ছোট বেলায় বাবাকে খুব ভয় করতাম, মা কেও ভয় পেতাম তবে বাবাকে একটু বেশি। পাঁচ ছেলেমেয়ের সংসার চালাতে বাবা সবসময়ই টেনশনে থাকতেন তাই ছেলেমেয়েদের সোহাগ কারার মোড তার কমই থাকতো। তাই বাবার সাথে আমার সুখ স্মৃতি খুবই কম।
যাই হোক, একবার আমার পায়ের সেন্ডেল বেশ পুরাতন হয়ে কয়েকবার মুচির কাছ থেকে ঘুরে আসলো। স্কুলেও যেহেতু সেন্ডেল বা চটি পরে যেতাম তাই বিশেষ বিবেচনায় সেবার বাবা আমাকে কিনে দিলেন বাটা কম্পানির ১২০ বা ১৫০ টাকা দিয়ে এক জোড়া চটি। (তখনকার সময়ে দামটা একটু বেশিই ছিলো)
মা এর মাধ্যমে বারবার সাবধান করে দেওয়া হলো যাতে খেলতে গিয়ে হারিয়ে না ফেলি বা সেন্ডেল সহ ফুটবল খেলে ছিরে না ফেলি বা পানিতে না ভিজাই ইত্যাদি ইত্যাদি....
জুতার বয়স তখন এক সপ্তাহের মত। আমের সিজন। বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে যে কবরখানা আমগাছ আছে জুতা গাছের গোড়ায় রেখে আমি উঠলাম আম গাছে। নিচে জুতার কথা খেয়ালই নেই। বাবা তখন সে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। গাছের গোড়ায় জুতা দেখেই চিনতে পারলেন গাছে কে। আমি তখন মনের সুখে এই ডাল ঐ ডাল করে আম খুঁজছি।
বাবা আমাকে একটা শিক্ষা দিবার জন্য চুপি চুপি জুতা জোড়া বাড়িতে নিয়ে মা কে বললেন “ তোমার ছেলেকে এত দামি জুতা কিনে দিয়ে কি লাভ, এই ভাবেই তো হারিয়ে আসবে ” বাবার হাতে জুতা দেখে মা আর মুখে কোনো উত্তর খুঁজে পেলেন না।
এ দিকে গাছ থেকে নেমে জুতা জায়গা মত না পেয়ে মাথাটা চক্কর মারলো, এত পই পই করে বলে দিয়েছিলো জুতার দিকে খেয়াল রাখতে আর আমি ৭ দিনের মাথায় হারিয়ে ফেললাম। আজ বুঝি আমার রাতের ভাত বন্ধ, আর কি কি হতে পারে মনে মনে ভাবছি আর পাগলের মত জুতা খুঁজছি। কিন্তু না জুতা তো পেলামই না আশে পাশে কাউকে জিজ্ঞাসা করার মতও পেলাম না।
কি করা যায় ভেবে ঠিক করলাম, প্রথমে নিন্ম আদালতে (মা এর কাছে) হাজিরা দেই তার পর হাইকোটে যা হবার হবে। জুতার টেনশনে লাল কান আর শুকনো মুখ দেখে নিন্ম আদালত অভয় দিয়ে বললেন জুতা পাওয়া গেছে, সেই সাথে ভবিষতে কেনো জুতার বেপারে আরো সাবধান হবো না সেই বিষয়ে রুল জারি করলেন । মাথা অনেকটা হালকা অনুভব করলাম যাক জুতা যেহেতু পাওয়া গেছে হাইকোটে ফাঁসি হবে না, বড় জোর কয়েক ঘন্টা সশ্রম কারাদন্ড হবে। কিন্তু সেবার কপাল আমার বেশ ভালো। হইকোটের বিচারক অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় আমর কেসটা দু এক দিনে এমনি এমনি খারিজ হয়ে গেলো হিঃ হিঃ