল লাইন ধরে আস্তে আস্তে পাহাড়ের দিকে বয়ে চলা পথ বেয়ে এগিয়ে চললো বেসক্যাম্পের দিকে। গ্রামের পথে চলার সময় সূর্য ধিরে ধিরে তেজ বাড়িয়ে চলছিলো, কিন্ত অভিযাত্রিদের উত্তেজনার পারদও যেন উপরের দিকেই উঠে চলেছিলো। চলার পথে গরমে পড়ে মনোহারি দোকান থেকে পানি, চকলেট, টেস্টে স্যালাইন আর পানির বোতল কিনে নিলো অনেক অভিযাত্রি। যদিও রেলওয়ের ভচেরা বারবার করে বলছিলো যেখানে নাস্তা হবে, সেখানেই সব কিছু পাওয়া যায়। যাক, অতীব সুন্দর গ্রাম্য পথ পেড়িয়ে সবাই পৌছে গেলো নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যাত্রার শুরু হয় যেখানে, সেই বেসক্যাম্পে। বেসক্যাম্প মানে একটি সাধারন রেস্টুরেন্ট। বাঁশ দিয়ে তৈরী একটি বড় দোকান, সাথে রেস্টুরেন্ট। সকাল ও দুপুরের খাওয়া পাওয়া যায়। এই রেস্টুরেন্টেই সকালের নাস্তার আয়োজন করা হয়েছে। ইতি মধ্যে পাটি পেড়ে বসে গেছে কিছু অভিযাত্রি, ভিতরের বেঞ্চে যায়গা করে নিয়েছে কিছু ভাগ্যবান মানুষ, যারা প্রথমে নিজেদের সৌভাগ্যবান ভাবলেও ৫ মিনিট বসার পর কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বাহিরে বাতাস খেতে থাকা মানুষদের হিংসার চোখে দেখতে লাগলো।খাবার মেনু পরটা, ভাজি(সব্জি), ডিমের ওমলেট। পরে চা। যাত্রার শুরুতেই ভরপেট নাস্তা। উত্তেজনায় কিছু শাইন করতে পারলাম না টাইপ ফিলিংস নিয়ে হাফপ্যান্ট, ফুলপ্যান্ট আর যা যা সুবিধার হয় পরে নিয়ে সবাই রেডি হয়ে গেলো। রেডি টেডি হওয়ার পর সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলা হলো। চরম রোদে গরম গরম ছবি তুলেই নাপিত্তাছড়ার দিয়ে সবার যাত্রা শুরু।
আগেই বলেছিলাম নাপিত্তাছড়া ভ্রমণ নিয়ে আমি কোন গবেষণা বা চিন্তাভাবনা কিছুই করি নাই। রেলওয়ে গ্রুপের স্মার্ট ভচেরাই সব কিছু সামলে নিতে পারবে, সেই বিশ্বাস ছিলো। বেসক্যাম্পে নাস্তা খাওয়া শেষে ১৫০ জনের বিশাল দলটি নাপিত্তছড়া যাওয়ার পথে নেমে পড়লো। প্রথমেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়া, নাকি ঝিরি পার হয়ে খোলা মাঠের মতো জায়গা পেরিয়ে আবার একই ঝিড়ি মাড়িয়ে পাহাড়ের কোলে ঢুকে পরতে হয়। বিশাল দলটি সারিবদ্ধভাবে পাহাড়ি ঝিরিটার কোল বরাবর কোন এক নেশার ঘোরে হেটে চললো। নানা বয়সী ছেলেমেয়েদের সবার হাতে এরই মধ্যে তুলে দেয়া হয়েছিলো বাঁশের লাঠি। সাধারনত পাহাড়ে হাটার সময় এই লাঠি খুব কাজের জিনিস। আর ছড়ার পানির গভীরতা মাপার জন্য এটা আরও বেশি কার্যকরি বলে পরবর্তীতে প্রমান পেয়েছিলাম। এছাড়াও পায়ে সবার শক্ত স্যান্ডেল ছিলো। দলে একটি মেয়ে দেখলাম শাড়ি পরে অবলীলায় রওয়া দিয়েছে। পায়ে স্যান্ডেল সু আর শাড়িতে মানিয়েও গেছে বেশ। শাড়ি পরেও বেশ অবলীয়ায় পথের বাধা পেরিয়ে যাচ্ছিলো। বেশ মজা পেলাম ছেলে মেয়েদের উৎসাহ দেখে। সবার মতো আমি সাথে কোন লাঠি বহন করি নাই। হাতে ক্যামেরার বিশাল ব্যাগ, এক্সট্রা গেঞ্জি, ছাতা। এর সাথে লাঠি তখন বাহুল্য মনে হচ্ছিলো। যাক, ছবি তোলার জন্য একটু পিছিয়ে থেকে পুরো দলটি ফলো করতে করতে এগুলাম মুল ঝর্নার দিকে। পথের ঝিরিতে পানি খুব বেশি ছিলোনা। হাটু পানির পাহাড়ি ঝিরিটি বারবার এপার ওপার করে সামনের দিকে এগোতে হচ্ছিলো আমাদের। এর মধ্যে ঝিরির মধ্যে বড় বড় পাথর পরে থাকতে দেখে ছোট ছোট দলে ছবি তোলা, সেলফি মারা, সবই চলছিলো সমান তালে। আমাদের বুড়াদের গ্রুপটা তখন ভাগ হয়ে কে কোথায় চলে গেছিলো, খুজে পাচ্ছিলাম না।
আমি, বন্ধু ডলার, আজিজ আর মিলু, সবাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ব্যাচের বন্ধু। আমরা কাছাকাছি থাকায় নিজেদের কিছু ছবি তুলে নিচ্ছিলাম পাথরের উপর দাড়িয়ে। ঠান্ডা পানির ছোয়ায় আর পাহাড়ের গাছের ছায়াতে নিজেকে লুকিয়ে যতটুকু রোদ থেকে বাঁচা যায় চেষ্টা করতে করতে আগাচ্ছিলাম। পথের মধ্যে আদিবাসি শিশুদের মাছ ধরতে দেখলাম। কিউট বাচ্চারা মনো হলো এতো বড় দল দেখে ভড়কে গেছে। অবাক দৃষ্টিতে বেগুনী গেঞ্জি পড়া দলটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম ওদের। ততক্ষণে পাহাড়ের একটু ভিতরের দিকে চলে এসেছি আমরা। রাস্তাটা বামে বেঁকে পাহাড়ের আরও ভিতরের দিকে চলে গেছে। তিন দিকে সবুজ পাহাড়ের মাঝে ঝিরি ধরে হাটা। মনের ভিতরে একটা ভালোলাগা নিযে পাহাড়ের উপরের দিকে তাকালাম। সানগ্লাসের মধ্যে দিয়ে মেঘ, পাহাড় আর আকাশের কম্বিনিশনে সুন্দর একটি ছবি যেন মাথায় ভিতরে ছাপা হয়ে গেলো। এসব দেখতে দেখতে আরেকটু সামনে গিয়ে দেখি মানুষের জ্যাম।
পাহাড়ি ঝিরিটা এক জায়গা চিকন হয়ে এসেছে। দুই পাথরের মাঝে একটু দুরত্ব আছে। পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে ৬-৭ ফুট উপর দিয়ে পার হতে হবে। অথবা পানিতে সাঁতার দিয়ে যেতে হবে। সাবধানে পার হতে হচ্ছে বলে বড় জটলা জমে গেছে। ভলান্টিয়ার হয়ে কয়েকজন অপেক্ষাকৃত দুর্বল সহযা্ত্রীদের পার করে দিচ্ছিলো জায়গাটা। একটা সময় জ্যাম কাটিয়ে সামনে আসতে পারলাম। এই জায়গাটা সুন্দর পাহাড়ের ছায়ায় অন্ধকার হয়ে আছে। বেশ সমান জায়গার উপর দিযে পানি বয়ে যাচ্ছে। ডান দিকে একটা উৎরাইয়ের পরেই বেশ বড় একটা দেয়ালের মতো ঝর্না পেলাম। তবে পানি একদম নাই। ঝর্ণাটির বাম দিক দিয়ে উঠেই পরের ধাপে আরও বেশ গর্ত একটা কুম দেখা গেলো। অনেকেই ততক্ষণে গোসল শুরু করে দিয়েছে। আমরা আবার পাশের পাহাড়ে উঠা শুরু করলাম। এই জায়গাটিই সবচেয়ে কষ্টকর। খাড়া পাহাড় বেয়ে রোদের মধ্যে উঠার জন্য দম লাগ।
সাধারনত একটু আস্তে আস্তে উঠা ভালো। রোদ আমার সহ্য হয়না। গরমে আমি অসুস্থ্য হয়ে পরি, এসব না খেয়াল করেই দৌড়ে দৌড়ে মানুষজনকে ভড়কে দিয়ে পাস কাটিয়ে ৩০০ ফুট পাহাড়ে একটানে উঠে বেশ বিপদেই পরেছিলাম। হিট ষ্ট্রোকের মতো কিছু একটা হয়েছিলো তখন। ঘাসে কিছুক্ষন শুয়ে থেকে আর এক গ্লাস পানি খেয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলাম। ততক্ষণে আমার বন্ধুরা উপরে উঠে আসতে শুরু করেছি। ঠিক এই জায়গায় স্থানীয় মানুষরা লেবুর সরবত বিক্রি করছিলো। দেখতে দেখতে সরবতের বাজার জমজমাট হয়ে উঠলো। উপরে উঠেই সামনে লেবু সরবত দেখে এক এক জন যেন বেহেস্তি সরবত হাতে পাওয়ার আনন্দ পাচ্ছিলো। সরবত ওয়ালার বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়। জায়গাটিতে আরও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে, একবার ফেসবুক লাইভ দিয়ে রওনা দিলাম আসল ঝর্ণার দিকে। পাহাড়ের পাশ দিয়ে চিকন রাস্তা। ঘন লতা গুল্মদিয়ে আচ্ছাদিত। দেখলাম ছোট একটা দল ফেরত আসছে। বললো বিশাক্ত সাপ আছে, দেখে যাইয়েন। বুঝলাম মজা নিচ্ছে। আমরাও হেসে উড়িয়ে দিয়ে সামনে আগাতে লাগলাম। রাস্তায় পাথরের পরিমান বেড়ে গেছে ততক্ষনে। একটা সময় রাস্তাটা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলো। অনেকেই বললো ডান দিকে গিয়ে লাভ নাই ঐ ঝর্না ভালো না। আমরা ঠিক করলাম দুইটাই দেখবো। ডান দিক দিয়ে আগাতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো, কিন্তু অসম্ভব কিছু না। একটা সময় চির পরিচিত নাপিত্তাছড়া ঝর্নাতে এসে পরি আমরা।
হইহই করতে করতে গোছল শুরু করে দিলো গ্রুপের বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে। আমরা বন্ধুরা মিলে ফটোসেশন করে নিলাম বেশি করে। ভিডিও টিডিও শেষে আবার ফিরতি পথে রওনা দিলাম। এবার ডান পাশের বাঘবিয়ানি ঝর্না নামে নাকি আরও সুন্দর ঝর্ণা আছে শুনলাম। নাম গুলো আমার কাছে নিশ্চিত মনে হচ্ছিলো না। উৎসাহ নিয়ে রওনা দিয়ে দেখি রাস্তা আরও বেশি ভয়ংকর। মাঝখানে বেশ বড় একটা পিছলা পাথর পার হতে হয়। অনেকের জন্য বেশ কঠিন। বাঁশের লাটি ধরে ধরে সবাই পার হচ্ছিলো। আমার জুতা ভালো ছিলো। পাথরে গ্রিপিংটা খুব ভালো। অসুবিধা হয়নি। ছোটকাল থেকে ভূলক্রমে বানরের বদলে মানুষ হয়েছিলাম বোধহয়। এক দৌড়ে লাফটাফ দিয়ে বাঁশটাশ না ধরে পার হয়ে গেলাম।কয়েকজন দেখলাম অবাক হয়ে বলছিলো, ভাই তো ভালোই পার হয়ে গেলেন। আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম, বয়স মাত্র ৪৪ বছর, এই বয়সে যদি না পারি তবে আর কখন! বেচারাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলাম। সব শেষের ঝর্নাটাতে পৌছানোর পর হলো আসল আনন্দ। পাহাড়ের এক দেড়শো ফুট উপর থেকে প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে পানি। রেলওয়ে গ্রুপের সব বসদের দেখলাম নেমে পড়েছে পানিতে। জয়কে ক্যামেরার ব্যাগট্যাগ দিয়ে আমিও লাফিয়ে পড়লাম পানিতে। শোয়েব আর রাসেল মিলে আমাকে কৃত্তিম চুবানি দেয়ার চেষ্টা করলো।যাকে চুবানী দেয়া হচ্ছে, সে নিজেই এতো আগ্রহ করে চুবানী খাচ্ছে দেখে বেচারার বেশ একটু দমে গেলো মনে হলো। ঝর্নার ঠান্ডা পানিতে যেন যাত্রা পথের সব কষ্ট ধুয়ে চলে গেলো এক সময়। সে এক মহা আনন্দের সময়।
এরপরের ঘটনা খুব বেশি নাই। যদিও আরও অনেক কিছুই ছিলো ট্যুরে। একই রাস্তা দিয়ে বেসক্যাম্পে ফিরলাম সবাই বীরের বেশে। রোদে ততক্ষণে সবার বেশ জমকালো চেহারা হয়েছে। বেসক্যাম্পে রাখা ব্যাকপ্যাক নিয়ে জামাকাপড় বদলে লাঞ্চের জন্য অপেক্ষা। এ্যাকাসিয়া গাছের নিচে পাটিতে গড়াগড়ি দিতে দিতে আড্ডা আর বিশ্রাম। একটা সময় দুপুরের খাবারও চলে আসলো। প্যাকেটে করে ভাত, ভর্তা, সব্জি আর মুরগীর তরকারী।খাবার দেয়ার সাথে সাথে এক বিরাট হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হলো। খাবারের সাথে চরম যুদ্ধ শুরু হলো অভিযাত্রিদের। অতি দ্রুত খাবারদের পরাজিত করে পেটে চালান দিয়ে দিলো সবাই। আসতে দেরী, খাইতে দেরি নাই (আসতে অবশ্য দেরি হয় নাই)। খাবার শেষে সব প্যাকেটগুলো এক জায়গায় ফেলে সবাই রেডি হয়ে গেলো বরতাকিয়া ষ্টেশনে যাওয়ার জন্য। এবারের গন্তব্য বড় কুমিরা ঘাট। সুর্যাস্ত দর্শন। এই গল্পটা না হয় অন্য কারও মুখে (কি-বোর্ডে) শুনে নিবো অন্য কোন দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:৩৩