somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(৩) ইসরায়েলের পথে পথেঃ জেরুজালেমে প্রথম সকাল

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ দামাস্কাস গেট

এক

বেন গুরিয়ান এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই উঠে পড়লাম মিনি বাসের মত এক ধরনের ভ্যানে। নিরাপত্তা কর্মীরাই দেখিয়ে দিল। জন প্রতি পঁয়ত্রিশ শেকেল নেবে জেরুজালেমে প্রত্যেকের হোটেল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। যাত্রী সবাই আমাদের মতোই পর্যটক। আমার পাশে বসল রাশিয়ান এক তরুণী। হাই - হ্যালো বলেই নিজের নাম জানাল।

- আই আম ইভানা। এন্ড ইউ?

চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। তারপরেও হাসিতে আন্তরিকতার কমতি নেই তার। বাস ছেড়ে দিল জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে। একটু পর পর এটা সেটা বলেই যাচ্ছে ইভানা। মস্কো থেকে এসেছে বড়দিনের ছুটিতে। এখানে তার বাবা মা থাকে। জর্ডান উপত্যাকার পাশ দিয়ে লম্বা হাইওয়ে। রাস্তার দুই পাসে উঁচু দেয়াল। এরই মধ্যে ছুটে চলছে বাস। চালকের আসনে যিনি আছেন, তিনি আরবি গান ছেড়ে দিলেন। দেখতে দেখতে ঝিমিয়ে পড়ছি। এরই মধ্যে ক্লান্ত ইভানা ঘুমিয়ে পড়েছে। বাতাসে তার চুল উড়ে মুখে লাগছে আমার। কখন যে ঘুম চলে এসেছিল বুঝতেই পারিনি।

ড্রাইভারের ডাকে ঘুম ভাঙল। জানাল রিভোলি হোটেলে পৌঁছে গেছি। এখানেই থাকব আগামী তিন দিন। ভোর তিনটা বেজে গেছে। ইভানা বোধ হয় নেমে গেছে আগেই। হোটেলের বেল চাপ দিতেই আরব মতো একজন দরজা খুলে দিল। রুমে ঢুকেই বিছানায় ঢলে পড়লাম।

দুই

সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানালার পর্দা ভেদ করে ঘরে ঢুকছে জেরুজালেমের সূর্য। কফিনের মতো একটা বাথরুম। কোন রকমে একজন ঢুকা যায়। ভাগ্য ভাল যে কলে গরম পানি আছে। লম্বা একটা গোসল করে তৈরি হয়ে নিলাম। হোটেল ভাড়ার সাথে সকালের নাস্তা যুক্ত আছে। ভূমধ্য সাগর তীরের এই পনির আর সাদা দই মেশানো নাস্তা বাঙ্গালির জন্য বেমানান। সাথে থাকে ক্যাপসিকাম, রুটি, দুই পদের জেলি আর সেদ্ধ ডিম। আমাদের মতো আরও পর্যটক নাস্তার টেবিলে বসা শুরু করল। মনে মনে এদের নাস্তার গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে খেয়ে নিলাম। এই দেশে যে খাবারের কষ্ট করতে হবে, তা আর বুঝতে বাকি রইলো না।

হোটেল থেকে বেরিয়েই টের পেলাম অসম্ভব ঠাণ্ডা। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে শত শত স্কুলে পড়ুয়া ছেলে মেয়ে। মাথায় হিজাব পরা। এদের নিয়ে আমাদের দেশে সকলের গভীর ধর্মীয় আবেগ কাজ করে। এরাই প্যালেস্টাইনি। হিজাব পরলেও মেয়েদের সকলেই জিন্স পরে। হিজাবের পাশাপাশি পাশ্চাত্যের ছোঁয়াও আছে চলনে বলনে।


ছবিঃ রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে আরব নারীরা


ছবিঃ আরব ফিলিস্তিনি স্কুল ছাত্রীরা। হেরড গেটের সামনে

ছবিঃ সবজি বিক্রেতা এক ফিলিস্তিনি নারী

রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্বয়ংক্রিয় মেশিনগান হাতে দায়িত্ব পালন করছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। পূর্ব জেরুজালেমের এই এলাকায় আরব ঘন বসতি। ব্যাবসা পাতি সব আরবরাই করছে। হটাত হটাত কিছু কিপ্পো পরা ইহুদি দেখা যায়। দোকানে দোকানে বাজছে কোরান তেলয়াত। এরই মধ্যে দোকানদাররা মনের সুখে টেনে যাচ্ছেন সিগারেট। এক প্যাকেট সিগারেটের দাম নিলো ৩৫ শেকেল। এই দেশে ধূমপান যে খুব জনপ্রিয় তা বোঝাই যায়। আরব দোকানদার নিজে থেকেই জানতে চাইলো কই থেকে এসেছি, দেশ কোথায়, কয়দিন থাকব ইত্যাদি। বাংলাদেশ থেকে এসাছি শুনেই একটু অবাক হল। জীবনে এই প্রথম কোন বাঙ্গালির দেখা।

আমদের হোটেল যেই রাস্তায় সেটার নাম সালাদিন স্ট্রিট। এই সেই সালাদিন, যার নেতৃত্বে জেরুজালেম মুক্ত হয়েছিল ক্রুসেডারদের হাত থেকে ১১৮৭ সালে। সিগারেট কিনতে গিয়ে জানলাম সালাদিন স্ট্রীট নাম করনের কারণ। এই রাস্তার কোন এক জায়গায় একটি প্রাচীন কবরস্থান আছে যেখানে সালাদিন এর নেতৃত্বে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যারা মারা গিয়েছিল তাদের কবর দেয়া হয়ছে। সেই থেকে নাকি এর নামে সালাদিন স্ট্রীট। পূর্ব জেরুজালেমের অন্যতম ব্যাস্ত বাণিজ্যিক এলাকা। আবুদাবি ইসলামিক ব্যাঙ্ক, সৌদি ব্রিটিশ ব্যাঙ্ক সহ আর কিছু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভবন এখানে। সালাদিন স্ট্রীট গিয়ে মিলেছে সুলতান সুলাইমান স্ট্রীটে। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রথম দেখতে পেলাম জেরুজালেমের সেই প্রাচীন শহর। বিশাল উঁচু প্রাচীরে ঘেরা হাজার হাজার বছরের পুরানো। কত যুদ্ধ, কত হত্যা, কত রক্তপাত আর কত কালের সাক্ষী এই পুরনো শহর।

আমাদের সামনে রাস্তার অপর পাশে এক বিশাল দরজা। ইংরেজিতে বলা হয় হেরডের দরজা (Herod's Gate)। আরবিতে এর নাম "বাব আজ-যাহরা"। অটোমান শাসক সুলতান সুলাইমানের সময় জেরুজালেমের অনেক সংস্কার করা হয়। এই উঁচু প্রাচীর গুল নাকি তখনকার সময়ের। এখান থেকে একটু সামনে এগুলেই দামাস্কাস গেট। এক আরব দোকানদার জানালো এই দামাস্কাস গেট দিয়েই ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ৬৩৭ সালের এপ্রিলে জেরুজালেমের ভেতরে প্রবেশ করেন। শুনেছি এই গেট দিয়ে সোজা গেলে পৌছা যাবে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস।


ছবিঃ পুরাণ শহরের ভেতরে একটি ব্যাস্ত বাজার


ছবিঃ পুরাণ শহরের ভেতরে একটি গলি


ছবিঃ দামাস্কাস গেটের পথ নির্দেশিকা


ছবিঃ মসজিদুল আকসার পথ নির্দেশিকা

মসজিদুল আকসায় যাওয়ার পথে একটি প্রাচীন দরজা

মামাতো ভাই এর সাথে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে ঢুকে গেলাম পুরানো জেরুজালেমের ভেতরে। সরু রাস্তা। দেখেই বোঝা যায় অতি পুরানো সব দেয়াল। সারি সারি দোকান, আবার মানুষের থাকার বাসা। মনে প্রশ্ন জাগে যারা এখানে থাকে, তারা কি সেই হাজার বছর ধরে থাকা অধিবাসীদের বংশধর? দেয়ালে দেয়ালে দিক নির্দেশনা দেয়া। চোখে পরল মাসজিদুল আকসার নির্দেশনা। একজনকে জিজ্ঞেস করতেই জানালো মাত্র পাঁচ মিনিট হাঁটলেই পেয়ে আকসার দরজা। দেয়ালের নির্দেশনা ধরেই শুরু করলাম মাসজিদুল আকসার দিকে হাটা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৬
২৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×