ব্যাপারটা ঘটছে। খুব ধীরে ধীরে ততধিক রোমান্টিক পরিবেশে। অবশ্য এটা ঘটারই কথা, খুব স্বাভাবিকভাবে এই ঘটনাটা ঘটার কথা তাদের মধ্যে। কারণ আমার ক্ষীণ সন্দেহ তাদের মধ্যে একটা বৈধ সম্পর্ক রয়েছে। অফিস থেকে মধ্য রাতে বাসায় ফিরে, মোটামুটি হিম হিম কুয়াশার মধ্যে খোলা ছাদে শীতের পূর্ণিমা গায়ে মেখে সন্দেহ মাখা উত্তেজনা নিয়ে এমন একটা দৃশ্য দেখতে থাকা- বিশেষ করে একজন ত্রিশ পেরিয়ে যাওয়া ব্যাচেলরের জন্য মোটেই সুখকর কোন বিষয় নয়। তবুও দেখছি। সোনালী পাতার ধোঁয়া ফুসফুসে ঢুকিয়ে, ছাদের কিনারার কোমর সমান কংক্রিটের নিরাপদ অবস্থানে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখতে ভালই লাগছে। একটা চনমনে উত্তেজনা বিরাজ করছে শরীরে। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে- কিছুটা যে কাঁপতে কাঁপতে নয় তা বলবো না, এই দৃশ্যটা দেখছি। চোখ কিভাবে দেখে, এবিষয়ে একটা বেশ বিখ্যাত তত্ত্ব রয়েছে। কোন বস্তু থেকে আলো এসে চোখে পড়লে তা আমরা দেখি। বস্তুর উৎস থেকে আলো চোখ অব্দি আসার সময় তা যদি কোন স্বচ্ছ পদার্থে বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে একটা বিভ্রম জন্মাতে পারে বিশেষ করে রাতের বেলা এবং একজন মানুষ বিভ্রান্ত ও সন্দেহ প্রবন হতে পারে। এই তত্ত্ব আবিষ্কার করে আমি খানিক বিরক্ত বোধ করলাম।
আমার ’ছ তলার ছাদ থেকে ওই বাড়িটা হাজার খানেক গজ দূরে, উত্তর দিকে। প্রতিবেশি হিসেবে প্রতিদিন আমি মানুষ দুটোর সাথে কথা বলতে পারতাম, হাই হ্যালো করতে পারতাম, কিন্ত সেটা হয়ে ওঠেনি। অচেনা অজানা বলেই আমি এত সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি তাদের জানালাটার দিকে। যেখান থেকে আলো এসে আমার চোখে পড়ছে এবং আমি বস্তুটিকে (দুটি পূর্ণবয়স্ক বস্তু যখন এক হয়ে যায় তখন একটিই মনে হয়) দেখতে পাচ্ছি। এতে অবশ্য আমার হিংসে, ক্ষোভ, উত্তেজনা ইত্যকার সবধরণের মানবিক অনুভূতিই হচ্ছে। কিন্তু আমি সন্দেহ মুক্ত হতে পারছি না, আদতে তাদের দুজনার মধ্যে সম্পর্কের ধরণটি কী। যাইহোক, আমি দেখছি। হাল্কা হাল্কা শীতে কাঁপছি। আমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যে উষ্ণ হয়ে উঠছে না এটা হলফ করে বলতে পারছি না। নাটকের শেষেই যাবনিকা পড়ে, এখানেও তাই হলো। জানালার ভারি পর্দাগুলো টেনে যাবনিকা ফেলা হলো। আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে সন্দেহপ্রবণ উত্তেজনায় তাকিয়ে রইলাম আরো কিছুক্ষণ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৪৮