প্রায় বছর দশেক আগের কথা। তখন আমি গার্মেন্টস এ নতুন চাকরিতে ঢুকেছি। বেতন ৫ হাজারের মত। এক হাজার বাড়িতে দেই, দুই হাজার যায় খাওয়া খরচ আর বাকি দুই দিয়ে সারা মাস কোন রকম চলি।
এর ভিতরে এলো আমের সিজন। গার্মেন্টস চাকরিতে ছুটি নাই তাই বাড়িতে গিয়ে আম খাওয়া হলো না। কিনে যে খাবো তাও বাজেটে মিলাতে পারি না। এ দিকে সিজেন প্রায় শেষ হয়ে এলো কিন্তু এখনও আমার আম খাওয়া হলো না। একদিন সাহস করে বিকাল বেলা গেলাম বাজারে। গিয়ে দেখি দেশী আমের সিজেন শেষ শুধু আমদানি করা রাজশাহীর আম আছে। এই আমগুলোর দাম যে বেশি হবে যানতাম। একটা দোকানে গিয়ে বললাম ভাই আম কত করে? দোকানদার বললো ৬০ বা ৬৫ টাকা কেজি। আমি বললাম কেজি টেজি বুঝি না, এই আমটার দাম কত হবে এ কথা বলে একটি সুন্দর সাইজের আম তার হতে তুলে দিলাম।
দোকানদার আমটি ওজন করে বললো ৩৫ টাকা। ৩৫ টাকা!... শুনে আমার আম খাওয়ার ইচ্ছা অনেকটা চলে গেলো। মনে পড়ে গেলো বাড়ি থাকতে কতো আম প্রতিদিন গাছ থেকে পেড়ে খেতাম, আর এখানে একটি আমের দাম ৩৫ টাকা!
যাই হোক সিজেন ফল কমপক্ষে তো একটা খাওয়া দরকার। মনে মনে হিসাব করে বললাম ঠিক আছে ৩০ টাকায় দেন। আমাকে অবাক করে দোকানদার বললো না ৩০ টাকায় দেওয়া যাবে না। শুনে আমার আম খাওয়ার ইচ্ছা আবার নিচে নেমে গেলো। দোকান থেকে চলে আসবো ভাবছি কিন্তু মনটা যে আসতে চাচ্ছে না। যাই হোক মনে মনে হিসাব করে বললাম যাই হোক একবারই তো! এই সিজেনে তো আর আম কানতে আসবো না, কিনেই ফেলি। অবশেষে দামাদামি করে ৩২ টাকায় আমটি কিনলাম।
কিনার পর ভাবলাম না আম নিয়ে রুমে যাও যাবে না। কারন রুমে থাকি তিন জন। তাদের না দিয়ে একা একাও খেতে পারবো না আবার এত কষ্টের দামী আম মাত্র ১/৩ ভাগ পাবো এতেও মনটা সায় দিচ্ছিলো না। ঠিক করলাম অন্য কোথাও বসে আমটা একা একা খাবো। গেলাম বাজারের পিছনে। একটু এগুতেই দেখি একটা টিউবওয়েল। টিউবওয়েলের পানিতে আমটাকে ভালো কারে ধুলাম। আর একটু এগুতেই দেখলাম একটি পুকুর। সেই পুকুর ঘাটে বসে মনের মাধুরী মিশিয়ে আম খাওয়া শুরু করলাম। আসে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কয়েকজন রাজমিস্ত্রি কাজ করছে। মনে মনে বললাম তারা তো আর জানে না যে – আমি কলিগদের ভাগ না দিয়ে এখানে একা একা আম খাচ্ছি (অপরাধী মনের ভাবনা)।
আল্লাহর রহমতে আমটি বেশ মিষ্টি ছিলো। আম খেয়ে তৃপ্ত হয়ে মনটাকে বললাম “ জিহ্বাটা তে বান দে, এই সিজনে আর আম খাইতে চাইস ন্য ”