আমার মা আগামী বৃহস্পতিবার সিলেট যাচ্ছেন , এর আগে কোনোদিন যাননি। উত্তেজনা উল্লেখ করা বাহুল্য।
মা মাজারে যাচ্ছেন। আমি বাংলাদেশ তীব্র-অত্যাচার বিশ্ববিদ্যালয় ( Bangladesh University of Extreme Torture , আমার বন্ধু সৌরভের দেয়া BUET এর এলাবোরেশন ) এ চান্স পাবার পর মানত করেছিলেন , মানত পূরণ করতে যাচ্ছেন। বাঁশডলা খাইতে খাইতে অবস্থা কাহিল , আর মা যাচ্ছেন শোকরানা আদায় করতে , হায় খোদা। খোদা যদি মার উপর Impressed হয়ে আমার বিদ্যার্জন (!!) কয়েক গুন বাড়িয়ে দেন , তাহলে আর দেখতে হবে না
আমি কোথাও যাবার আগে প্রথম ভেটোটা মার কাছ থেকে আসে ( দ্বিতীয়টা বাবা দেয় )। মার ধারনা আমি কোথাও গেলে সবার আগে পানিতে নামব ( এমনিতেও বুয়েটের ছেলেরা নাকি পানিতে নামলেই মরে )। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ হবার পরে আমি সাঁতার শিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওই সময়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিং পুলে এক ছেলে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে মারা যায় শুনে মা আর কোনো অবস্থাতেই যেতে দিলেন না । বললেন "বাবা তুই মরলে চোখের সামনে মর , দূরে গিয়া মরা লাগবে না ... ই: ই: ই: " ( মা কাঁদছেন )।
এবার একটু অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপার নিয়ে বলি ..........
আমি যে বাবা-মায়ের কি ধরনের আদরের তা হয়ত অনেকে অনুমান করতে পারছেন। একটা কথা বলি , আমার মনে হয় আসলে অনুমান ও করতে পারছেন না । বাবারটা তো আগেই বলেছি , এবার মায়েরটা বলি। আমি এখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়া বুড়া দামড়া , এখন ও মায়ের হাতে ভাত খাই। শখ করে মাঝেমাঝে না , সারা বছর । নিজের হাতে না খেতে খেতে এমন অবস্থা হয়েছে এখন ভাত মাখাতে গেলে অর্ধেক ভাত প্লেটের নীচে পরে যায় , হাতের তালু পর্যন্ত মেখে যায় , লবনের অনুমান ঠিকমতো দিতে পারিনা। একবার পহেলা বৈশাখে খাবার মুখে দিয়ে থু দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম , ফেলে দেবার পরে মনে পরল "আরে আমি তো পান্তাভাতে লবনই দেই নাই"।
এবার প্রসঙ্গে ফিরে আসি ..........
সিলেটে যাওয়া নিয়ে মার উৎকন্ঠার শেষ নেই। বাবা এমনিতেই মাকে ছাড়া থাকতে পারেন না , তার উপর আবার পুরো দু-দুটো দিন মা দূরে থাকবে , বেচারা পুরো মিইয়ে গেছেন। মা শুধু বাবাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছেন "বুঝলা ইমনাব্বা , ক্যামেরা নিয়া যাব। মাজারে আল্লা-বিল্লা কইরা ঘুরতে বাইর হব আর কুট্টুস্ কুট্টুস্ কইরা ছবি তুলব , হি: হি: হি: " তখন বাবার মুখের অবস্থা দেখার মতো হয়।
তবে মার যাওয়া নিয়ে আমি একধরনের টেনশন বোধ করছি। আমার কোথাও যাওয়া নিয়ে মার করা অহেতুক দু:চিন্তা গুলো এখন আর অহেতুক মনে হচ্ছে না। এতদূরে যাবে , রাস্তায় কি না কি হয় তা নিয়ে চিন্তা ও করতে পারছি না , এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। যারা আমার প্রথম পোস্টটা পড়েছিলেন তারা তারা জানেন যে আমি একটি বাবুকে সবসময় কল্পনা করি। আজ মনে হচ্ছে , আমার মেয়ে আমার সাথেই আছে , আমার মা হয়ে। মা আমাকে বারবার যে কারনে বাধা দিতেন সেই কারনে মাকে ও বাধা দিতে ইচ্ছে করছে। না আমাকে ২ দিন নিজের হাতে খেতে হবে তার জন্য না , অন্য কোনো কারনে আমার বুকের মানিকটাকে দূরে যেতে দেখতে ইচ্ছে করছে না।
আপনারা দোয়া করবেন যেন মা সুস্থ অবস্থায় কোনো বিপদ ছাড়াই ফিরে আসতে পারেন। ভ্রমন সংক্রান্ত কোনো টিপস থাকলে জানাতে কার্পন্য করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৫৮