দুই বছরের সম্পর্কটা খুব ভালই কেটেছে আরিশা আর ফাহিমের। এই দুই বছরে পরস্পর পরস্পরের কেমন আপন হয়ে ওঠেছে। একদিন দুজনের কথা না হলে যেন সারাদিনই খারাপ যায়। ফোনে কথা শুরু করলে কখন যে সময় চলে যায় কেউ বুঝতেই পারে না। এইতো একদিনের কথা...
আরিশা- ফাহিম, তুমি আমাকে কখনোও ছেড়ে চলে যাবে না তো!
ফাহিম-হ্যাঁ, যাবো। হিহি।
আরিশা- আমি জানি তুমি কখনোই আমাকে ছেড়ে যাবে না।
ফাহিম- আমি আপনাকে কখনো ছাড়তে পারি! এমন কথা আর কখনো বলবা না।
মাঝেমাঝে তাদের মধ্যেও ঝগড়া হত, কিন্তু সে ঝগড়ার কখনো স্থায়ী হয়ে ওঠেনি। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেই পারে না সে যতই ঝগড়া করুক।
এমন সম্পর্ক হয়তো বিধাতা নিজ হাতে গড়ে দেন। আর এখন শুধুমাত্র একটা সুন্দর পরিণতির অপেক্ষায়। পরের সপ্তাহে দুজন দেখা করল, একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসে কথা বলার পরের গল্প...
আরিশা- আচ্ছা, অনেকদিন তো হয়ে গেল, আমাদের পড়াশুনাও শেষ। এখন তো তুমি তোমার বাসায় জানাতে পারো।
ফাহিম- এত পাগল হচ্ছো কেন!
আরিশা- তুমি কয়েকদিন ধরে কেমন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছো, খুব অল্পতেই অনেক রেগে যাও।
ফাহিম- রাগানোর কথা বললে রাগবো না তো কি করব।
আরিশা- এমনভাবে কথা বলছ কেন!
ফাহিম- আমি এমনই; ইচ্ছে হলে থাকো আমার জীবনে আর ইচ্ছে না হলে চলে যাও।
হঠাৎ-ই চারপাশ কেমন নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল। দুঃস্বপ্নের কালো মেঘে যেন ঘিরে গেল সম্পর্কটা আর সে মেঘের রং যেন গাঢ় থেকে গাঢ়তর।
আরিশা- ঠিক আছে, তুমি যেমনটা চাও। আমার আর কিছু বলার নেই। তবে এতদিন পর এইটুকু বুঝতে পারছি, তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসনি। শুধুই ভালোবাসার অভিনয় করেছ, মিথ্যে অভিনয়ে আমাকে আগলে রেখেছিলে। তুমি একটা স্বার্থপর। ভালো থাকো।
ফাহিম- হ্যাঁ, আমি সবকিছুই অভিনয় করে করছি, আমি স্বার্থপর। আর একটা কথা, আমি সত্যিই তোমাকে কখনও ভালোবাসি নি।
হয়ত আরেকটা সম্পর্কের মৃত্যু। ঐদিন চলে যাবার সময় আরিশা অনেক কান্না করেছে। যে ছেলে গত দুই বছর তাকে কখনো কাদঁতে দেয়নি সেই ছেলের জন্যই এত কাদঁতে হল তাকে!
আর ফাহিমের মুখে ছিল হাসি। তবে কেন জানি চোখে একফোঁটা জল ছিল। কি জানি সে জল হয়ত আনন্দের জল।
মন থেকে যে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে সে সম্পর্ক ফেসবুকে রেখে আর কি হবে! ছয়মাস কেটে গেছে। আরিশা এখন ফাহিমকেও অন্যসব ছেলেদের মতোই খারাপ বলে ধরে নিয়েছে। পৃথিবীর সব ছেলেই হয়তো একই রকম, স্বার্থপর।
এরপর হঠাৎ একদিন আরিশা কি মনে করে ফেসবুকে ফাহিমকে সার্চ দেয়। প্রোফাইলটা কেমন জানি হয়ে গেছে। শুধু ছয়মাস আগের একটা পোস্ট পাবলিক করা, পোস্টটায় লিখা ছিল...
"আমি জানি তোমার কাছে এখন আমি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ। শেষ যেদিন তুমি চলে যাচ্ছিলে সত্যিই আমার খারাপ লাগে নি, সত্যিই। শুধু চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছিল। তবে আনন্দ লাগছিল এটা ভেবে যে তোমার জীবন তো নষ্ট হতে দিলাম না। তোমার সাথে যেদিন শেষবার দেখা করলাম, এর আগের দিন আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ডাক্তার বলেছিল সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ বাঁচব। জানো, ঐ খবর শুনে তোমার কথা ভেবে আমি এত কান্না করেছিলাম, জীবনে কখনো এত কাঁদিনি। এরপর অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম তোমার সাথে ব্রেকআপ করব, নিজের স্বল্প সময়ের জীবনের সাথে তোমাকে জড়িয়ে তোমার জীবনটাকে নষ্ট হতে দিতে চাই নি। তাই ঐদিন হাসিমুখে তোমার সাথে অভিনয় করেছি। আমি সত্যি বড় অভিনেতা, খুব স্বার্থপর; পারলে ক্ষমা করে দিও। বিধাতার খেলায় জীবনের কাছে হেরে গেল আমার ভালোবাসা। আর একটা কথা, আমি সত্যিই নিজের জীবনের থেকে তোমাকে বেশি ভালোবাসি।"