দু সপ্তাহ ধরে আমরা কেউ আর কার সাথে দেখা করলাম না, শুধু ফোন কথা হত। আর মাঝে মাঝে আমি ওদের এলাকায় যেতাম, বারান্দা দিয়ে দেখে আসতাম। তারপর আসলো আমাদের জীবনের সেই ভয়ঙ্কর কাল রাত!!! যা আমাদের দুজনের জীবনকে পুরু তছনছ করে দিল। বিশেষ করে রেহার জীবনের সব আশা, ভরসা, সুখ কর্পূরের মত উড়ে গেল। আমাদের কপাল খারাপ ছিল, নইলে এমন হবে কেন, হয়ত আল্লাহ আমাদের দুজনের ভালবাসার পরীক্ষা নিচ্ছিল। ওই দিনের পর থেকে আমি অনুভব করতে থাকি, আমি রেহাকে আমার জীবনের চাইতে বেশি ভালবেসে ফেলেছি। যার কাছে মনিকার আবেগ বা ভালবাসার কোন দাম নাই। ওই দিন যা ঘটেছিল, তা জীবনে আমরা কেউ কক্ষনো ভুলবো না। সকালে রেহা ফোন করে জানাল, ওর আম্মু নানুবাড়ি গেছে। আর আব্বু কাজে গেছে। আমি যেন ওদের বাসায়ে এসে ওদের পিসিটা একটু ঠিক করে দিয়ে যাই। আমি ও রাফি মিলে ওদের বাসায়ে গেলাম। মজা করছি, কথা বলছি, রেহা বলল আব্বু এশার নামাজ পড়ে তারপর বাসায়ে ফিরবে। সুতুরাং সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত আমরা থাকতে পারব। এরপর চলে যেতে হবে। তখন আমরা আরাম করে পিসি ঠিক করে মুভি দেখতে বসলাম। হটাত মাগরিবের সময় দেখি রেহার আব্বু বাসায়ে ফিরছে। সর্বনাশ!!! এখন কই যাই !!! পরে সাথেসাথে রেহা বলল খাটের তলায় ঢুকতে। আমি ও রাফি কি আর করব, সাথেসাথে খাটের তলায় তেলাপোকাদের সাথে মোলাকাত করতে গেলাম। আমার ভয়ে কলিজা বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। এ কোন বিপদ, রেহার ভাই আমাদের একটা বালিশ দিল। আমরা খাটের তলায় বসে বসে এসএমএস করছি। আর ভাবছি, কক্ষন বের হয়ে পলটি দিব। রেহা বলল চিন্তা করোনা, আব্বু একটু পর এশার নামাজ পরতে মসজিদে যাবে, তখন তোমরা চলে যেও। ভাবলাম কি কপাল শেষ পর্যন্ত খাটের তলায় ঢুকতে হল। ওখানে নড়তেও পারিনা, চড়তেও পারিনা। তার উপর আমি লম্বা হওয়াতে কষ্ট আরও বেশি। যাইহোক এমন কপাল খারাপ, সেইদিন আঙ্কেলের শরীর খারাপ লাগছে, তাই উনি বাসায় নামাজ পরবেন। এটা শুনে মনে মনে প্রমাদ গুনতে শুরু করলাম। গুরুজনেরা একটা কথা বলছেন, পিপিলিকার ডানা গজায় মরনের তরে। ঠিক সেটাই ঘটেছিল সেইদিন। আসলেই কথাটা সত্যি। অন্তত সেইদিন বুঝলাম। নইলে এমন কপাল খারাপ হবে কেন? তারপর প্ল্যান করলাম, ১১ টার সময় আঙ্কেল যখন ঘুমুবেন, তখন আমরা বের হয়ে যাব। আপাতত খাটের তলায় আর ৩ ঘণ্টা থাকতে হবে, কিছু করার নাই। ১১ টা বাজামাত্র আমরা খাট থেকে বের হয়ে এলাম, রুমের দরজা বন্ধ করে জামা পরিস্কার করার জন্য জামা খুললাম, লাইট নিবানো ছিল, শুধু পিসি চালানো ছিল, মনিটরের আলোর কারনে ঘর পুরু অন্ধকার ছিল না। জামা পরিস্কার করে পড়লাম। এই দিক দিয়ে হটাত কি মনে করে রেহার আব্বু পানি খেতে উঠল, কি মনে করে দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে তাকাল, আমাদের দুজনের জামা খোলা অবস্থায় দেখে উনি উল্টাপাল্টা বুজে নিলেন। অবশ্যই উনি যা বুজছেন, ওই অবস্থায় আমি থাকলে, আমিও তাই ভাবতাম। এটাই স্বাভাবিক। উনি সাথেসাথে দরজা নক করলেন, রেহা বুজে ফেলল আমরা ধরা খেয়ে গেছি। তখন ও আমাদের বাঁচাবার চেষ্টা করলো, আল্লাহ!!! আমি কক্ষনো ভুলবো না, ওই সময় রেহার চেহারা। আঙ্কেল দরজা খোলার পর বললেন, ওদের বল এখান থেকে বের হয়ে যেতে। রাফি তো মহা খুশি, চামে চামে পার পেয়ে যাচ্ছে। ও সবার আগে বের হল, কিন্তু আমি পারছিলাম না, রেহাকে ছেড়ে যেতে। কারন আমি ভয় পাচ্ছিলাম, এরপর রেহার কি অবস্থা হবে ভেবে। যদিও রেহার সাথে আমার তখন ততোটা গভীর সম্পর্ক ছিল না, ইচ্ছা করলে আমিও রাফির মত সরে যেতে পারতাম। কিন্তু আমি জীবনে কখনও কারও সাথে বেইমানি করেনি। সুতুরাং ওইদিনের পরও করলাম না। আমি বের হবার আগে শুধু আমার হাত দিয়ে রেহার মাথায়ে একটু বুলিয়ে দিয়ে বললাম, চিন্তা কর না, আমি তোমার সাথে আছি। আর কিছু বলতে পারলাম না। বের হয়ে চলে আসলাম। কিন্তু খুব ইচ্ছা করছিল ওকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসি, কারন জানতাম এরপর ওর উপর কি ঝড় যাবে। তারপর রাফিকে সঙ্গে নিয়ে অতরাত্রে আর বাসায় গেলাম না। বাড্ডায় এক ফ্রেন্ড এর বাসায় গেলাম। ওই বাসায় গোসল করে রাত ২ টার সময় ফোন করে দেখি ফোন বন্ধ। আরও বেশি ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম মেরে ফেলল নাকি। পারলে আমি তখন আবার রওনা দিতাম, কিন্তু লাভ কি। তারপর নামাজ পরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলাম, সারারাত নামাজ পরে আল্লার কাছে দোয়া করলাম, আল্লাহ ওর যেন কোন ক্ষতি না হয়। অজোরে কাঁদলাম আল্লাহর কাছে। পরেরদিন সকালে নাস্তা খেয়ে রাফিকে নিয়ে বাসায়ে গেলাম। এরমধ্যে বেলা ১১ টার দিকে আঙ্কেল একটু বাইরে গেলেন, তখন ওরা পাশের বাসা থেকে আমাকে কল দিয়ে বলল, আপাতত চুপ হয়ে থাকতে। ওরা ভাল আছে। রেহার ফোন পুড়িয়ে ফেলছে, রেহার পিসি পুরু ভেঙ্গে ফেলছে। আর ওদের আম্মুকে খবর দিছে, দেখা যাক কি হয়। ওরা ভাল আছে শুনে মনে হল আমার কলিজাতে পানি আসলো। আমি বললাম চিন্তা না করতে, দুদিনের ভিতর তোমার জন্য একটা ফোন কিনছি, আর প্লিজ, তোমরা উল্টাপাল্টা কিছু কর না। আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। আমাদের মাঝে তখন মাত্র দেড় মাসের সম্পর্ক। অথচ আমি যেভাবে ওদের কথা দিলাম, সেটা অবিশ্বাস্য। কারন আমার চেয়ে রাফি ওদের পরিবারে অনেক বেশি আপন ছিল। রেহার আম্মু রাফিকে ভালভাবে চিনত, বিশ্বাস করত, পছন্দ করত। তাছাড়া রাফির সাথে ওদের অনেকদিনের চেনাজানা। সুতুরাং রাফির দরকার ছিল, তখন ওদের পাশাপাশি দাঁড়ানো, অন্তত আর কিছু না হোক মানবিকতার জন্য অন্তত সাহশ দিতে পারত। কিন্তু রাফি তার কিছু করলো না, সে নিজেকে সেফ করে সরে গেল, হয়ত ওটাই বুদ্ধিমানের মত কাজ ছিল। কিন্তু আমি পারলাম না। পারলাম না ওই মানুষটাকে ছেড়ে অন্য কিছু ভাবতে।
আগের গুলো এখানে
চলবে.................