ডিঙ্গি ও বোটঘাট। ৮ নম্বর ব্রিজের ওভারপাস থেকে তোলা ছবি।
রাতের ডিঙ্গি
’ঢাকায় ঘোরুঘুরির জায়গার অভাব’। কথাটি আমরা খুব ঢালাওভাবে বলে ফেলি। কথাটি ঠিক, আবার সব ক্ষেত্রে ঠিক নয়। ঢাকায় একদিন মুরুব্বি ও পরিবার পরিজন নিয়ে একটি বিকেল শান্তভাবে কাটাতে চাইলে জায়গার অভাব আছে। সুন্দর, নিরাপদ ও পারিবারিক জায়গার অভাব আছে। হাতেগোনা অল্প কিছু জায়গাই পাবেন পারিবারিকভাবে সময় কাটানোর। এবং সেসব জায়গার থাকবে অস্বাভাবিক ভিড়। তবে বন্ধুবান্ধব নিয়ে হইচই করার জন্য জায়গার অভাব নেই ঢাকায়। নাগরীক সকল সুবিধাসহ প্রাকৃতিক ভাবে অনেক সমৃদ্ধ জায়গাও কম নয় ঢাকাতে। তবে সেসব জায়গায় নিরাপত্তার অভাব ও অসামাজিক কাজের প্রাদৃর্ভাব দেয়া যায়। যেমন, মিরপুর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, সোরোয়ার্দি উদ্যান, বলধা গার্ডেন ও আরও অনেক জায়গা আছে যেখানে পানি, লেক, নদী ইত্যাদি আছে। কিন্তু নাই বেড়ানোর সুষ্ট পরিবেশ।
এ সবকিছু বিবেচনা নিয়ে ধানমন্ডি লেক একটি আদর্শ বেড়ানোর জায়গা। ধানমন্ডি লেক নিয়ে অনেকের অনেক অভিযোগ থাকতে পারে বা থাকার সবধরনের কারনও থাকতে পারে। তবে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সুবিধার কারনে ধানমন্ডি লেক ও রবীন্দ্রসরোবর এখন ঢাকা শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় আড্ডা স্থল ও বেড়ানোর জায়গায় পরিনত হয়েছে।
এখানে আপনি পাবেন আকাঁবাকা লেক, বিশাল বিশাল সব গাছপালাসহ অসাধারন প্রাকৃতিক দৃশ্য। গাড়ি ব্রিজ, পায়ে চলা ব্রিজ, বসবার স্থান, শরীরচর্চার জন্য জায়গা, খাবার দোকান ও রেষ্টুরেন্ট ও নৌকা ভ্রমণসহ অনেক নাগরীক সুবিধা।
পলাশ ফুলে লালে লালে ডাল
লেকটি ঘিরে ভিন্ন ভিন্ন নামের অনেকগুলো বসার স্থান রয়েছে। যেমন রবীন্দ্র সরোবর, জাহাজবাড়ি পয়েন্ট, ব্যাচেলর পয়েন্ট, শুটিং পয়েন্ট, দ্বীপ চত্বর, লেক ভিউ সাইড, ডিঙ্গি চত্বর, সুরধনী চত্বর, জিয়া চত্তর, শতায়ু অঙ্গন ইত্যাদি। সবগুলো স্থানই লেকটির তীর ঘেঁষে তৈরি। যেখানে বসে খোলা হাওয়ায় পরিবার, বন্ধু কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতে পারেন আপনেও।
আবার পুরোলেকটির পাড় ঘেষে আছে পায়ে হাটা পথ। মর্নিং বা ইভিনিং ওয়াকারদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরী কিছু পথও আছে কিছু কিছু যায়গায়। ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার থেকে শুরু করে এক লেকপাড়ের রাস্তা ৩২ নাম্বার ব্রিজ, ধানমন্ডি ৮ নাম্বার ব্রিজ, সুধাসদন হয়ে জিগাতলা এবং জিগাতলা ঘুরে জাহাজ বাড়ি সামনে দিয়ে ৫এ হয়ে আবার ৮ নম্বর ব্রিজ হয়ে ৩২ নম্বর গিয়ে এই পায়ে হাটা পথের সমাপ্তি। এতো দীর্ঘ ও সুন্দর পায়ে হাটা পথ ঢাকাতে আর আছে কিনা আমি জানিনা।
বসন্তে পাতার কার্পেট থাকে সারা লেকজুরে
মাত্রই কিছু দিন আগে ধানমন্ডি ৮ নম্বর ব্রিজের উপর দিয়ে একটি ওভার পাস বা পায়ে হাটা ব্রিজ করে দেয়া হয়েছে যাতে পুরো লেকটি প্রদক্ষিনকালে কোন বাধা না থাকে। কারন গাড়ি ব্রিজগুলো পার হবার সময় অনেক সময় বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় বা দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা থাকে। ওভার পাসটি উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ, বিশেষত তরুন বয়সী ছেলে মেয়ের আড্ডা মারা, ছবিতুলা ও সময় কাটানোর স্থানে পরিনত হয়েছে।
ধানমন্ডি লেকের সবচেয়ে ব্যস্ত জায়গাটি হচ্ছে রবিন্দ্রসরোবর। রবীন্দ্রসরোবরে আড্ডা না দিলে ঢাকা শহরের অনেক মানুষেরই দিনটা সম্পূর্ণ মনে হয়না। এখানে একটি মুক্তমন্চ রয়েছে যা রোমান স্থাপত্য রীতিতে তেরী। এখানে সারাবছর বিভিন্ন প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা চলতেই থাকে। এছাড়াও এখানে একটি ফুড কোর্ট আছে যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চা নাস্তাসহ আড্ডায় মেতে থাকে। যেন বিরাট এক প্রানের মেলা।
ধানমন্ডি লেকের কিছু যায়গা প্রাত ও সান্ধ ভ্রমণকারী জগিং করতে আসা মানুষের দখলে থাকে। ধানমন্ডি ৮নং ব্রিজ থেকে শুরুকরে সুধাসদন পর্যন্ত লেকের পাশের রাস্তায় স্বাস্থসচেতন মানুষের আনাগোনা বেশী। এছাড়াও ডিংগী রেষ্টুরেন্ট থেকে ধানমন্ডি ৩২ নং তাকওয়া মসজিদ পর্যন্ত লেকপাড়ও কিছু স্বাস্থ্যসচেতন মানুষকে দেখাযায়। এছাড়াও কিছু কিছু স্থানে সরকার থেকে শরীর চর্চার সুবিধা তৈরী করে দেয়া আছে। অনেক মানুষ এখানে প্রতিদিন শরীর চর্চা করে থাকে
রবীন্দ্রসরোবরে হকার
রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ
পায়ে হাটা ব্রিজের উপর থেকে ৮ নম্বর ব্রিজ
ধানমন্ডি লেকে বেশ কিছু রেস্তোরা রয়েছে। পানসি, ডিংগী, বজরা, সম্পান বিভিন্ন নৌকার নামে নাম এসব রেস্তোরার। এছাড়াও ডায়নামিক ফুড নামে বেশ কিছু খাবার দোকান লেকের বিভিন্ন স্থানে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। এটি এখন জাদুঘর। বঙ্গবন্ধুর অনেক স্মৃতি সংরক্ষিত এখানে। চাইলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে।
লেকের পাড়ে রয়েছে একটি সুরম্য বাড়ি। জাহাজ বাড়ি নামেই পরিচিতি এর বেশি। লেকের পাড়ে বসে জলে লাল বাড়িটির প্রতিচ্ছবি দেখতে পছন্দ করেন অনেকেই। তবে সাবধান সন্ধার পর এখানে না থাকাটাই নিরাপদ।
জাহাজ বাড়ী
সবুজ প্রকৃতির মাঝে শান্ত লেক
ফুল, পাখি, গাছ, সেতু, পায়ে চলা রাস্তা, লেক ও মানুষের সংমিশ্রণে ধানমন্ডি লেক সবার প্রিয় সময় কাটানোর জায়গা হয়ে পড়ছে দিন দিন। যদিও বিভিন্ন পেশা ও রুচি ভেদে অনেক মানুষ ধানমন্ডি লেক থেকে খারাপ অভিজ্ঞতাও নিয়ে যান। তবে সবমিলিয়ে ভালোর পরিমানটাই অনেক বেশী।
ধানমন্ডি ৮ নম্বর ব্রিজ।
পাতা ঝরা শেষে বিশাল মহিরুহ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৯