দীর্ঘ ৮ বছরের প্রেম। একই কলেজে পড়তো তারা। একই এলাকায় বাসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বর্ষে ভর্তিও হয়েছিল। মেয়েটি ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর ছেলেটি নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু মাস দুয়েক আগে হঠাৎ মনোমালিন্য দুজনের মধ্যে। প্রেমে শুরু হয় বিচ্ছেদের যন্ত্রণা। মেয়েটি এই বিচ্ছেদের জ্বালা সইতে পারেনি। গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
লিখেছিল ‘ঘৃণা! নিজের প্রতি! যা থেকে জন্ম আমার তার প্রতি!’। হয়তো তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়ার। সেই অনুযায়ী বোতলে ভরে কেরোসিন নিয়ে এসেছে। টিএসসির দ্বিতীয় তলার একটি বাথরুমে ঢুকে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারপরই শুরু হয় বাঁচার জন্য আর্ত-চিৎকার। পরে অন্যরা এগিয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে। কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটির শরীরের ২৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে নিজেই। মেয়েটির নাম আরজুমান আরা হোসাইন ওরফে অন্তরা। আর তার প্রেমিকের নাম জুম্মান সাদিক জেবলিন।
মেয়েটির সহপাঠীরা জানায়, দুজনের বাড়িই বগুড়ায়। কলেজ লাইফ থেকেই তাদের প্রেমের সম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও চুটিয়ে প্রেম করছিল তারা। পড়াশুনার পাশাপাশি মেয়েটি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিস্ট সোসাইটির কালচারাল সেক্রেটারি ছিল সে। দীর্ঘ প্রেমে বিচ্ছেদের সূচনা হয় দুই মাস আগে। ছেলেটি তাকে এড়িয়ে চলা শুরু করে। এটি মেনে নিতে পারেনি মেয়েটি। এ কারণেই আত্মহত্যার চেষ্টা করে অন্তরা। অন্তরার বন্ধুরা জানায়, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় বেশ কয়েকদিন ধরে মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। সে কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রী।
এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকারী বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাহবুব জানান, বিকালে টিএসসির ২য় তলায় স্লোগান ‘৭১ সংগঠনটির অফিস সংলগ্ন টয়েলেট থেকে চিৎকার শুনে সেদিকে যাই। টয়লেট থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখি এবং মেয়েটির ক্রমাগত ‘হেল্প হেল্প’ চিৎকার শুনি। পরে আরেক বন্ধুকে নিয়ে টয়েলেটের দরজা ভাঙ্গি এবং ভেতরে ঢুকতে চাইলে মেয়েটি পুনরায় দরজা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমরা পানি দিয়ে তার শরীরের আগুন নিভিয়ে ফেলি। পরে লোকজনের সাহায্যে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। ঘটনার পর ওই ছাত্রীকে দেখতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এএম আমজাদ, ফার্সি বিভাগের শিক্ষক ড. বাহাউদ্দিন, টিএসসির পরিচালক আলমগীর হোসেনসহ তার সহপাঠীরা। এ সময় ভিসি মেয়েটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে বলে ঘোষণা করেন। এদিকে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. ফয়সালুজ্জামান বলেন, মেয়েটির শরীরের ২৮ ভাগ পুড়ে গেছে। তার বুক, পেট ও কাঁধের অনেকাংশ পুড়ে গেছে। তবে তিনি পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নন। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এএম আমজাদ বলেন, প্রেমঘটিত কারণে মেয়েটি আত্মহত্যা চেষ্টা করেছিল বলে শুনেছি।
মানব জমিন
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৪