ছয়
আজ ঈদ। চারিদিকে অনেক আনন্দ, বাচ্চারা খুশিতে মজা করছে, নামাজ পরে রেহাকে ফোন দিলাম, বললাম আজ বের হবে কিনা? বলল এখনও নিশ্চিত না, হয়ত দুপুরে বের হতে পারবে। আমি বললাম আমাকে কিছু খাওয়াবে না? বলল আব্বু বাসা থেকে বের হলে ওদের বাসায়ে যেতে। আমি রাজি হলাম। সেইদিন ওর আব্বু বাসা থেকে বের হওয়া মাত্র আমাকে কল দিল। আমি ২য় বারের মত ওদের বাসায়ে গেলাম। বুঝাতে পারবোনা, কেমন লাগছিল, জীবনে প্রথম কেউ একজন আমার পায়ে ছুয়ে সালাম করলো। জীবনে আমি কল্পনাও করিনি, ঈদ এ সে আমাকে এমন একটা গিফট দিবে। আসলেই আমরা ছিলাম অনেক অদ্ভুত। অনেক বেশি আগ্রাসী। খুব দ্রুত সব কিছু হচ্ছিল, খোদার এই লীলা বুঝতে পারছিলাম না, বুঝতে পেরেছিলাম, কিছুদিন পর। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছিলাম, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। যাইহোক নেহা আমাকে নিজ হাতে মুরগি ফ্রাই খাওয়াল। এরপর ওরা রেডি হয়ে আসলো, আমরা ৩ জন মিলে প্রথম বাইরে বেরুলাম। কই যাব বুঝতে পারছিলাম না। পরে একটা রিক্সা নিয়ে ৩ জন সানারপার যাই। ওখানে কিছুক্ষণ থেকে আবার রিক্সা করে ফিরে আসি। অনেক ভাল লেগেছিল ওইদিন। আমি আমার সাদা পাঞ্জাবী পরে গিয়াসিলাম, আর ও একটা অনেক সুন্দর জামা পরে গিয়াছিল। ওদের দুজনকে অনেক সুন্দর লাগছিল। রাস্তায় অনেক ছেলে শয়তানি করছিল, এটা আমার সহ্য হচ্ছিল না, কিন্তু কিছু করার নাই। আমি একা একটা ছেলে, সাথে দুইটা মেয়ে। যাইহোক একটু পর ফিরে আসলাম। বাসায়ে ফিরে রেহা বলল জীবনে এই প্রথম কোন ঈদ এ এতো মজা করলো, ও নাকি প্রতি ঈদ এ কান্না করত, কারন ওর কোন ভাল বন্ধু ছিল না বলে। জীবনে এই প্রথম কোন ঈদ, যা ওকে অনেক আনন্দ দিল। যাইহোক আমারা সারারাত কথা বললাম, সিদ্ধান্ত হল পরের দিন আমরা ঢাকার বাইরে যাব। আমাদের সাথে যাবে ইমতিয়াজ ভাই। ইমতিয়াজ ভাই সম্পর্কে আমার কাজিন হয়। আমার চেয়ে প্রায় ৬ বছরের বড়। সে গ্রামীন ফোনে জব করে। সেইদিন খুব সকালে ওরা রেডি হয়ে বাস স্ট্যান্ড চলে আসে। আমি প্রায় আধা ঘণ্টা লেট করে আসি, এতে ওরা অনেক রাগ করে, কিন্তু আমি চাইছিলাম জীবনে প্রথম ওদের নিয়ে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি, আর তাই রেহার জন্য ফুল খুঁজতে গিয়াছিলাম, ঈদ এর সময় ফুল পাইনি, কিন্তু বেশ দেরি হয়ে গিয়াছিল। আর যেহেতু ফুল পাইনি, তাই ওদের বলিনি কেন দেরি করছি। ইমতিয়াজ ভাই প্রায় ১ ঘণ্টা দেরি করে আসলো। ওরা রাগ করে চলে যেতে চাইল, শুধু আমার কথা ভেবে গেল না, পরে ভাইয়া আসার পর আমরা কুমিল্লা ময়নামতি বেড়াতে গিয়াছিলাম। প্রথম রেহাকে নিয়ে বাসে উঠলাম, বলে বোঝাতে পারবোনা কেমন লাগছিল সেইদিন। জীবনে বুঝতে পারলাম ভালবাসা কি জিনিস। রেহা আমার সাথে যেভাবে বসলো, সবাই ভাববে আমরা স্বামী–স্ত্রী। আমি আস্তে আস্তে রেহাকে বোঝার চেষ্টা করছি, ও আসলেই কি আমাকে ভালবাসে, নাকি মনিকার মত আবেগ নিয়ে পড়ে আছে। আর তাই আমি অনেক সতর্ক ছিলাম। আমি আবার আগেরমত ভুল করতে চাইলাম না। সেইদিন অনেক বৃষ্টি হল, আমরা সবাই ভিজে গিয়াছিলাম। যাইহোক অনেক মজা হল সেইদিন। সন্ধার আগে আমরা ফিরে এলাম। পরেরদিন রেহাকে নিয়ে আবার সানারপার বেড়াতে গিয়াছিলাম।জাস্ট শুধু রিক্সা দিয়ে যাই, আবার ফিরে আসি। কিন্তু এই কিছুসময় আমরা অনেক এঞ্জয় করতাম। রেহার সাথে বাইরে বেড়াতে খুব ভাল লাগত। এর পরেরদিন রেহা নানাবাড়ি নারায়ণগঞ্জ চলে গেল, তারপর শুধু ফোনে কথা হত। নানা বাড়ি থেকে আসার পর, ওকে নিয়ে একদিন ধানমণ্ডি লেক গেলাম। খুব ভাল লাগল। এর আগে ওর প্রথম ওর জন্মদিনের দিন এসেছিলাম। সারাদিন ওখানে বসে ছিলাম। এরপরের দিন রেহাকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটি গেলাম। রেহা অনেক ভাল ব্যাগ বানাতে পারত। শখ করে কাজ শিখেছিল। আমার সাথে সম্পর্কের আগে সে মার্কেটে এসব ব্যাগ বানিয়ে দিত। অনেক সুন্দর কষ্ট করে হাতে বানানো ক্রিস্টাল দিয়ে বানানো ব্যাগ। জীবনে প্রথম ওকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম, আমার খুব ইচ্ছা করছিল, কিছু কিনে দিই। কিন্তু সেইদিন আমার পকেট ফাঁকা ছিল, আর তাই কিছু না কিনে ফিরে এলাম। ওইদিন রেহার একটা জিনিস আমি পরীক্ষা করেছিলাম, যা সে জানত না। আমি অনেক হিসাব করে চলছিলাম, রেহা সেটা মানতে পারে কিনা দেখতে চাইছিলাম। ওর মন খারাপ করে ফেলেছিল, কিন্তু সহজে মেনে নিল। তখন আমি বুঝতে পারলাম, রেহা আমাকে অনেক ভালবাসে, আর তাই আমার সাথে অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ থেকে আমরা বাসায়ে ফিরে এলাম। এরপর ১ সপ্তাহ পর আবার ওদের বাসায়ে যাই, ওদের পিসি তে অনেকগুল মুভি ও গেম ভরে দিয়ে আসি।
আগের পর্ব গুলো দেখতে চাইলে
চলবে.................