ব্লগারদের এত কিসের ভয়? কেনই বা হিসাব কষে এদের হত্যা করা হচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুজতে হলে ফিরে যেতে হবে একদম সেই প্রথম দিকে। হজরত মুহাম্মদ এর জীবনের দিকে। তিনি একজন মহান নবী। তিনি আল্লাহর প্রেরিত বান্দা এবং রাসুল। তার প্রতিটি কাজ মুসলমানদের জন্য পালনীয়। অবশ্যই পালনীয়। ইসলাম প্রচারের এই কান্ডারী তার মহান জীবনে মোট ৪৩ বার বিভিন্ন জনকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন। ইসলামের দৃষ্টিতে তার এই আদেশ গুলো ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং মৃত্যু দন্ড যোগ্য অপরাধের শাস্তি। ভালো করে যদি এই বিষয়টিকে খাটিয়ে দেখা হয়, তাহলে দেখতে পাবেন দন্ড প্রাপ্ত অনেকেই ছিলেন কবি এবং তাদের অপরাধ ছিল নবীজিকে নিয়ে বিদ্রুপ অথবা সমালোচনা মূলক কবিতা লিখা। পাঠকের বুঝার জন্য এই কবিদের একটা তালিকা নিচে দেয়া হলো :
১) আসমা বিনতে মারওয়ান: নারী কবি, জানুয়ারী ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ। (সুত্র: ১) সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক। (২) কিতাব আল তাবাকাত আল কবির - ২য় খন্ড)
২) আবু আফাখ: ফেব্রুয়ারী ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ। ইহুদি কবি ছিলেন যিনি রাসুলের বিরোধিতা করে কবিতা লিখতেন। (সুত্র: ১) সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক। (২) কিতাব আল তাবাকাত আল কবির - ২য় খন্ড)
৩) আল নাদর ইবনে আল হারিথ: মার্চ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ, বদর যুদ্ধের একদম পর পর। এই হত্যাকান্ড নিয়ে কুরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল। হজরত আলী নিজ হাতে তার শিরচ্ছেদ করেন। (সুত্র: ১) কুরআন সুরা আল মুতাফ্ফিফিন, আয়াত নং ১৩। (২) সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক)
৪) কা'ব ইবনে আল আশরাফ: সেপ্টেম্বর ৬২৪। বদর যুদ্ধের পর ইনি মক্কা গিয়ে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশদের মহিম্মানিত করে পদ্য লিখেছিলেন। তারপর মদিনে ফিরে এসে তিনি মুসলিম নারীদের নিয়ে অবমাননা কর কবিতা রচনা করেন। (সুত্র: ১) সহি বুখারী, খন্ড ৫, অধ্যায় ৫৯, হাদিস নং ৩৬৯, (২) সহি মুসলিম, খন্ড ১৯, হাদিস নং ৪৪৩৬)
৫) আবু রাফি ইবনে আবি আল হুকাইক: ডিসেম্বর ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ। কবিতা লিখতেন রাসুলকে নিয়ে তিরস্কার করে। (সুত্র: ১) বুখারী ৪:৫২:২৬৪, ৫:৫৯:৩৭০-৩৭২, (২) সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক, (৩) আল তাবারী, খন্ড ৭)
৬) আব্দুল্লাহ বিন খাতাল: মক্কা বিজয়ের দিন জানুয়ারী ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ। একজন ক্রীতদাসকে হত্যা এবং মহানবীকে নিয়ে বিদ্রুপাত্বক কবিতা আবৃত্তি করার অপরাধ। (সুত্র: ১) বুখারী ৫:৫৯:৫৮২, ৩:২৯:৭২, (২) সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক। (৩) কিতাব আল তাবাকাত আল কবির - ২য় খন্ড)
৭) ফারতানা: মক্কা বিজয়ের দিন জানুয়ারী ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ। নারী এবং উপরে উল্লেখিত আব্দুল্লাহ বিন খাতাল এর ক্রীতদাসী ছিলেন। একমাত্র অপরাধ ছিল মহানবীকে নিয়ে বিদ্রুপাত্বক কবিতা আবৃত্তি করতেন। (সুত্র: ১) আবু দাউদ ১৪:২৬৭৮, (২) সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক। (৩) কিতাব আল তাবাকাত আল কবির - ২য় খন্ড)
৮) কুরায়্বাহ: মক্কা বিজয়ের দিন জানুয়ারী ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ। ইনিও নারী এবং উপরে উল্লেখিত আব্দুল্লাহ বিন খাতাল এর ক্রীতদাসী ছিলেন। এনারও একমাত্র অপরাধ ছিল মহানবীকে নিয়ে বিদ্রুপাত্বক কবিতা আবৃত্তি করা। অবশ্য ইসলাম গ্রহণ করার বিনময়ে তাকে আর হত্যা করা হয়নি। (সুত্র: ১) আবু দাউদ ১৪:২৬৭৮, (২) সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক। (৩) কিতাব আল তাবাকাত আল কবির - ২য় খন্ড)
৯) হুয়ারিধ ইবনে নাফিদ: মক্কা বিজয়ের দিন জানুয়ারী ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ। নবীকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক কবিতা লিখার পাশাপাশি তার আরো এক অপরাধ ছিল এই যে রাসুলের কন্যারা মদিনায় পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি কন্যাদের বহনকারী উঠের গায়ে ছুরিকাঘাত করেছিলেন। হজরত আলী নিজ হাতে তার শিরচ্ছেদ করেন। (সুত্র: সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক)
১০) কা'ব ইবনে জুহাইর ইবনে আবি সালমা: মক্কা বিজয়ের দিন জানুয়ারী ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ। রাসুলকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক কবিতা লিখতেন। ইসলাম গ্রহণ করার বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সুত্র: সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক)
১১) আল হারিথ বিন আল তালাতিল: মক্কা বিজয়ের দিন জানুয়ারী ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ। রাসুলকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক কবিতা লিখতেন। (সুত্র: সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক)
১২) আব্দুল্লাহ বিন জিবারি: মক্কা বিজয়ের দিন জানুয়ারী ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ। রাসুলকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক কবিতা লিখতেন। ইসলাম গ্রহণ করার বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সুত্র: সিরাত রাসুলুল্লাহ, ইবনে হাশিম এবং ইবনে ইসহাক)
১৩) হুবায়রাহ: মক্কা বিজয়ের দিন জানুয়ারী ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ। রাসুলকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক কবিতা লিখতেন। মক্কা বিজয়ের দিন পালিয়ে যান এবং নাজরান নামক এলাকায় মারা যান। (সুত্র: আল তাবারী, খন্ড ৩৯)
উপরে উল্লিখিত ঘটনা গুলো থেকে বুঝা যায় যে ইসলাম ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করে কলম ধরলেই সমস্যা আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১৯