‘যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত’- অস্বীকার করা যায় না এ কথাটি। কিন্তু শিক্ষা যখন সার্বজনীন পর্যায়ে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, বা প্রক্রিয়া চলমান, তখন জাতি উন্নয়নের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি কোন বিষয়টিকে উন্নয়নের মূল লক্ষ্য করা প্রয়োজন? আমি মনে করি – ‘শ্রমিক’। কারণ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি এই ‘শ্রমিক’। তাই নিঃসঙ্কোচে কিন্তু বলাই যায়- ‘যে দেশের শ্রমিক অধিকার যত বেশি নিশ্চিত, সে দেশ তত বেশি উন্নত’।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখি, অর্থাৎ ‘শ্রমিক অধিকার’ অবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখি, তবে আমাদের অবস্থা হতাশাজনক ও নিষ্ঠুর। শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে খারাপ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
ITUC (International Trade Union Confederation), একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যারা বিশ্বব্যাপী শ্রমিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ২০০৬ সাল থেকে। পৃথিবীর ১৬১ টি দেশে ১৭৬ মিলিয়ন সদস্য রয়েছে সংগঠনটির।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা রীতি অনুসরণ করে – ‘ITUC Global Rights Index: The worst countries for workers’ নামে সমীক্ষা প্রকাশ করে আসছে। যেখানে সদস্য রাষ্ট্রের ‘শ্রমিক অধিকার’ অবস্থার বর্তমান চিত্র তুলে ধরা হয়।
২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘ITUC Global Rights Index: The worst countries for workers 2014’ শীর্ষক সমীক্ষায় ১৩৯টি দেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এই রিপোর্ট কে ঘিরেই আজকের লেখার অবতারণা।
২০১৪ সালের রিপোর্টে ৫টি মূল নির্ধারক বিষয়ের উপর গবেষণা করে শ্রমিক অধিকার ইনডেক্স প্রণয়ন করা হয়েছে।
নির্ধারক বিষয় গুলো হল—
(ক) নাগরিক স্বাধীনতা (Civil Liberties)
(খ)শ্রমিক সংগঠন তৈরী ও যোগদান (Right to establish or join Union)
(গ) ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকাণ্ড (Trade Union Activities)
(ঘ) দলগত বা দলবদ্ধ ভাবে দরকষাকষির অধিকার (Right to Collective Bargaining)
(ঙ) ‘অবরোধ’ করার অধিকার (Right to Strike)
উপরোক্ত ৫টি নির্ধারকের উপর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও গবেষণা- বিশ্লেষণের মাধ্যমে ৬টি ভিন্ন রেটিং দিয়ে বিভিন্ন দেশের শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতি দেখানো হয়েছে।
রেটিং গুলো হল—
১---- অনিয়মিত অধিকার হরণ
২---- পুনরায় অধিকার হরণ
৩---- নিয়মিত অধিকার হরণ
৪---- নিয়মতান্ত্রিক অধিকার হরণ
৫---- অধিকারের নিশ্চয়তা নেই
৫+--- আইনের শাসনের অনুপস্থিতির জন্য অধিকারের নিশ্চয়তা নেই।
২০১৪ সালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের রেটিং হল – ৫। অর্থাৎ ‘অধিকারের নিশ্চয়তা নেই’। একই রেটিং পাওয়া আরও কিছু উল্লেখযোগ্য দেশ হল—চীন, ভারত, মালয়শিয়া, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, তুরস্ক, আরব-আমিরাত সহ আরও কিছু দেশ।
বাংলাদেশ থেকে কিছুতা ভালো অবস্থা, অর্থাৎ ‘৪’ রেটিং পাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য দেশ হল— হাইতি, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, লেবানন, মালি, নেপাল, পাকিস্তান, সিয়েরা লিওন।
‘৩’ রেটিং পাওয়া দেশ- বেনিন, চাদ, জিবুতি, ইথিওপিয়া, ঘানা, নামিবিয়া, শ্রীলঙ্কা, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা।
খেয়াল করলে দেখা যায় – বাংলাদেশের অবস্থান খুবই খারাপের কাতারে। অথচ ‘অন্ধকার মহাদেশ’ খ্যাত আফ্রিকার অনেক দেশের ‘শ্রমিক অধিকার’ অবস্থা আমাদের চেয়ে ভালো। ক্ষেত্র বিশেষে তা খুবই ভালো। তাছাড়া যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাক, লেবানন, সিয়েরালিওনের শ্রমিকরাও আমাদের ‘গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাওয়া’ দেশের তুলনায় ভালো আছে। এমনকি জঙ্গী আক্রান্ত দেশ পাকিস্তানও আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে শ্রমিক অধিকারের ক্ষেত্রে।
‘শ্রমিক ভালো না থাকলে, দেশ ভালো থাকে না’- একথা শাসক- রাজনীতিবীদ ও বেনিয়াদের বোঝাবে কে...........?