somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম মালয়েশিয়া-০৩

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকে বলছেন সত্যচারী জিনিসটা কী বুঝলামনা। তাদের বুঝার জন্য সেই জিনিসের লিন্ক দিলাম
সত্যচারী



ভ্রমন সময় ২০১০-২০১১



রাত পোহানোর অনেক দেরী। এয়ারপোর্টের এমাথা-ওমাথা করে একটু বসলাম। ৩টা সুন্দরী পুলিশ হাটঁহাটিঁ করছে আমাদের দেশের র‌্যাবের পোশাকের মত তাদের ইউনিফর্ম, টাইট ফিট করে পরা। দেখতে বেশ আবেদনময়ী লাগছে। কিন্তু হায় সুন্দরীদের কোমরে দেখি ভয়াবহ মারণাস্ত্র ! কোমলতার সাথে নিষ্ঠুরতার মিশ্রন দেখে একটা টক ঢেঁকুর উঠলো মনের মাঝে। :-*

ধমাস করে আমার গা ঘেষে একটা হাফ মোটা কালো মেয়ে এসে বসলো, বসেই ল্যাপির ঝাপি খুললো। কালো হলেও রূপবতী অনেক। রূপবতী ফেইসবুকাচ্ছে। B-)

“সত্যচারী” বলেছিলেন KLIA থেকে কুয়ালালামপুর যেতে নতুনরা টেক্সি খুঁজে। ভাড়া বেশি। তাই বাসের সাথে দেখা করার জন্য লিফটে নিচে গেলাম। বাসের আগে ট্রেনের সাথে দেখা হল। KLIA Ekspres ছিমছাম ট্রেন এখান থেকে সোজা নিয়ে ফেলে দিবে কে এল সেন্ট্রাল রেল ষ্টেশনে। সময় লাগবে ২৮ মিনিট। ভাড়া বড় মানুষ ৩৫ এবং ছোট মানুষ ১৫ রিংগিত। চিন্তা করলাম বাসে সময় বেশি লাগতে পারে এমনিতেই অনেক ক্লান্ত, দ্রুত বিশ্রামের ব্যবস্হা করা দরকার। ট্রেনকে পছন্দ করলাম এবং টিকেট করেই ট্রেনে উঠে পড়লাম, ট্রেন দাঁড়ানোই ছিল। যাত্রী খুব কম। ২ মিনিটের মধ্যে ট্রেনের চাকা ঘুরা শুরু হলো।

ট্রেন চলছে খুব দ্রুত। বাইরের দৃশ্য যতটা না সুন্দর তার চেয়ে মনের ভেতর আনন্দের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বার বার। কোন টেনশন নেই, পিছুটান নেই, রুটিন মাফিক কাজ নেই, আমার ইচ্ছামত ঘুরবো, লাফাবো, নাচবো। এটাই বোধহয় প্রশান্তি, প্রশান্তি, প্রশান্তি----।

বাইরের গ্রামের দৃশ্য একসময় শহুরে দৃশ্যে পরিণত হল। ট্রেন থামলো, নামলাম। এলাম কে এল সেন্ট্রাল ষ্টেশন। বগলে ধরা গাইড অনুযায়ী এল আর টি ট্রেন দিয়ে এখন পাসার সেনি যাবো। হাটঁছি কিন্তু ডানে বামে সামনে পিছে উপরে নিচে কোথাও এল আর টি ৩টি অক্ষর চোখে পড়ছে না। চমৎকার ও বিশালদেহী ষ্টেশন। দেখলেই মনে হয় পাক-পবিত্র-পরিষ্কার। মনে পড়ে গেল কমলাপুরের কথা যেখানে প্রথমেই র্দূগন্ধ দিয়ে বরণ করা হয় :(( । এই ষ্টেশনের সাথে আরো কয়েকটি অন্য লাইনের ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে। বেশ খানিকটা হাঁটলাম তবুও চোখে ধরা দিল না। মুখের ভেতর যতটুকু থুথু ছিল ততটুকুই কোৎ করে গিলে ফেললাম। কারন একদিকে ফাঁপরে গেছি অন্যদিকে খাবারের দোকান। পেটে ক্ষিধা, খাবারের দোকান থেকে পেট ভুলানো খুশবু নাকে ঝাপটা দিচ্ছে। এক দোকানদারকে জিঙ্গেস করলাম এল আর টির কথা ব্যাটা আমার মতই এ বি সি ডি ইংরেজী জানা। মালয় ভাষায় যা বললো তার এক বিন্দুও মগজ পর্যন্ত পৌঁছালোনা। তবে হাতের ভাষা বুঝলাম। অনেক দূর হাঁটার পর পেলাম। ৩ জনের ৩ রিংগিত ট্রেন ভাড়া। আহারে এতো কাছে রাস্তা চিনলে হেঁটেই যেতে পারতাম। ৬৯ টাকা বাঁচতো।

মালয়েশিয়ার এল আর টি ট্রেন এবং ষ্টেশন আমার কাছে লন্ডনের ডি এল আর এর মতই মনে হল। এল আর টি প্রতিটি ষ্টেশনের নাম্বার আছে যেমন KJ14, KJ15 ইত্যাদি। পাসার সেনি KJ14. এই লাইনের ট্রেনের ষ্টেশন কোনটি ভূমিগর্ভে আবার কোনটি ভূমিত্বকে অবস্হিত। ট্রেনে উঠার ২/৩ মিনিটেই এলাম পাসার সেনি। ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে রোদ ঝলমল রাস্তায় উঠলাম। মাথার সামনের সার্চ লাইট ২টা ঘুরালাম হোটেলের জন্য। কিছুই ধরা পড়লোনা। ২/১ জনকে জিঙ্গেস করলাম, ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দিল।

গেলাম। বয়স্ক মহিলা বসে। রুম দেখলাম তেমন পছন্দ হলোনা। আরেকটা দেখালো একটু পছন্দ হলো। একদিকে গরমে অস্হির অন্যদিকে ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়...পছন্দ না করে উপায় আছে ? অন্য হোটেল খোঁজার শক্তি ও আগ্রহ কোনটাই অবশিষ্ট নেই। ৬০ রিংগিতে রফা হলো এসি রুম। এসি কে তারা বলে এয়ারকোন। সুটকেইস রেখে প্রাকৃতিক সেরে ১০ মিনিটেই আবার রাস্তায় নামলাম।

এবার হবে ভক্ষণ। বগলের গাইড ভুল করে রুমে রেখে এসেছি, সেজন্য ৩ জনে একে অন্যকে দোষাদোষী করলাম খুব দূর্বলভাবে। X( পেট আর পেটে নাই, কোথায় যেন চলে গেছে। চোখে পড়লো কিং ঝং নাকি কং ঝং নামে এক রেষ্টুরেন্ট, বাছ-বিচার করার সময় কই? ‘সত্যচারী’র গাইড অনুযায়ী একটি খাবারেরও নাম মনে করতে পারলাম না। চেয়ারে বসতেই মেনু দিল। দেখলাম এক জায়গায় লেখা নাসি। নাসি মানে ভাত -- পেয়েছিরে পেয়েছি। গাল ভরে অর্ডার দিলাম ‘নাসি’ কিন্তু ওয়েটারের টুকরা টাকরা কথা থেকে বুঝতে পারলাম নাসির সাথে কী দেবে জানতে চাচ্ছে? বললাম চিকেন। মাথা নেড়ে চলে গেল। কি বুজলো কে জানে? ভাবছি কোন অখাদ্য-কুখাদ্য না আনলেই বাঁচি।

একটু পরেই বাটি ভরতি তৈলাক্ত পানি নিয়ে এলো, বাটিতে কালো রঙের অমসৃন একটা গোটা ভাসছে, সাথে লবণদানীতে সস। আমার সঙ্গী ২ জনের চোখের দিকে অসহায়ভাবে তাকালাম তারা আগে থেকেই আমার দিকে চেয়ে আছে, চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে “ খাও তোমার নাসি, ঐ কুখাদ্যে আমরা নেই।” X(( X(( X((

৩য় পর্ব শেষ।


(ছবির সংখ্যা অনিবার্য কারনে কম :(( তাই কন্জুসের মত ছবি দিচ্ছি, পোস্টের খাতিরে ছবি ধার করবো ।

৪র্থ পর্ব এই বছরের কোন একদিন প্রকাশিত হবে, সে পর্যন্ত আমার সাথেই থাকুন)
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×