আমি আমার পরিবারে প্রথম মহিলা শ্মশানযাত্রী।
একপ্রকার জোর করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
আমাদের গোবরডাঙ্গায় ইলেক্ট্রিক চুল্লী নয়,কাঠের পর কাঠ সাজিয়ে শরীরটাকে দুমড়ে তার ওপর আরো কাঠ দিয়ে তবে গিয়ে আগুন জ্বালানো হয়।
সমস্ত টা জ্বলে গেলে আগুনের মধ্যে বোঝা যায় কালো শরীর পুড়ে যাওয়ার একটু একটু।
মামাদাদু,মেশোমশাই,দাদু,দিদা,ঠাকমা..এদের জ্বলন্ত চুল্লীর পাশে বসে ছিলাম আমি।এটা আমার একটা মুশকিলের,আমি আমার পরিচিতের এই শেষটুকু না দেখলে তাদের ফেরবার অপেক্ষা করি।
বড় জেঠু মৃত্যুর সময় কেবল বলত কে নাকি জানলা দিয়ে উঁকি মারছে,
দিদা তার অসমর্থ শরীর নিয়ে দাদু এসেছে বলে কীভাবে খাট থেকে যে নেমে গিয়েছিল তা জানি না।
দাদু ঠিক ২৪শে ডিসেম্বর মারা যান,দিদা ২৪ জানুয়ারি.. সেদিনও জানলা খোলা ছিল।
ঠাকমাও একই রকম ভাবে...
ছোট কাকাকে যেহেতু ঠাকমা খুব ভালবাসত তাই বোধ হয় প্রাণটা বেরোচ্ছিল না..কেবলই রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল গাল বেয়ে।
কাকাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলে জানলা খুলে দেওয়া হয়েছিল...ঠাকুরের ফুল রাখা হয়েছিল মাথার কাছে।
তারপর ঘরে ঢুকে দেখি সব শেষ।জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি সবে আলো ফুটবে ফুটবে।
এই পৃথিবী টা আমার কাছে ভারী অদ্ভুত লাগে..এত রহস্য..এত অজানা।
অথচ চরম সত্য মৃত্যু।এর চেয়ে বড় বাস্তব আর কিছু নেই।
যেদিন দিদা মারা যায়,সেদিন আমি শহরের ভাড়া বাড়িতে,কিছুতেই শুতে পারছিলাম না,বারবার মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার ঐ ঘরে আছে...
সত্যিই কি কোনো তরঙ্গ কাজ করে?
আমি যখন রেইকি শিখেছিলাম,নিজেও ত দেখেছি আমি যা চেয়েছি তাই হয়েছে।
আজকাল এই কঠিন মৃত্যুগুলো বড় ভাবায়।
দুর্ঘটনা..হত্যা...এইসব আর কি..
রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।
অথচ,মরব বলে একবার কত ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলাম আমি,
সেই একমাসের কোনো গল্পই মনে নেই আমার।শুধু এটুকু জানি,মরতে গিয়ে না মরে ফিরে আসা মরে যাওয়ার চেয়েও কঠিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:৩১