প্রশ্ন- নারীর চাকরির উদ্দেশ্য কী? বা নারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয় কেনো?
উত্তর- কেন বসদের মনোরঞ্জনের জন্য! বসদের আকর্ষন করার জন্য! বসদের খুশি রাখার জন্য! নারীদের আর কী কাজ সেখানে!
প্রতিক্রিয়া- কী অসভ্য কথাবার্তা?! নারীদের আপনারা কী মনে করেন? !আপনাদের এসব বাজেকথার উদ্দেশ্য হলো নারীদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখা! নারীদের অপমান করা ইত্যাদি-
ওপরের কথাবার্তাগুলো পড়লে কী মনে হয়না কাঠমোল্লা টাইপের কেউ নারীদের চাকরি নিয়ে ওই মনোভাব পোষন করে?!
হ্যাঁ, তাইতো মনে হচ্ছে! মোল্লারাতো সব সময় ওই রকমই! তাদের কাজই নারীর অগ্রযাত্রায় বাঁধা সৃষ্টি করা। ওই ধরনের ফালতু কথাবার্তা মাধ্যমে মোল্লারা চায় নারীদের সেই মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে! এই ধরনের মনোভাব যারা পোষন করে তাদেরকে আর যাহোক নারী অধিকারপন্থী বলা যায় না! নারীর চাকরী শুধু পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্যই- এধরনের বাজেকথা কিভাবে বলা সম্য়ভব হয়? কি অসভ্য ও বর্বর তারা!
হুমম... আসলেই তো অসভ্য ও বর্বর! কিন্তু এবার যারা নারীর ব্যাপারে ওই ধরনের মন্তব্য করেছে তারা কিন্তু কাঠমোল্লা নয়! মোল্লারা কখনোই ওই বাজে ধরনের মন্তব্য করেনি। এসব কথা বলেছে পশ্চিমের তারাই, যারা আমাদের অগ্রপথিক-পথপ্রদর্শক। যাদের প্রেসক্রিপশন আমরা চোখ মুদে হজম করি, সেই পশ্চিমারাই জরিপটি সম্পন্ন করেছে সুশীলদের মতামতের ভিত্তিতে। আর তা এদেশেও প্রকাশ করেছে এদেশের সুশীল, আধুনিক, প্রগতিশীল, নারী অধিকারপন্থী আমাদের মিডিয়া!
নারীদের চাকরি নিয়ে এদেশের সেরা দুই মিডিয়া একই দিন যথাক্রমে 'অভিসার থেকে অফিসে' ' শিরোনামে এবং 'বসকে আকর্ষণে যে রঙে ঠোঁট রাঙাবেন!' ' শিরোনামে আপত্তিকর দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। মোটামুটি রিপোর্ট যা বলতে চেয়েছে তা হলো-
১/ রঙিন ঠোঁটের হাসিতে যদি একবার বসের হৃদয় নাড়া দিতে পারেন, তবে পদোন্নতির পথ পরিষ্কার! লাল ঠোঁটের অভিব্যক্তি কেবল অভিসারের দিন কিংবা নৈশনিমন্ত্রণের জন্য তুলে রাখার দিন শেষ।
২/ গাঢ় ও আবেদনময়ী মেকআপ মেখে বসদের প্রতি দুর্বলতার ভান করে আচরণ করলে কর্মস্থলে পদোন্নতির পথ গতিশীল হয়।
৩/ বসদের মনপটানোর জন্য ছোট সাইজের ব্লাউজ ও হাইহিলের জুতাপরা চাই।
৪/ বসের সঙ্গে ‘ফ্লার্ট’ করা বা বসকে আকৃষ্ট করতে পারাটা চাকরিতে উন্নতির একটা অন্যতম চাবিকাঠি।
অর্থাৎ নারীর অন্য কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই, ছোটোখাটো, খোলামেলা ড্রেস পরে, উগ্র মেকআপ নিয়ে, ঠোঁট লাল করে, বসের সাথে ফ্লার্ট করে, বসকে আকৃষ্ট করতে পারলেই নারীরা সফল! এসব করবেন তো জিতবেন, না হলে হারবেন! বসরা নারীকর্মীর কাছে এসবই চায়, এসব যে নারীরা দিতে পারবে তারাই শুধু এগিয়ে যাবে! অফিসে নারীনিয়োগ দেয়া হয় এসবের জন্যেই!
এসব কথা কিন্তু কোন কাঠমোল্লার বা আমার নয়, গ্রাম্য কোন অশিক্ষিত মানুষের নয়! এসব পরামর্শ আমাদের অনুসরণীয় উচ্চমার্গীয় সুশীলদের! যারা নারী অধিকার নিয়ে তোলপাড় করে সারাবিশ্ব আর ইসলামকে গালাগাল করে! ওদের নারী অধিকারের শ্লোগানের আসল উদ্দেশ্য কী, এই সুশীলরা ঠিক কোনপথে নারীকে তথাকথিত প্রগতির পথে নিয়ে যেতে চায়, তা একেবারে তারা উদাহরণসহ বলে দিলো! এখন আমাদের তথাকথিত সুশীলদের এসব অনুসরণ করাই তো দরকার, কী বলেন?
হেফাজতে ইসলামের মাওলানা সফি নারীকে তেঁতুলের সাথে তুলনার পর তথাকথিত সুশীলদের কী চিৎকার, গালাগালি! হায়, নারীকে তেঁতুল বলেছে মোল্লারা! বলেছিলাম না ওরা নারী অধিকারের পরিপন্থী! মোল্লাদের দৃষ্টি নারীযোগ্যতার দিকে নয়, ওদের দৃষ্টি শুধু নারীর শরীরের দিকে ইত্যাদি ইত্যাদি! এবার কিন্তু আমাদের সেই সুশীলরা এই রিপোর্ট নিয়ে চিল্লাবে না যেহেতু তাদেরই দৃষ্টি নারীদেহেরই প্রতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের শুধু যৌনজীব বা যৌনদাসী করে রাখাই। কারণ ওরা আমদের বিদেশী প্রভু, ইসলামের শত্রু আমাদের মতো। শুধু শফি সাহেব এমনটি বললেই দোষ, তাকে মারো কাটো ধরো আরকি?
অথচ শফি সাহেবের কথার সাথে সুর মিলিয়ে লণ্ডনের ডেইলি মেইল পত্রিকাও কি একই কথা বলেনি মিষ্টিভাষায়? অথচ তাতে কেউ টুশব্দটি করেনি! শফি সাহেব নারীদের সতর্ক করেছিল লম্পটদের যে লালসার ব্যাপারে যদিও তার ভাষা ছিলো আপত্তিকর মাত্র, এই যা ফারাক। অথচ সেই তেতুলতত্ত্বের সাথে মিষ্টিভাষায় কি এবার আমাদের মিডিয়াও সুর মিলালো না, তা না হলে প্রতিবাদ করলো কী কেউ?
তাহলে নারীকে আসলে কে তেঁতুল বানাতে চায়? মোল্লারা না সুশীলরা? তথাকথিত নারীবাদীদের ঠিক এসব নষ্ট ও অশ্লীল লালসা থেকেই তো নারীদের মুক্ত রাখতে চেয়েছিল শফি সাহেবরা একটু আপত্তিকর ভাষায় এই যা। যারা নারীদের সম্মান দিতে চাইলো তারা হয়ে গেলো অপরাধী আর যারা নারীদের নানারঙ্গে, আঙ্গিকে, স্টাইলে, কৌশলে ভোগ করতে চায়, তারাই এখন আমাদের সুশীলদের গুরু তথাকথিত সুশীল!
এসবের মাধ্যমে সুশীলরা কি আবারও প্রকাশ করে দিলো না যে, ওদের দৃষ্টিতে নারী আসলে পণ্যই, ওই পণ্যেকে যার সুযোগ আছে, ক্ষমতা আছে সে তার ইচ্ছেমতো ব্যবহার করবে, নারী শরীরসর্বস্ব জীবমাত্র, নারীর কাজই নষ্টদের লালসা পুরণ করা। নারীর আর কোন যোগ্যতা নেই, কাজ নেই, নারীর একমাত্র যোগ্যতা- শরীর ও তা কতবেশি আকর্ষনীয়ভাবে পুরুষের কাছে তুলে ধরতে পারা! যে বেশি আকর্ষনীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারবে, যত্রতত্র বিলিয়ে দিতে পারবে, সেই নারীই সফল! এসবই কি ওরা বলতে চায়নি ওই রিপোর্টগুলোর মাধ্যমে? তাহলে কে বেশী খারাপ শফি নাকি আমাদের আঁতেলরা?
তাহলে নারীদের অসম্মানিত করলো কে, তেঁতুল বানালো কে, মাওলানা সফিরা না সুশীলরা? হে নারী তোমরা কি বোঝো-তোমরা নষ্ট পুরুষদের দাবার ঘুটি, যারা তোমাদের শুধুই দেহকে চেনে? আরেকটি কথা, মাওলানা শফি যা বলেছেন-পাশ্চাত্যের নারীরা কিন্তু তা-ই ভাবে নিজেদের অর্থাৎ তারা তেঁতুলের মতোই লোভ উদ্রেককারিনী হিসেবে কাজ করতে ভালোবাসে। আর ইসলামের কথাও তাই যে, নারীরা পুরুষকে আকর্ষিত করে বলে তাদের উভয়ের আলাদা কর্মক্ষেত্র হওয়া চাই যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে। সে তুলনায় আমাদের দেশের নারী অনেক ভালো এবং উদার যারা নিজেকে বিলিয়ে দিতে যায়না বসদের কাছে (কিছু কলগার্ল ছাড়া)।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০৭