somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেবেলা, হেডস্যার, রঙের পিচকিরি, স্কুল পালানো, জুতার রেজালা এবং মিথেন গ্যাস :D:D:D

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বলি, ছোটকালে আমি কখনই দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম না। আমি ছিলাম খুবই শান্তশিষ্ট ছেলে। কারো সাথে মারামারি-ঝগড়া করতাম না, দুষ্টোমি করতাম না, কাউকে বকা দিতাম না, কারো টিফিন চুরি করতাম না মোটকথা আদর্শ ছেলে বলতে যা বুঝায় তাই ছিলাম আমি। কোথাও কি খটকা লাগছে? হ্যা ঠিকই ধরেছেন। আমার উপরোক্ত সকল কথাই মূলত চাপার সমাহার।

আপনাদের মাঝে এখনও যারা ভাবছেন যে আমি আসলেই খুব শান্তশিষ্ট ছিলাম তাদের জন্য আমি আমার স্কুলের কিছু ঘটনার বর্ণনা দেতে ইচ্ছুক, আমার শান্তশিষ্ট ছোটকালের বর্ণনা শুনে কিছুটা অনুধাবণ করুন।

আমার স্কুল ছিলো কুড়িগ্রামের "কিশলয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।"
আমার খুবই পছন্দের ছিল স্কুলটি। বন্ধুবান্ধব নিয়ে হই হল্লোর করে দিন কাটিয়ে দিতাম। আমি পড়াশুনার দিক দিয়ে ছিলাম ফাঁকিবাজ, সেই জন্য ক্লাসে রোল ছিলো চার। রহস্যময় ব্যাপারটা হলো রোল এক থেকে তিন পর্যন্ত তিনজনই ছিল মেয়ে।
যাই হোক, এখন আসল কথায় আসি। প্রথমেই আমি শুরু করতে চাই
স্কুল পালানোর কাহিনী দিয়ে। একবার আমরা বিশজনের মত ছাত্র দল করে স্কুল পালালাম। পরদিন এসিসটেন্ট হেডস্যার আমাকে একা ডেকে পাঠালেন। আমি তো ভয়ে একেবারে কাঠ, বুঝতে বাকি রইলো না যে স্কুল পালানোর দায়েই আমাকে ডাকা হয়েছে। স্যারের বদমেজাজের সুনাম অনেক আগে থেকেই স্কুলে বিরাজমান ছিলো। আল্লাহর নাম জপতে জপতে আমি স্যারের রুমের দিকে কওনা হলাম। স্যাররে রুমটার দিকে যতই এগুতে থাকলাম ততই আমার আত্মা শুকিয়ে যেতে লাগলো। মনে হলো অনন্তকাল ধরে যাত্রা করে আমি স্যারের রুমের দড়জায় পৌছালাম। রুমের দরজায় গিয়ে বললাম," মে আই কাম ইন স্যার?"
স্যার বললেন,"ইয়েস, কাম ইন।" আমি স্যারের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। স্যার চোখ লাল করে আমার দিকে তাকালেন। স্যারে চাহুনি দেখে আমার প্রায় কেঁদে দেবার অবস্থা। স্যার সেই লাল চোখ, আমার দিকে স্থির করে বললেন,"তোমাকে আমি ডেকেছি স্কুল পালানোর ব্যাপারে কথা বলতে। শুনেছি বিশজনের মত স্কুল পালিয়েছে। যারা যারা স্কুল পালিয়েছে তাদেরকে ধরে পুকুরের পানিতে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে কান ধরে দাড়া করিয়ে রাখা হবে।" স্যারের কথা শুনে তো আমার হার্টফেলের অবস্থা, আমি কোনমতে বললাম,"জ্বি স্যার।" স্যারের সেই পানিশমেন্টে আমার কি দূর্দশা হবে সেটা আমার চোখের সামনে ভাস্তে লাগল। স্যার আমাকে বললেন,"তোমার কাজ হলো কে কে স্কুল পালিয়েছে তার লিস্ট আমার কাছে দেয়া।" স্যারের কথা আমার কানে ঠিক বোধগম্য ঠেকল না। আমি বোকার মত দাড়িয়ে থাকলাম। স্যার ধমক দিয়ে বললেন,"কি হলো, যা বললাম, একটা লিস্ট করে আমাকে দিবে, তুমি ভাল ছেলে জন্য আমি তোমাকে দ্বায়িত্বটা দিলাম।" আমি কোনমতে "জ্বি স্যার" বলে স্যারের রুম থেকে পালিয়ে বাঁচলাম। স্যারের সেই লিস্ট জমা দিয়েছিলাম কি না তা মনে নেই, তবে জীবনে এমন বাঁচা আর কেউ বেঁচেছিলো বলে আমার জানা নেই।

এবার আসা যাক মিথেন গ্যাসের কাহীনিতে।
বিজ্ঞান ক্লাস চলছে , বিজ্ঞান স্যার গম্ভীরভাবে আমাদের বললেন,"পরিবেশ দূষণ" চ্যাপ্টারটা পড়েছ সবাই? আমি পড়ে আসিনি কিন্তু দেখলাম সবাই হ্যা সূচক মাথা নাড়ছে। অগত্যা আমারো মাথা নেড়ে সায় দেয়া লাগলো। বিধির বাম, স্যার আমার দিকে আন্গুল তুলে বললেন,"এই তুমি দাড়াও।" আমি দাড়ালাম।
স্যার বললেন,"বল পঁচা ডোবায় কোন গ্যাসের কারনে রাতে আলো দেখা যায়?" যেহেতু চ্যাপ্টারের নাম "পরিবেশ দূষণ", তাই আন্দাজ যায়গামত লাগার সম্ভাবনাই বেশি। আমি মাথা চুলকে উত্তর দিলাম,"স্যার দূষিত গ্যাস।"
স্যার আমার দিকে হতাশ ভাবে তাকালেন, আমিও মুখটাকে হাসি হাসি করে বুঝতে চাইলাম যে আন্দাজটা যায়গামত লেগেছে কি না? স্যার বললেন,"হয়নি হয়নি! উত্তর হবে মিথেন গ্যাস।" স্যারের এই কথায় ক্লাসের সবাই হেসে উঠলো। আমারো অবশ্য হাসি পাচ্ছিলো, কিন্তু আমি সেদিন গম্ভীরভাবে হাসিটা চেপে গেছিলাম।

এবার বলি রঙের পিচকিরির কথা।
আমি একবার কোথা থেকে জানি একটা পিচকিরি যোগার করেছিলাম। পিচকিরিটায় পানি ভরে স্কুলের সবাইকে ভিজিয়ে একাকার করে মজা পাচ্ছিলাম, আর ওরাই পিচকিরিটাকে হাত করার জন্য আমার পেছনে পেছনে ঘুরেছিলো আর ভিজছিলো। এভাবে কিছুক্ষণ ভেজাভেজি চলার পর আমার মাথার একটা কুবুদ্ধির উদয় হলো। ঠিক করলাম যে পানির বদলে এবার ব্যাবহার করা হবে কালি। যেমন ভাবা তেমন করা। কোন এক বেচারার কাছ থেকে কলম চুরি করে তার কলির সাথে পানি মিশিয়ে তৈরি করা হলো সেই বিশেষ দ্রবন। কালি ভালভাবে মেশেনি তবে তা কাজ চলে যাবার মত। আমি এবং আমার বন্ধুরা অপেক্ষা করতে লাগলাম বারান্দার শেষ মাথায়। তারপর দড়জার ফাঁকে লুকিয়ে থাকলাম। একমন ভাবে দাড়ালাম যেন শব্দ শুনে আন্দাজে পিচকিরি দিয়ে ফায়ার করে চম্পট দেয়া যায়। অপেক্ষা করে আছি তো আছিই কেউ আসার নাম নেই, হঠাৎ একজনের আসার শব্দ শোনা গেল, আমি আর আমার বন্ধুরা তৈরি হলাম পিচকিরি ছিটিয়ে দেয়ার জন্য। এমন সময় আমার সামনে হেডস্যার এসে পড়লেন আর আমি সাথে সাথেই পিচকিরি ছিটিয়ে দিলাম। পিচকিরির কালিটা স্যারকে না লেগে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। হেডস্যার আমাকে অনেক আদর করতেন, তবে এবার তিনি আগুন চোখে আমার দিকে তাকালেন। আমার হেচকির মত উঠতে থাকলো। স্যার আমার দিকে আরো কিছুক্ষণ আগুন চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন,"ক্রো বানান কি?" আমি হেচকি তুলতে তুলতে বললাম,"সি আর ও.....।" স্যার আবার বললেন," ক্রো বানান সি আর ও....?" আমি বললাম, "না স্যার, সি আর ও ডবলিউ।" স্যার বললেন,"গুড, যাও এখন ক্লাসে যাও।" আমি স্যারের কাছ থেকে জান নিয়ে পালিয়ে বাঁচলাম।

এবার হলো সেই জুতার রেজালার ঘটনা। জুতার রেজালা শুনে আবার ভাববেন না যে কেউ সত্যি সত্যি জুতার রেজালা বানিয়েছিলো। ঘটনাটা শুনলে সবকিছু স্পষ্ট হবে। :D
আমাদের ক্লাসে একটা ছেলে ছিলো তার কামড়ানোর অভ্যাসের জন্য বিখ্যাত। তার নাম ছিলো, "মিস্টার ঘেউ।" তার সাথে মারামারিতে কেউ পারতো না, কারণ মারামারির শেষ পর্যায়ে সে কামড়ানো শুরু করতো এবং কামড়িয়ে সে তার জয় নিশ্চিত করতো।
আমি একে হারানোর একটা উপায় খুজতে লেগে পড়লাম। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিলাম যে তাকে হারানো হবে কাদা পদ্ধতিতে। অর্থাৎ দুই হাত কুনই পর্যন্ত কাদা মেখে তারপর মারামারিতে লেগে পড়তে হবে। ফলে সে কামড়াতে পারবে না এবং প্রতিপক্ষ জয়যুক্ত হবে। তবে পরে কাদা পদ্ধতি বাতিল করে নতুন পদ্ধতি গ্রহন করা হল। সেটাও আমার মস্তিষ্কপূত বিখ্যাত "জুতা পদ্ধতি"। আমি সবাইকে জুতা পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে বুঝালাম। সবাই জুতা পদ্ধতি পছন্দ করলেও এর প্রয়োগ নিয়ে সবাই সন্দেহ প্রকাশ করতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত আমাকেই পদ্ধতিটা প্রয়োগ করে দেখাতে হলো। পদ্ধতিটা প্রয়োগের জন্য আমি পেছন থেকে মিস্টার ঘেউয়ের কাছে গেলাম এবং আমার একটা জুতা খুলে হাতে নিয়ে পেছনে লুকিয়ে রাখলাম। তারপর মিস্টার ঘেউ কে বললাম,"হেই, তুই নাকি খুব কামড়াইতে পারিস? দে দেখি কামড়............." মিস্টার ঘেউয়ের খুব একটা কামড়ানোর আগ্রহ দেখা গেল না, সে সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকাতে লাগলো। এমন সময় পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো,"আইজকা মিস্টার ঘেউয়ের মুড নাই, কামড়াইতো না আইজকা।" এই কথা শুনে ঘেউ বললো,"কিহ? আমার মুড নাই, দাড়া দেখাচ্ছি মজা" বলেই সে হা করে আমারে কামড়াতে আসলো, আর আমি চটপট দেরি না করে ঘেউয়ের মুখে জুতা পুরে দিলাম। জুতায় কামড় দিয়ে ঘেউ কিছুক্ষণ থু থু করলো, তরপর ঘ্যান ঘ্যান করতে করতে স্থান পরিত্যাগ করলো।
বলতে পারেন, ভাই জুতার রেজালা পাইলেন কই?
জুতার রেজালা বলেছি কারন পরবর্তিতে স্কুলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিলো যে, জুতার স্বাধ নাকি রেজালার মত। :D:D:D
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:২৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×