২৮ অক্টোবরের পর থেকে সারাদেশে দফায় দফায় অবরোধ চলছে। লোকজন মানছে না, তাই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর তাঁতীবাজারে, বনানীর কাকলি পুলিশ ফাঁড়ির সামনে, শ্যামলিতে, ঝিগাতলায়, মিরপুরে বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর আগেরদিন বাংলামোটর, মিরপুরসহ আরও অনেক জায়গায় আগুন দেওয়া হয়েছে। আজকেও একটু আগে খবর দেখলাম শাহজাদপুরে এক বাসে আগুন দেওয়া হলো।
এগুলো তো গেল কেবল রাজধানীর চিত্র। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অগ্নিসংযোগের বিষয়গুলো আর নাই বা বললাম। এই যে আগুন দেওয়া হচ্ছে, মোটামুটি বেশিরভাগ যাত্রীবাহী বাস। অনেক বাস আবার রাস্তায় দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে। নিরীহ সেসব বাসও রেহাই পাচ্ছে না অগ্নি-সন্ত্রাস থেকে। কয়েকদিন আগে খবরে দেখলাম এক লোক অবরোধে বিরক্ত হয়ে নিজের গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।
এসব বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখানো হলে সমর্থকের অভাব নেই। অনেকে মন্তব্যে দেখি বলে, এরা হরতাল-অবরোধে গাড়ি বাইরে বের করে কেন? এক চালক বললেন, গাড়ি বের না করলে খাব কী? উনার গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই খবরের মন্তব্যেও দেখলাম এক প্রজাতির ইতর হাসির রিয়েক্ট দিচ্ছে। বেচারা গাড়ি বের করেছে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য, অথচ গাড়িটা জ্বালিয়ে দিয়েছে। সে উপার্জন না করলে কি ভেটকানো ইতরেরা খাবার এনে দিত?
আচ্ছা, এরা কারা? এরা কি বাইরে বের হয় না? এদের কি কাজকর্ম নেই? এদের কি দূর-দূরান্তে যেতে হয় না? যদি বের হয়, যদি কাজকর্ম থাকে, যদি দূরে কোথাও যেতে হয়; এদের গাড়িতেই যদি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় আর পরিবারের সদস্যদের যদি এভাবে পুড়িয়ে মারা হয়; এদের অনুভূতি কেমন হবে?
কী যেন একটা লেখা পড়লাম সেদিন। কে যেন লিখল, বাপের টাকায়, পাপের টাকায় আর চেয়েচিন্তে খাওয়া লোকেরা অভাবের ঝাঁজ বোঝে না। আসলেই এরা নিজেরা উপার্জন করে খেলে কী করবে বা কী প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা বুঝেশুনে করত নিশ্চয়ই!
গতকাল এক ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে একটা কলেজের সামনে ব্যানার টানিয়েছে, সেখানে লেখা, রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আচ্ছা, আগুন জ্বালিয়ে, গাড়ি পুড়িয়ে কেমন ধরনের রাষ্ট্র মেরামত চলছে? ঢাকা ভার্সিটিতে অনেক ভবনে ছাত্রদল তালা লাগিয়ে দিয়েছিল, কোথায় যেন দেখলাম তালায় সুপার গ্লু লাগিয়ে দিয়েছে। এরা কি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাষ্ট্র মেরামত করবে? রাষ্ট্র চালাবে অশিক্ষিত গুন্ডা-বদমাশেরা?
আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে না বোঝা যাচ্ছে। যেভাবে খুশি তাদের চাপ দিয়ে নির্বাচন করুক। সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে কেন? যে মানুষটার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যমে অটোরিকশা, সেটা জ্বালিয়ে দিয়ে কী এমন রাষ্ট্র মেরামত করা হবে? জনগণ কি বিএনপির শাসনামল চোখে দেখেনি? তারা কী এমন রসগোল্লা যে জনগণ তাদের পছন্দ করে ক্ষমতায় বসাবে?
আমেরিকার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে, দেশ উদ্ধার করবে। ভালো কথা। আমজনতার জীবন হুমকিতে ফেলার অধিকার তো তাদের নেই। জনগণ কেন দুই দলের রেষারেষিতে পড়ে বেঘোরে প্রাণ হারাবে?
এসব হরতাল-অবরোধে জনগণের সায় কতটুকু? এমনিতে জিনিসপত্রের দামে জনজীবন দিশেহারা; তার ওপর এসব গণ্ডগোলে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। পারলে এসব নিয়ে আন্দোলন করে জনসমর্থন গড়ে তুলুক। জনগণকে ক্ষেপিয়ে কীভাবে ক্ষমতায় আসবে?
ছবি: যুগান্তর
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০৭