somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দার্জিলিংয়ের ডায়রী: ৩য় পর্ব (দার্জিলিং পর্ব)

০৮ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দার্জিলিং ভ্রমণ ১ম পর্ব

দার্জিলিং ভ্রমণ ২য় পর্ব

দার্জিলিংয়ের ডায়রী: ৪র্থ (চতুর্থ) পর্ব (কালিম্পং পর্ব)

আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে অনেকেই শখ করে বেড়াতো যেত দার্জিলিংয়ে। মধুচন্ত্রিমার কথা বলতে পারবোনা তবে ফ্যামিলি ট্যুরের জন্য দার্জিলিং ছিলো অনেকেরই প্রিয় জায়গা। সম্ভবত দার্জিলিংয়ের জনপ্রিয়তার কারন ছিলো তখনকার কোলকাতার সিনেমা, যেখানে দার্জিলিংয়ের দৃশ্য দেখানো হতো প্রচুর। কোলকাতার টালিগঞ্জের ছবির নায়ক নায়িকাদের প্রিয় লোকেশন ছিলো ’দার্জিলিং’। এছাড়াও বড়দের উপন্যাসে ও ছোটদের রহস্য গল্পেও দার্জিলিং এসেছে বার বার। সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত চরিত্র গোয়েন্দা ফেলুদার প্রিয় জায়গা ছিলো এই পার্বত্য শহরটি। দার্জিলিং নিয়ে লেখা ধারাবাহিকের এটা তৃতীয় পর্ব। আগে দুটি পর্ব লেখা হয়েছে ”মিরিক” ও ”মানেভঞ্জন” নিয়ে। এবারের পর্ব - মূল দার্জিলিং শহর নিয়ে। নতুন পাঠকদের জন্য আমরা আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে যাবো কিছুক্ষনের জন্য।


দ্য টিমঃ
আমাদের টিমে ছিলাম ৪ জন। চারজনই জাহাঙ্গীরনগর ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। ব্যাচেলার ট্রিপ দেবার বয়স আছে কিনা আলোচনা হতে পারে, তবে আমাদের মধ্যে তৌফিক আখতার লিটন আসলেই ব্যাচেলর। এখনও বিয়ে-সাদী করেনি। ফলে আমাদের ব্যাচেলর ট্যুর ১০০% বিবাহিতদের নিয়ে তা বলা যাবেনা।


প্রথম দুটি পর্ব পড়া থাকলে আপনারা জেনে থাকবেন আমরা দার্জিলিং ট্যুরের প্রথম রাতটি কাটাই মিরিকে। মিরিকের ডিটেইল বর্ননা দার্জিলিং ট্যুরের প্রথম পর্বে দেয়া হয়েছে। দার্জিলিং ট্যুরের দ্বিতীয় পর্ব বা মানেভঞ্জন পর্বে মানেভঞ্জন নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। এই পর্বে আমরা চলে যাব দার্জিলিং শহরে। দার্জিলিং শহরের গাইড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন আমাদের অভিজ্ঞতা গুলোকে।

শুরু থেকে ধরলে আমাদের ট্যুরের রুট ছিলো এমন : ঢাকা থেকে বুড়িমারি/চেংড়াবান্দা, চেংড়াবান্দা থেকে শিলিগুড়ি, শিলিগুড়ি থেকে মিরিক, মিরিক থেকে মানেভঞ্জন, মানেভঞ্জন থেকে চিত্রি, চিত্রি থেকে মানেভঞ্জন হয়ে দার্জিলিং, দার্জিলিং থেকে কালিম্পং, কালিম্পং থেকে শিলিগুড়ি হয়ে আবার চেংড়াবান্দা।

১লা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২টায় আমরা মানেভঞ্জন থেকে দার্জিলিং রওনা দেই একটি মারুতি ওমনি মাইক্রোবাসে। মানেভঞ্জন থেকে সুখিয়াপোখরি ও ঘুম হয়ে দার্জিলিং।

যদিও দার্জিলিং ট্যুরের প্রথম দুটি দিন মিরিক ও মানেভঞ্জনে অসাধারন কেটেছিলো। কিন্তু মানেভঞ্জন থেকে দার্জিলিং শহরে রওনা দেয়ার আগে আমাদের সবার ভিতর একটা বাড়তি উত্তেজনা কাজ করছিলো। কারন মিরিক ও মানেভঞ্জন যতই সুন্দর জায়গা হোকনা কেন, তারপরও এটা দার্জিলিং ট্যুর, মূল আকর্ষন বলতে দার্জিলিং শহরকেই ধরতে হয়। ছোটকাল থেকেই দার্জিলিংয়ের নাম শুনে আসছি। বইয়ে পড়েছি, সিনেমায় দেখেছি। বাস্তবে কেমন লাগবে এটা নিয়ে আমাদের চারজনের ভিতর আলোচনা চলছিলো। এছাড়াও দার্জিলিংয়ের উচ্চতা নিয়েও আমরা গবেষণা করছিলাম। আমাদের জানামতে দার্জিলিংয়ের উচ্চতা ৬ হাজার ৮০০ ফুট। সুখিয়াপোখরী থেকে দার্জিলিং যাবার পথটি যথারীতি অন্যান্য পাহাড়ী পথের মতই তবে সুখিয়াপোখরি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত রাস্তায় মানুষের বসতির সংখ্যা অনেক বেশী। বুঝলাম এখানকার মানুষ অনেক বেশী দার্জিলিং কেন্দ্রীক। দার্জিলিং শহরের কয়েক কিলোমিটার আগে ’ঘুম’ জায়গাটি পরে। ঘুম নিয়ে আমাদের ভিতরে আগ্রহের কমতি ছিলোনা। একদা দুনিয়া বিখ্যাত দার্জিলিংয়ের ‘টয় ট্রেন’ ঘুম থেকে দাজিলির্ংয়ের মাধ্যেই চলাচল করে। এই ষ্টেশনটি ঐতিহাসিক ভাবে বিখ্যাত। ইংরেজ আমলে এটা পৃথিবীর উ্চ্চতম ষ্টেশন ও রেলপথ ছিলো। বর্তমানে এই টয় ট্রেনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষনা করেছে।





যাইহোক, ঘুমে পৌছে আমাদের মন বেশ খারাপ হয়ে গেল। কল্পনায় দেখা টয় ট্রেন ষ্টেশনটিকে বেশ নোংরা ও মলিন মনে হলো। আমরা গাড়িতে ব্যাগ বোচকা রেখে গাড়ির নাম্বার প্লেটের ছবি তুলে (ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে গেলেও যাতে ড্রাইভারকে ধরতে পারি) রেল ষ্টেশনের চারিদিকে ফটোসেশন করতে লাগলাম। ড্রাইভারের হাতে ক্যামেরা দিয়ে ’ঘুম’ লেখা সাইনবোর্ডের সামনে ঘুমানোর ভঙ্গিতে ছবি তোলার চেষ্টা করলাম বেশ কবার। কিন্তু জুয়েল বার বার হেসে ফেলায় পারফেক্ট ছবি হচ্ছিলো না। ঘুম রেল ষ্টেশনে আমরা প্রচুর বিদেশী পর্যটককে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম। সম্ভবত, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হওয়াতে বিদেশীদের আগ্রহ কিছুটা বেশী। রেল ষ্টেশনের ছবি তুলতে তুলতেই ইঞ্জিনসহ ট্রেন চলে আসলো। ইঞ্জিনসহ ট্রেনের ছবি তোলা হলো বেশ কয়েকটা। আমাদের গ্রুপ ছবিও তুললাম বেশ কিছু। ভালো কথা ঘুমের উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৭৪০০ ফিট উপরে। আগেই বলেছি একসময় পৃথিবীর উচ্চতম রেল ষ্টেশন ছিলো এটি। আমাদের ফটোসেশনের ফাঁকে ড্রাইভার মনে করিয়ে দিলো তাকে দিনে দিনে দার্জিলিং থেকে মানেভঞ্জন ফিরতে হবে। এছাড়া সবার বেশ ক্ষিদে পেয়ে গেছিলো। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম একবারে দার্জিলিংয়ে গিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো লাঞ্চ করবো। দ্বিতীয় বারের মতো বললাম কারন আমরা মানেভঞ্জন থেকে লাঞ্চ করে এসেছিলাম। ড্রাইভার জিজ্ঞেস করছিলো আমরা ’ঘুম মনাষ্ট্রি’ দেখবো কিনা? মনাষ্ট্রি মানে বুদ্ধদের উপাসনালয়। ঘুমের মনাষ্ট্রিটি বেশ বিখ্যাত। কিন্তু দার্জিলিংয়ের এতো কাছে এসে আমাদের আর তর সইছিলো না। কখন দার্জিলিং পৌছাবো এটাই মনের মধ্যে আকুপাকু করছিলো। ড্রাইভারকে সবাই একত্রে বললাম ’দরকার নাই আপনি দার্জিলিংয়ে চলেন আগে’।



দার্জিলিং শহরে প্রবেশ করতেই আমরা খুব অবাক হলাম দার্জিলিং শহরের গাড়ির সংখ্যা দেখে। ডানে পাহাড় আর বামে পাহাড়ের ঢাল ঘেষে অসংখ্য বাড়ি ঘর। রাস্তাটি বেশ সরু। এতোদিন আমাদের কল্পনায় দার্জিলিং ছিলো বেশ চুপচাপ একটি শহর, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো প্রচুর মানুষ ও গাড়ি দিয়ে ঠাসা শহর এই দার্জিলিং। যেহেতু আমরা মানেভঞ্জনের মতো একটি নিরব গ্রাম থেকে দার্জিলিংয়ে এসেছি তাই বোধ হয় দার্জিলিংকে আরও বেশী ব্যস্ত আর ঘিঞ্জি মনে হচ্ছিলো। ছোটকাল থেকে দার্জিলিংয়ের যে জায়গাটির নাম মাথার ভিতর ঘোরাফেরা করে, সেটা হচ্ছে ”ম্যাল” বা মল (Mall)। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার বই পড়ে কল্পনায় দার্জিলিংয়ের ম্যালে অনেক ঘুরেছি। কল্পনায় দেখা সেই জায়গায় সত্যি সত্যি যাচ্ছি, খুব এক্সাইটিং লাগছিলো। কিন্তু শহরে ঢোকার পর ড্রাইভার বললো যে সে ম্যাল বা মল বলে কোন জায়গা চেনেনা। ততক্ষণে আমাদের গাড়ি শহরের বেশ ভিতরে ঢুকে পড়েছে। গাড়ি থামিয়ে স্থানীয় লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করে আবার গাড়ি ঘুরিয়ে এবং থেমে থেমে মানুষের মুখে শুনে শুনে ম্যালের কাছাকাছি চলে আসলাম। ম্যালে গাড়ি ঢোকা নিষেধ তাই ম্যাল থেকে দুশো গজ দুরে গাড়ী থেকে নেমে পড়তে হলো। গাড়ির ভাড়া চুকিয়ে ব্যাগগুলো কাঁধে ঝুলিয়ে হেটে হেটে ম্যালে প্রবেশ করলাম। ম্যাল বা মল আসলে পাহারের মাথায় একটি ছোট খোলা যায়গা। প্রচুর মানুষ মিছিলের মতো ম্যাল থেকে বের হচ্ছে আর ঢুকছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুব হতাশ হয়েছি ম্যালের সাইজ দেখে। আমি এতোদিন কল্পনায় ভেবে এসেছি ম্যালের যায়গাটি বেশ বড় হবে, চারিদিকে অনেক সুন্দর ভিউ থাকবে। কিন্তু আমার কল্পনার সাথে বাস্তবে খুব একটা মিল পেলাম না। ম্যাল মানে ওভাল শেপের ৪-৫ একরের ছোট খোলা জায়গা। একদিকে হোটেল দোকান দিয়ে ভরা। মানুষ টাকার বিনিময়ে ঘোড়ায় উঠতে পারে কয়েক মিনিটের জন্য। তবে সত্যজিত রায়ের ফেলুদার উপন্যাসের হোটেল গুলো বাস্তবে দেখে বার বার শিহরিত হচ্ছিলাম আমি। সাংরিলা নামে যে হোটেলের বারান্দায় ফেলুদারা কফি খেয়েছিলো সেই হোটেল ও তার বারান্দা দেখে এতো অদ্ভূত লেগেছিলো কি বলবো। মনে হচ্ছিলো ফেলুদা, তপসে আর লালমোহন বাবু বোধহয় আশে পাশেই আছে। যাক। আমাদের পেটে তখন ভয়ঙ্কর ক্ষুধা ছিলো, তাই কম্পনার জগৎ থেকে ফিরতে সময় লাগলো না। আর ওখানে এত্তো মানুষ দেখে ভেবাচ্যাকাও খেয়ে গিয়েছিলাম কিছুটা। একটু ধাতস্ত হবার পর বাঙ্গালী রেষ্টুরেন্ট খুজতে খুজতে ম্যাল থেকে একটি গলিতে ঢুকে হাটতে থাকলাম আমরা। আগেপরে প্রচুর খাবারের দোকান ছিলো। কিন্তু আমাদের মাথায় বাঙ্গালী খাবার ঢুকে যাওয়াতে অবাঙ্গালী আকর্ষনীয় অনেক খাবার দোকান পার হয়ে হাটতে থাকলাম আমরা। অনেক খুজে শেষ পর্যন্ত আমাদের পছন্দমত একটি বাঙ্গালী দোকান পাওয়া গেলো। কাতলা মাছের প্যাকেজ ১৫০ টাকা মিল প্রতিজন। ভাত, ডাল, সোয়াবিন বড়ির তরকারী ও কাতল মাছ। পেটে ক্ষুধা ছিলো। তারপর আবার বাঙ্গালী খাবার। জুয়েলের খাওয়ার পারফর্মেন্স যথারীতি অসাধারন সাথে লিটন ও আমান দেখলাম ভালোই টানলো। খাওয়াদাওয়া শেষে জুয়েলের আধবোজা চোখে ”ভালো খাইলামরে, আলহামদুলিল্লা” আর সাথে সাথে লিটন কে দশ বারোবার ধন্যবাদ দিলো। কারন বাঙ্গালী খাবার খাওয়ার আইডিয়াটা লিটনের ছিলো। ভাত খাওয়ার পর চা হবে কিনা জিজ্ঞেস করাতে ১০ মিনিটে চা করে দিলো। খয়েরী রংয়ের চা খেয়ে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হোটেল খুজতে শুরু করলাম আমরা। ম্যাল এলাকার হোটেলের ভাড়া আমাদের কাছে অনেক বেশী মনে হচ্ছিলো। আর আমরা চারজন একরুমে থাকবো, এরকম বড় রুম পাওয়া যাচ্ছিলো না। অনেক ঘুরে সাগরিকা নামে একটি হোটেলে চারজনের জন্য দুটি ডাবল বেড সহ রুম পাওয়া গেলো। ভাড়া প্রতিদিন ১৮০০ রূপি। দার্জিলিংয়ে দু’ভাবে হোটেল ভাড়া ঠিক হয়। মিল বা খাবার সহ অথবা খাবার ছাড়া। আমরা খাবার ছাড়া শুধু রুম ভাড়া নিলাম।



আমাদের পুরো দার্জিলিং ট্যুরের একটা দৃশ্য ছিলো কমন। যখনই আমরা নতুন কোন হোটেলে উঠেছি, রুমে ঢোকার দুই মিনিটের মধ্যে জুয়েলের লুঙ্গিপরা কমপ্লিট। রুমের সবচেয়ে ভালো বিছানায় ব্যাগটা রেখে গোছলে ঢুকে গিজারের পানি পুরো গরম হওয়ার আগেই গোসল শেষ। গোসল করে কাঁপতে কাঁপতে বের হয়ে ”পানি বহুত ঠান্ডারে” বলে কম্বলের ভিতরে ঢুকে যাওয়া।

দার্জিলিং শহরে ঘোরাঘুরি করার অনেক যায়গা। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম দার্জিলিংয়ে দুই রাত থাকবো। হোটেল ঠিক হবার পর সারাটা বিকাল রেষ্ট নিয়ে সন্ধায় বের হলাম বাজারে ঘুরতে আর পরের দিনের জন্য গাড়ি ভাড়া করতে। আমাদের হোটেলটির অবস্থান ছিলো মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং যেটা কক টাওয়ার নামে পরিচিত এবং স্টেট ব্যাংক্ অফ ইন্ডিয়ার উল্টোদিকের একটি হোটেলো। হোটেল সাগরিকা। দার্জিলিংয়ে সাগরিকা নামের হোটেল দেখে হাসাহাসি করেছিলাম বেশ একচোট। তারপর রওনা দিলাম ম্যালের দিকে। সামান্য রাস্তা ২০০ গজের কম বেশী। দুপাশে দোকান। দোকানের মধ্যে চা পাতা, পুরোনো জিনিস বা এন্টিকের দোকান, খাবার হোটেল বেশি। এমনকি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা একটি পুরোনো ফটোগ্রাফির দোকানও দেখলাম। একটি মনিহারি দোকানে টেলিফোন বুথ দেখে আমরা বাংলাদেশে ফোন করে কথা বলে নিলাম যে যার মতো। সামান্য ১/২ মিনিট করে কথা বলতেই ৪ জনের টেলিফোন বিল হলো ৩০০ রুপির মতো। রাজস্থানী দোকানদার সুযোগ বুঝে আমাদের পকেট কাটলো বুঝতে পারলেও কিছু করার ছিলোনা। দার্জিলিংয়ে আসার আগের দুদিনে মিরিক মানেভঞ্জনের সুখময় অভিজ্ঞতা, সহজ সরল মানুষের সংস্পর্শ আর দার্জিলিংয়ের মানুষের অতি চালাকি আমাদের আরও বেশি করে দার্জিলিং শহরের প্রতি বিতশ্রদ্ধো করে তুলতে লাগলো। সন্ধা পর্যন্ত ম্যালে বসে থাকার পরে হেঁটে হেঁটে দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে বড় শপিং সেন্টার রিলায়েন্স মলের পাসদিয়ে শীতের জামাকাপড়ের দোকান দেখতে দেখতে হাটছিলাম। সাথে সাথে চলছিলো রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা ট্যাক্সি ড্রাইভারদের কাছ থেকে টাইগার হিলের ভাড়া জিজ্ঞেস করা। ভাড়া যাচাই করতে করতে বেশ দুর পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম আমরা। হঠাৎ চোখে পরলো দার্জিলিং টুরিজম বার্ডের ট্যুর প্যাকেজ ও রেন্ট-এ-কার সার্ভিসের অফিস। টাইগার হিলের সূর্যোদয় ও অন্যান্য জায়গায় ঘোরার জন্য গাড়ি ভাড়া জানার জন্য সবাই মিলে ঢুকলাম অফিসটিতে। দায়িত্বরত ব্যক্তি আমাদেরকে একটি লিফলেট ধরিয়ে দিয়ে বলল্ আগে এটা পড়ে দেখেন, পরে ভাড়া নিয়ে আলোচনা করা যাবে। লিফলেটটিতে দার্জিলিং ট্যুরিজম্ বোর্ড পরিচালিত বিভিন্ন ধরনের ট্যুর প্যাকেজের বর্ননা দেয়া আছে। ৩ ঘন্টা, ৬ ঘন্টা ও সারাদিনের বিভিন্ন প্যাকেজে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখার ব্যবস্থা আছে। আমরা বললাম আমরা সারাদিনের জন্য গাড়ি নিবো কিন্তু সন্ধা ছয়টা পর্যন্ত না ঘুরে বিকাল ৪ পর্যন্ত ঘুরবো। ওরা সম্ভবত ২০০০ বা ২১০০ রূপি দাবি করেছিলো। ভোর ৪ টায় গাড়ি আসবে আমাদের হোটেলে। তারপর দুই সেশনে বিকাল ৪টা পর্যন্ত থাকবে আমাদের সাথে। যেহেতু রাস্তার ট্যাক্সিগুলো আমাদের কাছে ২৫০০ রূপি সারাদিনের জন্য চাচ্ছিলো, সে হিসেবে ট্যুরিজম বোর্ডের গাড়ি ভাড়া করে ফেললাম পরের দিনের জন্য অর্থাৎ ২ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখের জন্য। এর পর রাতের খাবার সেরে নিলাম নর্থ ইন্ডিয়ান একটি রেষ্টুরেন্টে। সব্জি ভাত, ডাল রুটি, পাপড় ও চাটনি দিয়ে ৫-৬টি আইটেমের থালি (বড় প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়) খেয়ে সবাই মুগ্ধ। জুয়েলের মুদ্ধতা যথারীতি এক কাঠি বেশি। এবার ধন্যবাদ পাবার পালা আমার। খাবার খেয়ে বাহিরে বেশি ঘোরাঘুরি করা গেলোনা, কারন দার্জিলিংয়ে রাত ৯টার পর সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। রুমে এসে বেশ কান্ত লাগছিলো। দার্জিলিং শহরটিতে সমতল কোন যায়গা নেই। সব সময় হয় আপনি ঢাল ধরে নামছেন নয়তো উঠছেন। আমাদের মতন সমতলের মানুষের জন্য বেশ কষ্টকর ব্যপারই বটে। এছাড়াও একই দিনে আমরা মানেভঞ্জন থেকে চিত্রি ভ্রমণ করে দার্জিলিং রওনা করেছিলাম। যেটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর অভিজ্ঞতা হয়ে গেছিলো। এছাড়াও পরদিন ভোর ৪টায় উঠতে হবে টাইগার হিলেও সুর্যোদয় দেখার জন্য। তাই বেশি সময় না জেগে তারারারি শুয়ে পড়লাম।



দার্জিলিং সম্পর্কে যাদের ধারনা কম তাদের সুবিধার্থে বলে নেয়া ভালো - দার্জিলিংয়ে এসে সবাই টাইগার হিল নামক পাহাড়ে সূর্যোদয় দেখতে যায়। ২ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখ ভোর ৪টায় ড্রাইভার হোটেলে এসে উপস্থিত। আমরা চারজন তাড়াহুড়া করে তৈরী হয়ে নিলাম। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছিলো। সবাই ৪টা ৫টি জামা পড়ে তৈরী হয়ে গেলাম। মাথায় টুপি ও হ্যান্ড গ্লাবস্ পরে মোটামুটি মেরু অভিযাত্রী মার্কা লুক হয়ে গেলো আমাদের। মজাই লাগছিলো এই মহা শীতকে জয় করতে পেরে। ড্রাইভার গাড়ী ছাড়লো ৪.১৫ মিনিটে। আমাদের জিপটি ছিলো একটি নতুন মাহিন্দ্রা বোলেরো জিপ। বেশ শক্তপোক্ত ভারতীয় গাড়ি। ড্রাইভারের নাম ভুলে গেছি। বয়স ৭০। গত ৫০ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন দার্জিলিং এলাকায়। ড্রাইভারের বয়স শুনে আমাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলো। নিজেরা হাসাহাসি করলাম এই বলে যে এই লোক নিয়ে দার্জিলিংয়ে রাস্তা ভুল করার চান্স কম, আর উল্টাপাল্টা বা জোড়ে গাড়ি চালানোর সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় বার্ধক্য জনিত মৃত্যুর জোরালো সম্ভাবনাও (আশংকা) আছে। আমি মনে মনে হাসছিলাম এই ভেবে যে, বিটিভির নাটকে নায়কের ৭০ বছরের বাবারা বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে দামি দামি অষুধ ও আঙুর আপেলের শ্রাদ্ধ করতে করতে কিভাবে পারিবারিক অভাব ও গন্ডগোল বাড়িয়ে তোলে আর সেখানে এই পাহাড়ী গোর্খারা ৭০ বছর বয়সেও অবলীলায় গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। ড্রাইভারের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করতে করতে ভদ্রলোককে আমাদের বেশ ভালো লেগে গেলো। টাইগার হিল যাওয়ার পথে আবার ঘুম ষ্টেশন পড়লো। ঘুম পার হওয়ার পড় গাড়ি চড়াই পথে উপরের দিকে উঠতে লাগলো। বাহিরে তখনও রাত। লাইন ধরে অনেক গাড়িই তখন আমাদের আগে পিছে টাইগার হিলের দিকে যাচ্ছিলো। দার্জিলিং শহরের ভিতরে থাকতেই আমাদের ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে একজন লোককে তুলে নিলো লিফট্ দেবার জন্য। আরও অনেক মানুষকেই দেখলাম রাস্তায় দাড়িয়ে গাড়ি দেখলে হাত উঁচু করে লিফট্ চাচ্ছে। বুঝলাম এটা এখানের অলিখিত নিয়ম। গাড়ি খালি থাকলে মানুষককে লিফট্ দেয়া। এই গভীর রাতেও দেখলাম সুশ্রী অনেক তরুরী বা মধ্য বয়সি মেয়েরা রাস্তায় একলা দাড়িয়ে গাড়ি দেখলে হাত উচিয়ে লিফট্ চাচ্ছে। সবার হাতেই একটি করে ফাক্স। আমাদের গাড়িতেও এমন একটি মেয়ে উঠলো। টাইগার হিলে পৌছানোর পর সেই তরুণী আমাদেরকে বললো আমার সাথে আসুন আপনাদের ভালো জায়গায় দাড় করিয়ে দিবো। আমরা মেয়েটির সাথে রওনা দিলে সে আমাদের নিয়ে টাইগার হিলের অবজারভেশন টাওয়ারের পূর্ব পাশের রেলিংয়ে খালি যায়গা দেখে দাড় করিয়ে সাথের ফাক্স থেকে চার কাপ কফি সবার হাতে ধরিয়ে বললো ”চাল্লিশ রূপিয়া দিজিয়ে সাব”। বুঝলাম এটাই ওদের ব্যবসা। কিন্তু ভালো লাগলো পূরো ব্যাপারটার মধ্যে একটি প্রফেশনালিজম্ দেখে। আমরা যখন টাইগার হিলে পৌছালাম তখন কয়েকশো মানুষ জমায়েত হয়েছিল তিনতালা অবজারভেশন টাওয়ারের ভিতরে ও খোলা চত্বরের পূবদিকের রেলিং ঘেষে। কিন্তু সময় বাড়ার সাথে সাথে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে পূব দিকের আকাশে আলো বাড়তে বাড়তে কমলা রঙের ডিমের কসুমের মতো সূর্য্যরে আবির্ভাব হলো। শত শত ক্যামেরার বিচিত্র শব্দে ভরে উঠলো চারদিক। বিভিন্ন জাতি বর্ণের হাজার হাজার মানুষ মুগ্ধ বিহব্বল দৃষ্টিতে দেখছিলো প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যকে। কারো মুখে কোন কথা নাই শুধু মুগ্ধ চাহনী ক্যামেরায় ছবি তোলা। টাইগার হিলের উচ্চতা ৮ হাজার ৫০০ ফুট। ভোর ৫ টায় তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো ছিলো। প্রচন্ড শীতের ভিতরের হাড় কাপানো বাতাসের মধ্যে দাড়িয়ে সূর্যোদয় দেখাটা আসলেই অন্যরকম ব্যাপার। সূর্য কিছুটা উপরে উঠে আসার পর মানুষের মধ্যে নড়াচড়া শুরু হয়। এবং দল বেধে বা একলা ছবি তোলা শুরু হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে এতই ঠান্ডা যে আমরা এক ঘন্টায় ৩ কাপ করে কফি খেয়ে ফেললাম। প্রচুর ছবি তোলা হলো। টাইগার হিল ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য শুধু সুর্যোদয় দেখা না, সাথে সাথে আবহাওয়া ভালো থাকলে টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ দেখা যায়। অনেকে বলে টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙঘা দেখা তাদেও জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। আমাদের ভাগ্য খারাপ ছিলো। অপূর্ব কাঞ্চনজংঘা একবার মেঘ থেকে বের হয়ে আবার মুখ লুকালো মেঘের ভেতর। পরের এক ঘন্টায় আর এক বারের জন্যেও তার টিকিটার দেখা মিললো না। ততক্ষণে মানুষ টাইগার হিল থেকে নামতে শুরু করেছে। একটু নেমে আসতেই আমাদের ড্রাইভারকে পেয়ে গেলাম। আবার হোটেলের দিকে রওনা হলাম আমরা।





সকালের নাস্তার জন্য হোটেলের একটু আগেই নেমে গেলাম আমরা। দার্জিলিংয়ে খাবার দোকান বেশ দেরি করে খুলে। কারন আমরা যখন নাস্তা খাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নামলাম তখনও কোন রেস্তোরা খোলা পেলাম না। অনেক ঘুরে ছোট একটা খাবার দোকানে পরোটা ভাজতে দেখে ঢুকলাম। তখন বাজে সকাল ৭.১৫। নাস্তায় ছিলো আলু পরোটা আর সব্জি। কোনমতে নাস্তা সারলাম। পুরো ট্যুরে প্রথম বারের মতো জুয়েল কোন খাবার শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো না। ওর প্রিয় আলু পরাটাও একটার বেশি খেলোনা। আমরা বাকি ৩ জন এটা নিয়ে হালকা হাসাহাসি করলাম। নাস্তা শেষ করে হোটেলে এসে সবাই ঘুম। ড্রাইভারের সাথে কথা হয়েছিলো আবার বের হবো সকাল ৯.৩০ থেকে ১০.০০টার মধ্যে।

৯.০০টার সময় ঘুম থেকে উঠে ৯টা ৩০শের মধ্যে সবাই রেডি হয়ে গেলাম দ্বিতীয় পর্বের ট্যুরের জন্য। এবারের গন্তব্য ঘুম মনাস্টেরী, বাতাসিয়া লুপ, জাপানিজ টেম্পল বা পিস্ প্যাগোডা, হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক বা চিড়িয়াখানা, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, তেনজিং রক, ন্যাচারাল হিষ্ট্রি মিউজিয়াম এবং কেব্ল কার ভ্রমণ।






সকাল ১০ টায় গাড়িতে উঠে দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্যুর শুরু করলাম আমরা। এবারের প্রথম গন্তব্য ঘুম মনাস্ট্রি। বা ঘুমে অবস্থিত বৌদ্ধ মন্দির দর্শন। দার্জিলিংয়ে আসার পথে এবং টাইগার হিলে যাওয়া আসার পথে দু’বার ঘুমের পাশ দিয়ে যাওয়া আসা হয়েছে। আবার চললাম ঘুমে। ঘুম মনাস্ট্রিটি হাইওয়ের সাথেই। মূল রাস্তা থেকে সিড়ি দিয়ে কিছুটা নামতে হয়। বেশ সুন্দর একটি বৌদ্ধ মন্দির। শহরের কাছাকাছি বলে টুরিষ্ট্য বা ধর্মবিশ্বাসী মানুষের আনাগোনা বেশি। ভিতরে গিয়ে বিশাল আর সুন্দর বৌদ্ধ মূতিসহ আরও অনেক আকর্শনীয় বিষয় দেখা হলো। তবে আমরা বেশি সময় মনাস্ট্রিতে থাকতে চাইনি। সারাদিনে অনেক জায়গা ঘুরতে হবে। দু’চার টা ছবি তুলে বের হয়ে আসলাম সবাই। সিঁড়িবেয়ে উঠার পর দেখলাম অনেক হকার বসে আছে টুপি, দস্তানা বা অন্যান্য স্যুভিনির নিয়ে। কিছু না কিনেই গাড়িতে উঠে পরলাম সবাই। পরবর্তী গন্তব্য পিস প্যাগোডা বা জাপানী টেম্পলের উদ্দেশ্যে।




পিস প্যাগোডার ডাক নাম জাপানী টেম্পল। এই মন্দিরটি জাপানী সাধুর অর্থায়নে তৈরী তাই একে জাপানী টেম্পলও বলা হয়। ১৯৯২ সালে এটার নির্মান কাজ শেষ হয়। মন্দিরটির উচ্চতা ২৮.৫ মিটার বা ৯৪ ফুট। চওড়ায় ২৩ মিটার বা ৭৫ ফুট। পিস প্যাগোডায় পৌছে মনটা ভালো হয়ে গেলো সবার। পুরো ক্যাম্পাসটা এত্তো সুন্দর। বড় বড় পাইনগাছে ঘেরা। অসাধারন একটি স্থান। যদিও অনেক মানুষ ছিলো। তারপরও কেমন যেন শান্তি শান্তি ভাব। ছবি দেখে জায়গাটা সম্পকে একটা আইডিয়া পেয়ে যাবেন আপনারা।

এরপরের স্পট বাতাসিয়া লুপ। অদ্ভুত নাম। দার্জিলিং যাত্রার আগেই ইন্টারনেট ঘেটে আর বন্ধু শাকিল যে কিনা আগে দার্জিলিং ভ্রমণ করে গেছে তার কাছে অনেক সুনাম শুনেছিলাম জায়গাটার। বাতাসিয়া লুপ জায়গাটিতেই দার্জিলিং ট্রয় ট্রেন যেটা কিনা ঘুম আর দার্জিলিংয়ের মধ্যে এখন চলাচল করে, সেটি এখন থেকে ঘুরে। গোল লুপের মতোন লাইনটি ঘুরে আবার ঘুমের দিয়ে যায়। এখানে গোল হয়ে রেল লাইন পাতা আছে আর মাঝখানে গোর্খা আর্মিদের একটি স্মৃতি স্তম্ভ আছে যেটার সাথে সাথে খুব সুন্দর বাগান দিয়ে ঘেরা। আকাশ পরিস্কার থাকলে এখান থেকেও কাঞ্চনজংঘা সৃঙ্গ দেখা যায়। ছবি দেখলে কিছুটা আইডিয়া পাবেন। বাতাসিয়া লুপে কিছুক্ষন বসে ছবিটবি তুলে আমরা আবার গাড়ীর দিকে আগাই। দার্জিলিংয়ের কিছুই আমাদের আর ভালো লাগেনা। মিরিক মানেভঞ্জনে নির্জনতা থেকে এসে হাজার মানুষের ভীরে যত সুন্দর জায়গাই আমাদের সামনে পড়ছে আমাদের মন আগের দুদিনের জায়গাগুলোও স্মৃতিতে কাতর হয়েছিলো। বলে নেয়া ভালো দার্জিলিং বেড়াতে আসা মানুষের কাছে বাতাসিয়া লুপ জায়গাটি অনেক পছন্দ হয় কারন তারা এখানে দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যবাহি গোর্খা পোশাক ভাড়া নিয়ে মজার মজার ছবি তুলে নিয়ে আসে। যেটা আসলেই অনেক মধুর স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে। বাতাসিয়া লুপ থেকে রাস্তায় নেমে সবাই চা খাই রাস্তার পাশের দোকান থেকে। ড্রাইভারকে খুজতে আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতে হয় কারন রাস্তায় অনেক গাড়ি। দার্জিলিং শহরের কোথায় বেড়াতে গেলে গাড়ি পার্কিং একটা বড় সমস্যা।



এরপরের গন্তব্য আমাদের সবার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ‘হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট’ সংক্ষেপে এইচ.এম.আই। প্রথম হিমালয় জয়ী তেনজিং নোর্গে যে প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রিনসিপ্যাল ছিলেন। আমাদের দেশের সব এভারেষ্টজয়ী মাউন্টেনিয়ারই এখানকার প্রাক্তন ছাত্র। মুসা ইব্রাহিম বা এম.এ. মুহিত, সবাই। এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু ভারতে নয় বরং সারা পৃথিবীতেই অনেক বিখ্যাত। আমাদের গাড়ি যখন এইচ.এম.আইয়ের গেটে তখন আবিস্কার করলাম পদ্মজা নাইডু জ্যুওলজিকাল পার্ক বা দার্জিলিং চিড়িয়াখানা এবং হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট একই জায়গায়। একই গেট দিয়ে ঢুকতে হবে। আমাদের সময় বাঁচবে দেখে সবাই বললাম ’ভালোই হলো’। গেটের বাহিরে বেশ ভির। টিকিট কেটে ঢুকে পড়লা ভিতরে। প্রথমেই জ্যুওলজিকাল পাক বা চিড়িয়াখানাটি দেখতে হয়। আমাদের চিড়িয়াখানার থেকে অনেক ছোট। আর এখানে শুধু হিমালয়ান প্রাণীদেরই রাখা হয়েছে। কিন্তু খুব সুন্দরভাবে সাজানো। উচু নিচু ঢালের সাথে সাথে খাচা বা বাউন্ডারীর ভিতরে বিভিন্ন প্রানী রাখা আছে। হিমালয়ান কালো ভাল্লুকের জায়গাটি বিশাল। ভিতরে ঢুকতেই কিছু কারুকার্য করা বেঞ্চ পাতা আছে যেখানে বসে ছবি তুললে পিছনের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। এখানে আসার পর প্রথমবারের মতো আমরা আমাদের পরিবারের সবাইকে খুব মিস্ করতে লাগলাম।









পারিবারিক ট্যুরের জন্য একদম মানানসই যায়গা ছিলো এটি। চিড়িয়াখানা দেখে ঢুকে যাই হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে। পর্বত আরোহী ও এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য যায়গাটি খুব প্রিয়। এখানে একটি পর্বতারোহন বিষয়ক জাদুঘর বা প্রদর্শনী আছে। পর্বত আরোহনের উপর সব কিছুই যেন এখানে দেখা হয়ে যায়। পর্বতারোহীদের ঐতিহাসিক ছবি, তাদের জিনিসপত্র দেখে বার বার শিহরিত হতে হয়। মাউন্টেনিয়ারিংয়ের মিউজিয়াম টাইপের প্রদর্শনী থেকে বেড় হয়ে তেনজিংয়ের ভাস্কর্যের সাথে সবাই ছবি তুললাম।

‘হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট’ থেকে বেড় হয়ে আরেকটু সামনে যেতেই পড়ে ‘তেনজিং রক’। তেনজিং রক একটি বিশাল পাথর যেটা দেখতে বিরাট পর্বতের একটি ছোট মডেলের মতো। এখানে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়াও পর্যটকদের জন্য স্বল্প উচ্চতার পর্বতারোহন অভিজ্ঞতা হয়ে যায় এখানে। আমরা তেনজিং রকে পৌছালাম তখন ট্যুরিষ্টদের বেশ ভির। ২০ রুপি দিয়ে ভিতরে ঢুকে তেনজিং রকে আরোহন করা যায়। পুরো পাথরটিই একটি পর্বতশৃঙ্গের আকারে বিরাজমান। পাথরের উপরে একজন দড়ি নিয়ে বসে আছে। নিচে একজন ট্যুরিষ্টদের কোমরে দড়ি বাধতে সাহায্য করছে, সাথে সাথে বুঝিয়ে দিচ্ছে কিভাবে পাথরের উপরে উঠতে হবে। আমাদের ৪ জনের মধ্যে আমিই টিকেট কেটে প্রবেশ করি এবং কোমরে দড়ি বেশে কয়েক সেকেন্ডে পাথরের উপরে উঠে যাই। উপরে উঠার পর পর্বত সামিট করা বা পর্বত বিজয়ের মজার কিছুটা পাই। নিচে বাকি তিনজন বেশ হইচই করে উৎসাহ দেয়। মোটের উপর ভালোই লাগে যায়গাটা।







ছবিটবি তুলে আবার যাত্রা শুরু করি কেবল কার ষ্টেশনের দিকে। দার্জিলিং ক্যাবলকার সার্ভিসটি দার্জিলিং রোপওয়ে বা দার্জিলিং দড়িপথ নামে পরিচিত। রোপওয়ের বঙ্গানুবাদ বোধহয় আমিই প্রথম করলাম। হাঃহাঃহাঃ। যাকগে, রোপওয়ে ষ্টেশনের পাশেই দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত স্কুল সেন্ট জোসেফ অবস্থিত। বাহির থেকে স্কুল বিল্ডিংটি দেখতে বেশ সুন্দর। ছাত্র হিসেবে কোনকালেই খুব ভালো ছিলাম না ফলে স্কুল কলেজ নিয়ে উচ্ছাস দেখালাম না। ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করেছিলো যে আমরা স্কুলটি দেখতে চাই কিনা। আমরা বললাম, দরকার নাই। ক্যাবলকারটা ভালো ভাবে দেখতে চাই। আমাদের নামিয়ে দিয়ে ড্রাইভার তার বাসায় চলে গেল দুপুরের খাবার খেতে। যাওয়ার আগে বললো আপনাদের ফিরে আসতে ১ ঘন্টা লাগবে, এর মধ্যে আমি দুপুরের খাবারটা খেয়ে আসি। ফিরে এসে আগের জায়গায় আমাকে পাবেন। যাক আমরা সিঁড়ি বেয়ে ক্যাবলকারের ল্যান্ডিং ষ্টেশনে উঠে আসলাম। একের পর এক ক্যাবল কার এর বাক্স সদৃশ খোপ গুলো তারের সাথে ঝুলতে ঝুলতে আসছে এবং মানুষ নামিয়ে এবং নতুন মানুষ পেটে নিয়ে আবার তারের সাথে ঝুলতে ঝুলতে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। দেখেই আমাদের বেশ রোমাঞ্চ হচ্ছিলো। আমার ক্যাবলকারের অতীত অভিজ্ঞতা বেশ ভারিই বলতে হবে। মালোশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কোলকাতার সাইন্সসিটিতে ক্যাবলকারে চরেছি। কোনটাতেই খুব বেশি ভয় পায়নি। কিন্তু দার্জিলিংয়ের ক্যাবলকারে কেন যেন অনেক ভয় লাগছিলো। ক্যাবলকারের বাক্সগুলোকে কেমন যেন ধোরে বেন্ধে থামানো হচ্ছিলো। দেখেই আমরা একটু ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম। যাক, ৪ জন মিলে যখন বাক্সের মধ্যে উঠে পরলাম, তখন মজা হলো। আমি ও লিটন মহা আনন্দে ছবি তুলতে লাগলাম জানালা দিয়ে ক্যামেরা বাহির করে। নিচে পুরোটা দৃশ্য জুড়ে ছিলো চা বাগান আর আকাশ ছোয়া পর্বতের সারি। আসলেই অসাধারন দৃশ্য। আমান বলছিলো ওর বউ নাকি এখানে ইউনিভার্সিটির ট্যুরে এসে ভয়ের চোটে মেঝেতে বসেছিলো। প্রাথমিক উত্তেজনার পর আমাদের অবস্থাও কিছুটা ঐরকম হয়ে গেলো। এই ক্যাবলকার সার্ভিটটি ৭০০০ ফুট উচ্চতায় শুরু হয়ে ৬২০০ ফুট উচ্চতায় নেমে আসে। বেশ অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়। আমাদের পাশে দিয়ে যখন অন্যদের ক্যাবলকারগুলো পাসকেটে যাচ্ছিলো বেশ মজা লাগছিলো দেখে। তবে এখানকার ক্যাবলকারগুলো বেশ হালকা দেখতে, তাই খুব ভয় লাগছিলো। মাঝামাঝি যেয়ে কারটি থেমে গেলে আমাদের ভয় তখন চুড়ান্ত পর্যায়ে। নিজেরা আলাপ করছিলাম এখান থেকে লাফ দিলে বাঁচার সম্ভাবনা কত পার্সেন্ট। ভিতরে ভয় থাকলেও হাসাহাসি চলছিলো একই সাথে। আমরা ঠিক করলাম ফেরার পথে ক্যাবল কারে ফিরবো না। পারলে ওখান থেকে গাড়ি করে ফিরবো। এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হবে জানলে এই পথে পা বাড়াতাম না।





যাক, ক্যাবলকারটি একটি সময় ওপর পাশে পৌছে যায় এবং আমরা একে একে নেমেও আসি। কিন্তু নামার সাথে সাথে দুঃসংবাদ পেলাম, দুপুরের খাবার বিরতির জন্য এক ঘন্টা পরে ক্যাবল কার ছাড়বে। তার মানে আমাদের এই নাম না জানা জায়গায় এক ঘন্টা বসে থাকতে হবে। মেজাজ খারাপ হলেও কিছুই করার ছিলোনা। ক্যাবলকার ল্যান্ডিং ষ্টেশনেই চা নাস্তার দোকান ছিলো। সাথে অন্যান্য পানীয়রও ব্যাপক মজুদ ছিলো দেখে অবাক হলাম। আমাদের সাথে অন্য টুরিষ্ট্যরা বিয়ার হুয়িস্কী নিয়ে বসে পরলো। আমাদের মাথায় তখন ড্রাইভারের চিন্তা। বেচারী বাসা থেকে খেয়ে এসে দেখবে আমরা নাই। এবং আরও এক ঘন্টা আমাদের জন্য অপেক্ষা করলেও আমাদের খোঁজ পাত্তা পাবেনা। ব্যপারটা আসলেই খুব খারাপ হবে। আমরা ঠিক করলাম আলাদা একটি গাড়ি ভাড়া করে আগের গাড়ির কাছে ফিরবো। কিন্তু ক্যাবলকারটি যেখানে থামে সেখানে মানুষের বসতি থাকলেও গাড়ীঘোরা খুব বেশি নাই। একটিই দোকান ক্যাবলকার ষ্টেশনে ছিলো যেখানে আমরা চা নাস্তা করার ফাঁকে দোকানী সাথে ৬০০ রুপীতে উপরের ক্যাবলকার ষ্টেশন পর্যন্ত পৌছে দেয়ার চুক্তি করে নিলাম। মনে মনে খুশি হলাম যে আবার ক্যাবলকার নামক ভয়ানক দুঃস্বপ্নের সাথে সাক্ষাৎ হবে না ভেবে। কে জানতো যে আমরা আরও বড় দুঃস্বপ্নের দিকে এগিয়ে চলেছি। নাস্তা করে দোকানী আমাদের নিয়ে ১০০-১৫০ গজ এগিয়ে একটি মারুতী ওমনি গাড়ির পাশে নিয়ে গেলো। গাড়িটি দেখে আমরা বেশ ঘাবড়ে গেলাম। অনেক পুরোনো গাড়ি। দরজায় জং ধরে আছে। এই গাড়ি নিয়ে এতোজন যাওয়া যাবে কিনা জিজ্ঞেস করতেই হাসলেন। বললেন ৭-৮ জন নিয়েও যাওয়া আসা করে এটি। গাড়ী ড্রাইভারকে পাওয়া যাচ্ছিলোনা। ছোট ছোট বাচ্চাদের এদিক ওদিক পাঠিয়ে খোঁজ করা হচ্ছিলো লোকটিকে। অবশেষ তাকে পাওয়া গেলো। কিন্তু ওর অবস্থা দেখে আমাদের অবস্থা বেগতিক। মদ খেয়ে কোথাও ঘুমাচ্ছিলো বেচারী, জোর করে তুলে নিয়ে এসেছে। আমাদের অবস্থা নিরুপায়। যেতেই হবে। জুয়েল সামনে আর আমি আমান ও লিটন মাঝখানের সিটে। এয়ারটাইট অবস্থা। এতো সরু গাড়িতে বাংলাদেশে ২জন বসে। ড্রাইভারের মুখ দিয়ে দেশি মদের গন্ধে আমাদের আতঙ্ক তখন চরম অবস্থায়। দোয়াদুরুদ শব্দ করে পড়ার সাহস হচ্ছিলো না। গাড়ি চলা শুরু করার পর আমরা বেশিরভাগ সময় তাকিয়ে ছিলাম দরজার হ্যান্ডেলের দিকে। কত তারাতারি খুলে বেড়িয়ে যাওয়া যায়, মনে মনে সেটার ডেমনষ্ট্রেশন দিতে দিতে। ঢাকায় দেখেছি ছোট ছোট মারুতি ওমনি দিয়ে টিভি সাংবাদিকরা এদিক ওদিক ঘুরে। গাড়িটা দেখতে খেলনা খেলনা লাগে। সেই খেলনাই চড়ে ২ কিলোমিটার দুরত্ব ১০০০ ফুট বেয়ে উঠতে হবে কে জানতো? তবে সেই আধাঘুমন্ত মদ্যম ড্রাইভার যে খেলা আমাদের দেখাল সেটা অনেকদিন মনে থাকবে। বেশ কয়েকবার সামনের গাড়িকে সাইড দেয়ার জন্য ৪৫ ডিগ্রি কোনে ব্যাক গিয়ার দিয়ে গাড়ি সাইডও করতে হয়েছে। আমাদের মুখে কোন শব্দ ছিলো না। ভিতরে হার্টের শব্দ গাড়ির শব্দের কাছাকাছি পৌছে যাওয়ার অবস্থা। সব ভালো যার শেষ ভালো। আমরা যখন পৌছালাম তখনও আমাদের ড্রাইভার গাড়ি কাছে পৌছানোর বেশি দেরি হয়নাই। ড্রাইভারকে সংক্ষেপে ঘটনার বর্ননা দিয়ে আবার হোটেলে ফিরে আসলাম। বিকেলে চা পাতা ও অন্যান্য কেনাকাটা করতে হবে।



সেদিন বিকাল থেকে আমরা আবার ম্যালে ঘুরলাম। ঘোড়ায় চড়লাম। চা পাতা কিনলাম। শীতের কাপড় ও শাল কিনলাম। রিলায়েন্স সেন্টারে অন্যান্য টুকটাক কেনাকাটা করলাম। সিনেমা দেখলাম। সিনেমার নাম হিম্মতওয়ালা (নিউ)। আমাদের দুর্ভাগ্য হিন্দি ছবির ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য ছবিটা আমরা দার্জিলিংয়ে বসে দেখলাম। যাক হাসতে হাসতে পেটে ব্যাথা হয়ে গেছিলো। এতোই স্থুল ছবি ছিলো ওটা। সিনেমা দেখে বের হয়ে ডমিনস পিৎজা খেয়ে হোটেলে ফিরলাম।

এর পর যাবো কালিম্পং। দার্জিলিং ট্যুরের আরেক অবিচ্ছদ্য অংশ। পড়তে থাকুন।

ম্যাপে যায়গা গুলোর নাম ভালো ভাবে পড়ে রাখুন।

১. টাইগার হিল
২. ঘুম রেল ষ্টেশন
৩. ঘুম মনাস্টেরী
৪. বাতাসিয়া লুপ
৫. দালি মনাস্টেরী
৬. রক গার্ডেন
৭. গঙ্গামায়া পার্ক
৮. জাপানিজ পিস টেম্পল
৯. আভা আর্ট গ্যালারী
১০. বাডওয়ান মহারাজার প্যালেস
১১. তেনজিং নোর্গের বাসবভন
১২. রেল ষ্টেশন
১৩. ডারহাম টেম্পল
১৪. রিনক্ মল
১৫. ফরেনার্স রেজিষ্ট্রেশন অফিস
১৬. টাউন হল
১৭. ক্যাপিটাল কর্ক টাওয়ার
১৮. লয়েড বোটানিকাল গার্ডেন
১৯. ন্যাচারাল হিষ্ট্রি মিউজিয়াম
২০. চৌরাস্তা
২১. টুরিষ্ট ইনফরমেশন অফিস
২২. অবজারভেটরী হিল/মহাকাল টেম্পল
২৩. ভূটিয়া বস্তি মনাস্টেরী
২৪. তিব্বতী রিফিউজি সেল্ফ হেল্প সেন্টার
২৫. শ্রাবেরী নাইটিংগেল পার্ক
২৬. তেনজিং রক
২৭. হিমালয়ান মাউনটেনীয়ারিং ইনস্টিটিউট
২৮. জোড়বাংলো
২৯. সেইন্ট জোসেফ’ স্কুল (নর্থ পয়েন্ট)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:৩৩
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×