কম বেশি সবারই ভুল হয়। সেই ভুল যখন এতটাই হয়ে পরে যে সেটা ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয় তখন সেটা নিয়ে আলোচনা হবে এমনটাই স্বাভাবিক। আসুন দেখি ইতিহাসের সেরা কিছু ভুল এবং তার কারন জানি।
১১৭ বছর ধরে নির্মান করা হয় ইতালির বিখ্যাত পিসার হেলানো মিনার। আর সেইটা হেলতে সময় নেয় মাত্র ১০ বছর। আজব ব্যাপার হল ২০০৮ সালে এসে প্রায় শখানেক ইঞ্জিনিয়ার এর সমস্টিগত প্রচেস্টায় এইটার হেলানো বন্ধ হয় এবং ইঞ্জিনিয়াররা ঘোষনা দেন আগামি ২০০ বছরে এটি আর হেলবে না। প্রধানত নির্মানের সময় বেইজের দুর্বলতার কারনে এটি হেলা শুরু করে। পরবর্তিতে বেইজে প্রচুর কাজ করা সত্বেও এটি হেলতেই থাকে।
টাইটানিকে প্রচুর মানুষ মারা যাওয়ার প্রধান কারন হিসাবে ধরা হয় এটিতে যথেস্ট পরিমানে লাইফ বোট ছিল না। কিন্তু পরবর্তিতে জানা যায় জাহাজ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই যথেস্ট লাইফ বোট রাখেইনি কারন তাদের ধারনা ছিল এটি Unsinkable বা কখনোই ডুববে না।
নাসা ১৯৯৯ সালে 'Mars Climate Orbiter' নামক একটা মহাকাশ যান খুব হাস্যাকর একটা কারনে হারিয়ে ফেলে যেটা মঙ্গল গ্রহকে প্রদক্ষিন করছিল। কারন ছিল লকহিড মার্টিন যারা মহাকাশ যানটিকে তৈরি করেছিল তাদের সফ্টওয়ারটি ছিল আমেরিকান ইউনিট সিস্টেমে। আর নাসা র কম্পিউটারগুলা চলতেছিল ব্রিটিশ উনিট সিস্টেমে। ফলে দুইটার ক্যালকুলেশনে ব্যাপক গোলমাল লেগে যায় আর হাজার কোটি টাকার আস্ত একটা মহাকাশ জান মঙ্গল গ্রহের মাটিতে আছরে পরে।
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ভেবেছিলেন তিনি শীত কালে রাশিয়া আক্রমন করে পুরো রাশিয়া দখল করে নিতে পারবেন। পরবর্তিতে তিনি স্বিকার করেছিলেন এটি ছিল তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভুল। অর্ধেক সৈন্য প্রচন্ড ঠান্ডয় মারা যায় আর বাকি অর্ধেক খাবারে অভাবে অভুক্ত অবস্থায় প্রচন্ড খারাপ অবস্থায় ফ্রান্সে ফিরে আসে।
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ভেবেছিলেন তিনি শীত কালে রাশিয়া আক্রমন করে পুরো রাশিয়া দখল করে নিতে পারবেন। পরবর্তিতে তিনি স্বিকার করেছিলেন এটি ছিল তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভুল। অর্ধেক সৈন্য প্রচন্ড ঠান্ডয় মারা যায় আর বাকি অর্ধেক খাবারে অভাবে অভুক্ত অবস্থায় প্রচন্ড খারাপ অবস্থায় ফ্রান্সে ফিরে আসে।
১২১৯ সালে চেঙ্গিস খান তৎকালি পারস্য ইরান শাষকের কাছে তিন জন রাস্ট্রদুত পাঠিয়েছিলেন শান্তি আলোচনার জন্য যাদের একজন চাইনিজ এবং দুইজন মুসলিম ছিলেন। পারসিয়ানরা তাদের মাথা কেটে শুধু দেহটা ঘোরার পিঠে বেধে চেঙ্গিস খানের কাছে ফেসত পাঠায়। চেঙ্গিস খান পারস্যের এক কোনা দিয়ে যুদ্ধ আর ধংস্ব শুরু করেন ঠিক আরেক কোনায় গিয়ে ক্ষান্ত দেন। পুরো পারস্যতে কয়েক কোটি মানুষ নিহত হয় শুধু মাত্র এই সামান্য ভুলটার জন্য। গোয়ার্তুমিও বলা চলে
ডাচরা মানে কিংডম অফ নেদারল্যান্ড ব্রিটিশদের প্রায় ১০০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া আবিস্কার করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এটাকে একটা ব্যাবহার অযোগ্য মরুভুমি বলে ফেলে গিয়েছিল। অথছ ব্রিটিশরা আজও অস্ট্রেলিয়ার কর্তা হিসাবে চলতেছে। আর আমার ধারনা অর্থনৈতিক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া দিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ব্রিটিশরা।
রাশিয়া তার আলাস্কা নামক অঞ্চলটা আমেরিকার কাছে মাত্র দুই সেন্ট আর এক একর জমির বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছিল কারন তাদের ধারনা ছিল এত বরফের মধ্যে আসলে কিছুই নেই আর এটা একেবারেই ইউজলেস হবে। পরবর্তিতে এই বরফঢাকা অঞ্চলটিই এখন আমেরিকার বিশাল সম্পদে পরিনত হয়েছে।
ইনকা সম্রাট 'Atahualpa' স্প্যানিশ কর্নেল 'Francisco Pizarro' এর সাথে দেখা করতে সম্মত হন যখন তার ৮০ হাজার সৈন্য Francisco Pizarro এর মাত্র ২০০ ঘোর সওয়ার সৈন্যের সাথে পরাজিত হয়। ঘটনাটা এতটাই মারাত্মক ছিল যে পরবর্তিতে পুরো ইনকা সম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং তারা একেবারে পৃথিবীর বুক থেকে পুরোপুরি বিলিন হয়ে যায়। অনেকেই বলে থাকেন Francisco Pizarro ইনকাদের উপর মারাত্মক গনহত্যা চালিয়েছিলেন
একটা সামান্য কাঠের ঘোড়া তাদের শহের ঢুকানোর ভুলের মাসুল হিসবে পুরো ট্রয় নগরি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। মারাত্মক এই ভুলের গল্পটা সবারই জানা আছে। ঘোড়ার ভিতরে থাকা গ্রিক সৈন্যরা পরবর্তিতে রাতের আধারে ট্রয় নগরির প্রধান গেট খুলে দেন এবং পুরো ট্রয় ধ্বংসপ্রাপ্ত করে গনহত্যা চালায় গ্রিকরা।
১৯৩৬ সালে জার্মানরা তৎকালিন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এয়ার শীপ নির্মান করে যার নাম ছিল 'হাইডেনবার্গ' (LZ 129 Hindenburg)। কোন শালার বুদ্ধিতে তারা সেটার পুরো বেলুনটা হাইড্রোজেন গ্যাস দিয়া ভর্তি করেছিল। ফলে ঠিক তার পরের বছর ১৯৩৭ সালে সামান্য একটা আগুন পুরো একটা ভয়ানক বিস্ফোরনের সৃস্টি করে। ভুল কারে বলে
১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে রোমানদের ১৫০০ বছর পুরো সম্রাজ্য বাইজাইন্টাইন এর রাজধানী কন্সটান্টিপোল বর্তমানে তুরস্কের ইস্তাম্বুল দখল কর নেন মাত্র ২১ বছর বয়সি অটোমান সুলতাম দ্বিতীয় মেহমেদ'। কারন কেউ একজন শহরের বাউন্ডরি ওয়ালের একটা ছোট দরজা ভুলে খুলে রেখে গেছিল। আজকের তুরস্কের রাজধানি ইস্তাম্বুল হওয়ার পিছনে এই ছোট ভুলটাই ছিল কারন।
১৪ শতকে চাইনিজ সম্রাজ্য তার সমস্ত নেভি ইউনিট গুলো বন্ধ করে দেয় এবং নিজেদেরকে একেবারে একধরে করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। অদ্ভুদ এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের পুরো উপকুল সম্পুর্নরুপে অরক্ষিত হয়ে পরে এবং পরবর্তিতে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তারা অনেক অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
১৯১৪ সালে অস্ট্রিয়ার তৎকালিন শাষক 'Archduke Franz Ferdinand' এর ড্রাইভার ভুল করে একটা রং টার্ন নিয়ে ফেলে। ফলে গারিটি সরাসরি তার হত্যাকারি সার্বিয়ান 'Gavrilo Princip' এর সামনে গিয়ে পরে এবং খুব সহজেই সে Archduke Franz Ferdinand কে হত্যা করে। Archduke Franz Ferdinand হাঙ্গেরির প্রিন্স ছিলেন এবং তিনি পরবর্তি রাজা হতেন। পরবর্তিতে হাঙ্গেরি এবং তার মিত্ররা সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলে ইংল্যান্ড সহ সার্বিয়ার বাকি সহোযোগিরা উল্টা যুুদ্ধ ঘোষনা করে বসে। ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। দুই দুইটা মারাত্মক বিশ্বযুদ্ধ এরানো সম্ভব হত যদি সেইদিন ড্রাইভার এই সামান্য ভুলটা না করতো
জাপানিরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার নৌঘাটি পার্ল হারবার এর আক্রমন করে এমন সময় যখন তাদের একটা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারও সেখানে ডক করা ছিল না। অথচ সাধারনত সেখানেই বেশির ভাগ সময়ই জাহজ গুলো থাকার কথা। যদি সে সময় এই জাহজা গুলো ধংস করতে পারত যুদ্ধে আমেরিকার এত শক্ত উপস্থিতি থাকতো না। আর এর জন্যই অনেকে বলে থাকেন এই আক্রমনের পিছনে আমেরিকার হাত ছিল।
রাশিয়ার চেরোনেভিল পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্ঘটনার পিছনে দায়ি করা হয় খারাপ কন্সট্রাকশন। ধারনা করা হয় যেই ইঞ্জিনিয়ার এই পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কন্সট্রাকশন সুপারভাইজ করার দায়িত্বে ছিলেন তিনি বেশি কিছু স্থানে স্ট্রাকচারাল ভুল করেছিলেন। যেটা পরবর্তিতে মারাত্মক এক বিস্ফোরন আর রেডিয়শন সৃস্টি করে। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ নিহত এবং প্রচুর মানুষ পঙ্গু হয়ে যায়। পুরো একটা আস্ত শহর পরিত্যাক্ত হয়ে পরে।
সেই ১২ জন বই পাবলিশার বা প্রকাশক যারা জে.কে রাওলিংকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এই বলে যে হ্যারি পটার নামক এই ফালতু বই কেউ কিনবে না। পরবর্তিতে Bloomsbury Publishing কম্পানি প্রথম বইটি প্রকাশ করতে রাজি হয় যাতে লেখিকাকে তারা মাত্র ২৫০০ পাউন্ড পারিশ্রমিক দিয়েছিল। মজার বিষয় হচ্ছে পরবর্তি বইয়ের জন্য তারা তাকে দিয়েছিল ১ লক্ষ পাউন্ড। আর তার পরে তো ইতিহাস।
আলেক্সান্ডার দ্যা গ্রেট পু্রো পৃথিবী দখল করেছিলেন। তার বিশাল এই সম্রাজ্য শাষন করার জন্য তিনি বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারেন নাই। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরন করেন কিন্তু মারা যাওয়ার আগে তিনি তার কোন উত্তরসুরির নাম বলে যাননি। যেটি পরবর্তিতে সরাসরি তার এই বিশাল সম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত করে।
কার্থেজিয়ানরা রোম আক্রমনের সময় তাদের মিলিটারি জেনারেল এবং ধারনা করা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জেনারেলদের একজন হ্যানিবল বার্কাকে কোন Siege ইকুইপমেন্ট যেমনঃ Ballista, Mangonel , Trebuchet দেওয়া হয় নাই। যেটা ছিল ইতিহাসের চরম একটা ভুল সিদ্ধান্ত। কারন হ্যানিবল এর হাতে যদি তখন এগুলো থাকতো সে নিশ্চিৎ ভাবে ধরে নেয়া যায় পুরো রোমান সম্রাজ্য মাটির সাথে মিশিয়ে দিতো এবং বর্তমান পৃথিবীতে রোমানদের বদলে কার্থেজিয়ানদের স্তুতি শোনা যেত।
আলেক্সান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে আগুন দিয়ে ধ্বংস করাটা ছিল ইতিহাসের আরেক ভুল। কে দিয়েছে সেটা আজও জানা যায় নাই, কিন্তু এই আগুনের ফলে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা কিছু জ্ঞান হারিয়ে গেছে চিরতরে। ওই লাইব্রেরিটা থাকলে পৃথিবী বর্তমন অবস্থান থেকে আরও এগিয়ে থাকতো। সম্ভাবত আমরা আজকে অন্য কোন গ্রহে বসতি করতে পারতাম।
৪৪ খ্রিস্টপূর্বে রোমান রিপাবলিকের সম্রাট জুলিয়াস সিজার বিখ্যাত Perpetuo ঘোষনা করেন; যেখানে তিনি পুরো রোমান রিপাবলিকের একক অধিপতি বনে যান। কিন্তু বিষয়টা রোমান সিনেট সদস্যাদের মোটেই পছন্দ হয় নাই এবং তারা ধারনা করেন সম্রাট সিনেট বন্ধ করে একক ভাবে সম্রাজ্য শাষন করার চেস্টা করছেন। তাই তারা সম্রাটকে হত্যা করেন আততায়ির মাধ্যমে গুপ্ত হত্যা করান। কিন্তু বিষয়টা যে একটা মারাত্মক ভুল ছিল তা পরবর্তিতে তারা উপলব্ধি করেন যখন পুরো রোমান সম্রাজ্যে ভায়নক অন্তর্যুদ্ধ শুরু হয় এবং বিশাল সম্রাজ্য প্রায় ধংসের দারপ্রন্তে উপনিত হয়।
১৭৮৮ সালে প্রায় লক্ষাধিক অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনি বর্তমান রোমানিয়ার Caransebeş শহরে ঘাটি গারে অটোমান সেনাবাহিনিকে পরাস্ত করার জন্য। কিন্ত কোন এক অদ্ভুদ কারনে অনোমান বাহিনী আসার আগেই অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী একটি অংশ তাদের বিপরিত দিকে থাকা আরেকটি অংশকে মনে করে বরে অটোমান সেনাবাহিনী। ফলশ্রুতিতে নিজেদের মধ্যে একটা ভুল যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য নিহত হয় এবং আহত হয় কমপক্ষে আরো ২৫-৩০ হাজারের মতন। আর ততক্ষনে অটোমান সেনাবাহিনি এসে দেখে যুদ্ধ শেষ পুরো শহর তারা খুব শান্তিতে পায়ে হেটে হেটে দখল করে নেয়। এত বড় মারাত্মক ভুল ইতিহাসে আর কেউ করেছে কিনা সন্দেহ আছে।
তথ্যসূত্রঃ অনলাইন ইন্টারনেট
পোস্টির লেখকঃ বশর সিদ্দিকী
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯