somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবী না দানবী?

১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুগে যুগে পৌরাণিক ইতিহাসের নানা কাহিনীতে আমরা অনেক দেবতার সন্ধান পাই। আবার এ নিয়ে রাক্ষস আর দানব-দানবীর ইতিহাসও নেহাতই কম নয়। স্ফিংস তেমনি এক পৌরাণিক দানবী। প্রাচীন মিসর এবং গ্রিক পুরাণ থেকে এর উদ্ভব। পৌরাণিক বর্ণনা অনুযায়ী স্ফিংস হচ্ছে একটি সিংহ, যার মাথা মানবীর। এর ব্যতিক্রম বর্ণনাও রয়েছে কোথাও কোথাও। তবে মূল বক্তব্য এটিই। এখনো প্রাচীন বিভিন্ন নিদর্শনে এই দানবীর অস্তিত্বের প্রমাণ মিলে। মিসরের বিখ্যাত স্ফিংসের পিরামিড যার উজ্জ্বল উদাহরণ।



মিসরের বিখ্যাত পিরামিড গ্রেট স্ফিংসের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মানুষের মাথা আর সিংহের শরীরের আদলে গড়া এই পিরামিড বিশ্বের বিস্ময় জাগানিয়া স্থাপত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর বৃহত্তম ও বিখ্যাত স্ফিংস ভাস্কর্য মিসরের নীলনদের তীরে গিজা মালভূমিতে অবস্থিত। মনে করা হয়, সে স্ফিংসের চেহারা রাজা ফারাহ খাফরা অথবা সম্ভবত তার ছেলের। এ কথা কমবেশি সবার জানা থাকলেও অনেকেই জানে না এই স্ফিংস আসলে কি?

গ্রিক পুরাণ মতে, স্ফিংস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের থিবস নগরীর রক্ষক। নগরীতে প্রবেশকারী সব আগন্তুককে ধাঁধার জটিল জালে বন্দী করার কৌশল ছিল স্ফিংসের একচেটিয়া রণনীতি। সেসব জটিল প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না কোনো মানুষের। ধাঁধার সমাধান না করতে পারলে থিবস-এ প্রবেশ দূরে থাক উপরন্তু প্রাণও খোয়া যেত। উত্তর দিতে অপারগ সেসব হতভাগ্য মানুষকে বধ করে উদরপূর্তি হতো স্ফিংসের। আর এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ইডিপাস। স্ফিংস এই গ্রিক বীরকে প্রশ্ন করেন: কোন সেই জন্তু যে সকালে চতুষ্পদ, মধ্যাহ্নে দ্বিপদ আর সন্ধ্যায় তিন পদের সাহায্যে চলে? প্রত্যুত্তরে ইডিপাস জানান, তার নাম মানুষ। শৈশবে সে চার হাত-পায়ের সাহায্যে হামাগুঁড়ি দেয়, যৌবনে দু'পায়ের ওপর ঋজু হয়ে চলে আবার বার্ধক্যে হাতের লাঠির ওপর ভর করে হাঁটে। কথিত আছে, এই উত্তর শোনার পরই ধ্বংস হয়ে যায় স্ফিংস ও তার সঙ্গের বিভীষিকা।

কথিত আছে স্ফিংস উঁচু থেকে পাথরে আছড়ে পড়ে মারা যায়। আবার অন্য কাহিনী মতে, সে নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলে। ভয়ঙ্কর এ দানবীর নাম স্ফিংস। যার শরীরের মাথার দিকটা মানবীর মতো আর শরীরের বাকি অংশ সিংহের মতো। তবে এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকে আবার একে মতভেদ না বলে প্রকারভেদ বলার পক্ষপাতী। নানা পৌরাণিক কাহিনী ঘেঁটে দানবী স্ফিংসের তিনটি নাম এবং চেহারা খুঁজে পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে 'অ্যান্ড্রোস্ফিংস' (Androsphinx)। এ ধরনের স্ফিংসের দেহ সিংহের, মাথা মানবীর। অধিকাংশ বর্ণনায় এ ধরনের স্ফিংসের কথাই জানা গেছে। আরেকটি হচ্ছে ক্রায়োস্ফিংস (Criosphinx)। এ ধরনের স্ফিংসের দেহ সিংহের, মাথা ভেড়ার। শেষটি হচ্ছে হেইরোকোস্ফিংস (Hierocosphinx)। যেটির দেহ সিংহের আর মাথাটি হচ্ছে বাজপাখির।

পুরাতাত্তি্বকরা অবশ্য এসব কাহিনীকে রূপক আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, আসলে এর পরই অবসান হয় আদিম উপাসনা রীতির। গ্রিসে সূচনা হয় পরবর্তী যুগের অলিম্পিয়ান দেবদেবীর পূজা অর্চনার প্রথা।

খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দীতে স্ফিংস চিত্রশিল্পী এবং ভাস্করশিল্পীদের কাছে প্রেমের প্রতীক হিসেবে ধরা দেয়। গ্রিক ও মিসরীয় পৌরাণিক কাহিনীতে ভিন্ন ভিন্ন স্ফিংসের উল্লেখ পাওয়া যায়। গ্রিকরা অবশ্য স্ফিংসের দেহে নারীর সৌষ্ঠব প্রয়োগ করেছিলেন। গ্রিসে স্ফিংসের পরিচয় ধ্বংস ও দুর্ভাগ্যের বাহক এক দানবী হিসেবে। পৃথিবীর বৃহত্তম স্ফিংস ভাস্কর্যটির নির্মাতা মনে করা হয় রাজা ফারাও খাফরাকে। রাজা ফারাও খাফরা তার রাজবংশের চতুর্থ রাজা ছিলেন (২৭২৩-২৫৬৩ BC)। এ স্ফিংস ভাস্কর্যকে বলা হয় Khepri-Re-Atum, আরবি নাম Abual Hoi, যা অনুবাদ করলে হয় 'ফাদার অব টেরর' (Father of terror)। তবে গ্রিক নাম স্ফিংসই প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। তবে গ্রিক পুরাণের স্ফিংস এবং মিসরীয় স্ফিংসের মধ্যে পার্থক্যের কথা না বললেই নয়। মিসরে স্ফিংসকে মানব হিসেবে দেখালেও গ্রিক পুরাণে এটা মানবী। গ্রিক কবি হেসিউডের বর্ণনা থেকে জানা যায়, এই স্ফিংস হচ্ছেন ইচিদনা এবং অথ্রুসের কন্যা। আর অন্য মতে তাইফুন এবং ইচিদনার কন্যা। এখানেও একে ভয়ঙ্কর দানবী হিসেবেই পরিচিত করা হয়েছে।

যত যাই হোক না কেন, কল্পনা কিংবা পুরাণের এই দানবী আজো শত শত মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
সুত্র:Click This Link target='_blank' > http://digitalvillagebd.
রণক ইকরাম
মুলসুত্র:http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=News&pub_no=351&cat_id=3&menu_id=16&news_type_id=1&index=1
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×