কিছুদিন আগে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান তিতাস নদীতে গিয়েছিলেন। একটা কোদাল নিয়ে একটা প্রতীকি কোপ দিয়ে এসেছেন। বলেছেন “আমি একটা কোপ দিয়ে এলাম, বাকী কোপ আপনারা দেবেন”।
এই ব্লগেই মাহমুদুর রহমান কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক আর হিংসাত্মক লেখার অভাব নেই। সেসব লেখকের বেশিরভাগই এখন তিতাস ইস্যুতে চুপচাপ!
প্রিয় ব্লগার দিনমজুর- বরাবরের মতোই তিতাস নদীর বুক চিড়ে দেয়া বাঁধ নিয়ে সময়োপযোগী তথ্যভিত্তিক পোস্ট লিখেছেন। মডারেটররা স্টিকিও করেছেন। স্টিকি পোস্ট নিয়ে হিংসা ছড়াতে চাইনা তবু কিছু কথা না বলে পারছিনা- ব্লগ টা আসলেই আমাদের নিতান্তই টাইমপাস, আড্ডাবাজি, গালাগালি আর লাফালাফি আর ফাঁকা বুলি আওড়ানোর জায়গায় পরিণত হচ্ছে। সেদিন ব্লগ ডে তে আর তার কিছুদিন পর আরেকটা ইভেন্টে এখানকার সেরা এবং জনপ্রিয় সব ব্লগারদের আড্ডা হলো। দয়া করে কেউ বলবেন আপনাদের আড্ডার আলোচনায় আমাদের বেচারা তিতাস তিস্তা ছিলো কিনা? না ছিলোনা। কিন্তু আপনাদের অনেকেই আবার বাসায় ফিরেই ব্লগ ফেইসবুকে কীবোর্ড ফাটিয়েছেন। আজকে সামু পোস্ট স্টিকি করেছে তো কী হয়েছে? সামু কি তার ব্যানারের নীচে তিতাস রক্ষার জন্য কোনও আন্দোলনের ডাক দেয়ার সাহস করতে পারবে? পারবে না, করবেও না। সামু শুধু পারবে আমাদের কে লাফালাফি করার একটা প্ল্যাটফরম তৈরী করে দিতে, আমরা কয়দিন লাফাবো তিতাস ইস্যুতে, তারপর এটা ভুলে অন্য কোনও নতুন ইস্যুতে, এভাবে মেমরী স্ট্যাকে জমা হতে থাকবে, ইন ফ্যাক্ট চাঁপা পড়তে থাকবে সব ঘটনা।
কয়েকজন যদি একটা মানববন্ধনের ডাক ও দেয় তাহলে স্টিকি পোস্টে মন্তব্য করা ৩২৯ জনকেও পাবেন না। কেউ কেউ আবার মানবন্ধনের ছবি নিয়ে স্যাটায়ার করে পোস্ট ও দিবে! এমন ঘটনাও নতুন নয়।
পরিবেশবাদী আন্দোলনের কয়েকজন নেতার মুখ কদিন আগে খুব বেশি বেশি দেখতাম। বিশেষ করে চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের প্রতিবাদ করে। এখন উনাদের কাউকেই দেখিনা! স্বাভাবিক ভাবেই মনে সন্দেহ জাগে তাদের পরিবেশপ্রীতি আর স্বদেশপ্রীতি নিয়ে! দুটোই আজ টাকায় বিকে...
রসুনের সব কোয়ার একই গোয়া। বিএনপি জানে যে সাংগঠনিক একতা আর রাজপথের শক্তি বিবেচনায় তারা আজকে ধ্বযু একটা দল। যেকোনও ইস্যুতেই রাস্তায় নেমে দশ মিনিট দাঁড়ালে পঞ্চাশ টা মামলা খায় আর একশজন জেলে যায়। জনগণের শক্তিকে পুঁজি করে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ। বিএনপি জানে এখন ক্ষমতায় যেতে হলে তাদেরকেও গ্লোবাল পলিটিক্স এর অংশ হতেই হবে, ভারত কে উদোম গায়ে না হোক অন্তত পেটিকোট আঙ্গিয়ে হলেও ু%তে দিতে হবে। এইসব ইস্যুতে আন্দোলন ওরা করলে সেটা লোক দেখানোই হবে, অথচ ফাঁকা তালে ওদের নেতাকর্মীরা আটক হবে।
আর জামাত শিবির এই ইস্যুতে আন্দোলন করলে তারা আমাদের কারো সমর্থন পাবে কারো পাবেনা, আর এই নিয়ে ব্লগ আজাইরা গরম হবে।
বাকি রইলাম আমরা আম ভীতু ব্লগার। একটা বাস্তব সত্য স্বীকারোক্তি দিচ্ছি- চাইলে আমি তীব্র কন্ঠে সরকারের নির্লজ্জ দালালি আর ভারতের নির্মম শোষণের প্রতিবাদ করে একটা আগুন মন্তব্য করতে পারি, কিন্তু রাজপথে আন্দোলনে ডাকলে আমি হয়তো সেই তেজ নিয়ে আসবোনা। কারণ দেশে যেই হারে গুপ্তহত্যা, খুন, নির্বিচারে কারাদন্ড, বিনাদোষে আটক চলছে, যেখানে বিরোধীদলের শক্তিশালী জনপ্রিয় নেতাদের রাজপথে মাথা ফাটানো হচ্ছে সেখানে আমার জীবনের কি নিরাপত্তা?
একবার ভেবে দেখুন, সেদিন বিএনপির- দেশের প্রধান বিরোধী দলের একটা বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন কে পুলিশ দশ মিনিটের মধ্যে ভন্ডুল করে দিয়েছে, মুহুর্তের মধ্যে নামে বেনামে শত শত মামলা করে ফেলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ন্যায্য দাবীতে ডাকা মানবন্ধনেও যারা সন্ত্রাসী আর পুলিশ একযোগে লেলিয়ে দেয়, তাদেরকে শিবির জামাতী বলে কালার করে ফেলে- সেখানে আমাকে শান্ত ভাবে মানব বন্ধন করতে দেয়া হবে তার গ্যারান্টি কী? মানববন্ধনে আমার ওপর ছাত্রলীগ পুলিশ হামলা করবেনা, আমাকে পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে যাবেনা তার কি নিশ্চয়তা? আমার ক্যারিয়ার, আমার পরিবারের ভবিষ্যত এক মুহুর্তে নষ্ট করে দিতে এই অত্যাচারী সরকার এতটুকু ভাববে না। এরা নির্লজ্জের মতো আজ প্রকাশ্যে ভিনদেশের জঘণ্য দালালী করতেও এতটুকু ভাবে না।
হ্যা আপনাদের মতো আমিও ঠিক এই মুহুর্তে তিতাসের গায়ের বাঁধ টা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে কেটে আসতে পারলে শান্ত হতাম। কিন্তু আমি এটা করতে ভয় পাই। খোদার দোহাই লাগে আপনারা ফাঁকা বুলি আওড়াবেন না। দেশের জন্য আন্দোলন করতে যাওয়ার আগে আপনারাও চৌধুরী আলম, নুরুজ্জামান বাবু, লোকমান আরও অনেকের পরিণতির কথা ভেবে ভয়ে গুটিয়ে যাবেন। আপনারা মুভি আড্ডা থেকে কবিতা আড্ডার ডাক দিবেন, কবিতা আড্ডা থেকে ভোরের কুয়াশা আড্ডা, সেখান থেকে ডাক দিবেন কৃষ্ঞচুড়া আড্ডার, আপনারা ব্লগ সুপারস্টার হবেন আর ব্লগারদের আড্ডায় গিয়ে ফোটো তুলবেন- ব্যাস এটুকুই।
কোদাল হাতে তিতাস নদীর তীরে যাবেন, আটক হয়ে একরাত পর মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন- সবাই তো আসিফ মহিউদ্দিনের মতো নিজেকে এরকম সৌভাগ্যবান মনে করেন না নিশ্চয়ই!
আগে গণতান্ত্রিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা প্রয়োগ করার মতন সুস্থ উপযোগী পরিবেশের জন্য দল মত নির্বিশেষে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, অধিকার আদায়ে রাজপথে নামলে অক্ষত শরীরে বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তার জন্য আন্দোলন করতে হবে। নইলে ফেলানী, ট্রানজিট, টিপাইমুখ, তেল-গ্যাস, তিস্তা ইত্যাদির মতো তিতাস ও কেবল মেমরি স্ট্যাকেই চাঁপা পড়ে থাকবে।