রাত প্রায় আড়াইটা।
আহত লোকটাকে ঘিরে কয়েকজন নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে ওয়েটিং রুমে। সবার দেহে জীর্ণ-শীর্ণ পোশাক। দেখেই বুঝা যায় খুব সাধারণ শ্রেণির মানুষ। সবার চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ। একটু পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তারের সহকারী এসে লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বললো, "আপনারা দুই মিনিটের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিবেন রোগীকে আজকে অপারেশন করাবেন কিনা। হয় আজকে অপারেশন করাতে হবে, না হয় আগামীকাল পুরো পা কেটে ফেলে দিতে হবে। ডিসিশন নিয়ে আমাকে জানান।"
প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেল। কেউ কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। সবাই চুপচাপ। পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে আহত লোকটা শুয়ে আছে। ডাক্তারের সহকারী আবার আসলেন। তার চোখে রাগের ছায়া। দশ মিনিট হয়ে গেলেও কেউ কোন সিদ্ধান্ত জানায় নি। আগুনঝরা চোখে লোকটা বললো, "আমার আরও কাজ আছে। আমি কি আপনাদের পিছনে ঘুরঘুর করবো শুধু? যা করার তাড়াতাড়ি করেন। আমি আপনাগো চাকর না বারবার আপনাগো লগে কথা কইতে আসমু।"
লোকটা চলে গেল। রোগীর লোকগুলোর চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। মনে হচ্ছিল সবার বুকের ভেতর একটা কান্নার সমুদ্রে জোয়ার এসেছে। সে জোয়ার যেন তীরে আছড়ে পরার অপেক্ষায়।
রাত গভীর হচ্ছে। লোকেগুলো রোগীকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো অপারেশন করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে বুঝলাম টাকার অভাব। সরকারি হাসপাতাল। অপারেশন খরচ নেই। শুধু অপারেশন করার ঔষধপত্র কিনে দিলেই হয়। অথচ সেই ঔষধ কেনার টাকাটাও নেই। টাকার কাছে মানুষ কত অসহায়!
এই শহরটা বড় বিচিত্র। কেউ লাখ টাকার বিছানায় শুয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আবার কেউ টাকার অভাবে হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে পা হারানোর পর নিজেকে কেমন দেখাবে সেই স্বপ্ন দেখে।
#শহরের_অলিগলি_০২