ইংরেজরা যখন ভারতে ইস্কুল প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে তখনই মোটামুটি আমাদের আধুনিকতার বাতাবরন শুরু হয়ে যায়। আগেই বলেছি, এখানকার এলিট শ্রেণী-রাজা, জমিদার, ভূস্বামী এরা-রাজশক্তির জীবন চর্চার একটা ব্যাপক অংশ গ্রহণ করে এবং চর্চা করতে শুরু করে। এর একটা প্রভাব সাধারণ মানুষের উপরও পড়তে শুরু করে।
কাল হয়ে দাঁড়ায় এইসব নব্য ধনীদের প্রভাব। তারা চাকুরী করে তখন বাবুউপাধীতে ভূষিত হয়েছে। তাই তাদের মধ্যে একটা আলাদা চেকনাই এসেছে। এর প্রবাহ লক্ষ করা যায় আঠারো উনিশ শতকের ভারতীয় সমাজে। (উৎসাহী পাঠক দেখতে পারেন-ভারতীয় মধ্যযুগের ইতিহাস বিষয়ক বইগুলো)।
ধীরে ধীরে শিক্ষিতের হার বাড়তে থাকে। এবং তারা ছড়িয়ে পড়তে থাকে সমাজের নানন স্তরে। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত এই শ্রেণীর একটা অংশের আচরণে, জীবনের যাপান প্রক্রিয়ায় সাহেবীআনা লক্ষ করা যায়। এবং সামাজিক স্টাটাস মেইন্টেন করার জন্য এটা তারা ছাড়েও না। বরং আকড়ে ধরে আরও গভীর ভাবে।
ইংরেজরা এই সময়টাতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, রাজনৈতিক ভাবে আমাদের যা শিখিয়েছে সেটাকেই আমরা প্রায় বিনা প্রশ্নে মেনে নিয়েছি। শিক্ষিতদের একটা অংশ ওই সময় বিলেত থেকে ফিরে এসেছে। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার ফলে একটা নতুন ধরণের অভ্যাস তারা বয়ে এনেছে। এই অভ্যাসটার মধ্যে অন্যতম ছিল মদ্যপান, ব্যাভিচার, পোষাকের নতুনত্ব এবং নিউক্লিয়ার পরিবারের ধারনা। অথচ একটা যৌথ পরিবারেই সে বড় হয়েছে। নতুন গড়ে ওঠা অভ্যাসগুলি জীবন থেকে ঝেরে ফেলা ছিল তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সুতরাং সেগুলির একটা ভারতীয় সংস্করণ চালু হয়ে যায় অচিরেই। এবং পরবর্তী প্রজন্মের একটা অংশও এটাতে আকৃষ্ট হয়ে যায়। এই বিষয়টা খুব বেশি শুরু হয় উনিশ শতক থেকে।
উনিশ শতকের বুদ্ধিজীবীরা এটার তেমন কোন প্রতিকার করতে পারেন নি। অথচ এই সময়েরই একটা অংশে স্বদেশী আন্দোলন হয় সারা ভারত জুরে। (ক্রমশ)