পরিবার মানেই ঝামেলা !
যখন মা বাবার ছায়ার নিচে থাকা হয় তখনও এবং যখন নিজের সংসার টাও তৈরি হয় তখনও আর তাছাড়া ঝামেলা বাড়াবাড় জন্যে তো অচেতন মন আছেই যা ক্ষনে ক্ষনে কষ্টের লেজ ধরে টানাটানি করে ! ঠিক এমনই যুক্তি দাঁড়া করায় তপন বার বার!
নিম্ন মধ্যবিত্ত্য ঘরের ছেলে তপন। কখনও ডাল আনতে পান্তাটা ফুরোয় নি তবে অভাব টাও পিছু ছাড়ে নি কোন দিন। স্বপ্নে বুক বাধা তার বহুকাল থেকে, বড় হবে, অনেক বড়! কিন্তু ছোট বেলায় তার নানি চলে যাবার পর থেকেই এলো মেলো পথ চলার শুরু তার। ঠিক যখন ছয় পার করে সাত ছুই ছুই! বাবা – মা দু’জনেই ঘর বাচানোর জন্য জীবিকার তাগিতে ছুটতো, তপন তখন পরে রইতো নানির কোলে। জন্মের পর থেকেই মা’র কোল টা তার জন্য ছিল স্বপ্ন রাজের সিংহাসন, ছুতেঁ গেলেও অপেক্ষা করা লাগতো । তার মা’র কাছ থেকেই শোনা, জন্মের তিন’মাস পর থেকেই তাকে তার মায়ের বুকের দুধ টুকু খেতে হয়েছে সারদিন অপেক্ষায় থাকার পর। সারাদিন অফিসের কাজ শেষ করে এসে তৃপ্তি ভরিয়ে দুধ পান করাতো তপনকে তার মা, তপন বোঝার পর এই গল্প শুনতো আর মনে মনে বলতো, তৃপ্তি তো ভরল একবেলা, সারাদিনের হিসাব কই গেলো ??
বয়স সাতে ছুতেঁ ছুতেঁ তার আপন জন, তার নানি, চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। চলে যাওয়ার কিছু দিন আগে তার মায়ের সাথে নানির ভীষন ঝগড়া হয়েছিলো, নানি রাগ করে চলে গিয়েছিলো তার বোনের বাসায়। মন ডুকরিয়ে উঠতো তার, মাকে কয়েক বার বলেওছিলো – আম্মু নানুর কাছে যাবো।
মা বার বার বলতো আজ না কাল, আজ না কাল।
একদিন সকালে তপন এর এক মামা তাদের বাসায় আসলো, তখন সে নানির কোল ছেড়ে অন্য কোলে আশ্রয়িত। ক্লাস ওয়ানের কোঠা সবে মাত্র পার করেছে সে, কি বা বোঝার আছে তার ! তবে সে সেদিন বুঝেছিলো তার নানির কিছু হয়েছে। মামা তাকে কোলে নিয়ে চলল তার মায়ের অফিসে।
সেদিন সে বুঝতে পারে নি আসলে কি হচ্ছিলো – রাস্তায় হাটতে হাটতে মা হঠাৎ তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছিলো তপনের চোখের ভাষা। রাস্তাতেই অঝর ধারায় ঝরে পরছিলো মায়ের কান্না।
চোখের সামনে পরে রয়েছিলো নানির নিথর দেহ। তপন বার বার দেখছিলো তার নানির সেই শ্যমলা মুখখানি যা সেদিন নূরানী উজ্জলতায় রুপ নিয়েছিলো।
তপন কিছুই বুঝে নি তখন, কি হারাচ্ছে সে, আর আগামীতেঁ কি হতে যাচ্ছে তার সাথে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১১