somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেজুর নামা

০১ লা জুন, ২০১৭ রাত ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর বিশুদ্ধ বাণী, “উন্নতমানের ‘আজওয়াহ’ (মদীনা মুনাওয়ারার সর্বাপেক্ষা মূল্যবান খেজুরের নাম) এর মধ্যে প্রতিটি রোগের আরোগ্য রয়েছে।” আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী رضى الله عنه এর বর্ণনা অনুসারে, “সাতদিন যাবত প্রতিদিন সাতটি করে ‘আজওয়াহ’ খেজুর খেলে ‘কুষ্ঠরোগ’ (সাদারোগ) দূরীভূত হয়।” (ওমদাতুল কারী, খন্ড-১৪, পৃ-৪৪৬, হাদীস নং-৫৭৬৮)


২. প্রিয় আকা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা ﷺ এর জান্নাত রূপী বাণী হচ্ছে, “আজওয়া খেজুর জান্নাত থেকে।” এটা বিষ-আক্রান্তকে আরোগ্য দান করে।”(তিরমিযী শরীফ, খন্ড-৪র্থ, পৃ-১৭, হাদীস নং-২০৭৩) বোখারী শরীফের বর্ণনানুসারে, যে ব্যক্তি সকালে ৭টা ‘আজওয়া’ খেজুর খেয়ে নেয়, ওই দিন যাদু এবং বিষ তাকে ক্ষতি করতে পারবে না।” (সহীহ বোখারী, খন্ড-৩য়, পৃ-৫৪০, হাদীস নং-৫৪৪৫)

৩. সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رضى الله عنه থেকে বর্ণিত, খেজুর খেলে ‘কুলাজ’ রোগ (কুলাজকে ইংরেজীতে APPENDIX বলা হয়) হয় না।” (কানযুল ওম্মাল,খন্ড-১০ম,পৃ-৬২, হাদীস নং-২৪১৯১) রয়েছে।

৪. আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর শেফারূপী বাণী হচ্ছে, “সকালে নাস্তা রূপে খেজুর খাও! এর ফলে পেটের ক্রিমি মরে যায়।” (জামেউস সগীর, পৃ-৩৯৮, হাদীস নং-৬৩৯৪)

৫. হযরত সায়্যিদুনা রবীই ইবনে হাসীম رضى الله عنه বলেন, “আমার মতে গর্ভবতী নারীর জন্য খেজুর অপেক্ষা, আর অন্যান্য রোগীর মধু অপেক্ষা উত্তম অন্য কোন বস্তুর মধ্যে শেফা (আরোগ্য) নেই।” (দুররে মানসুর, খন্ড-৫ম, পৃ-৫০৫)

৬. সায়্যিদী মুহাম্মদ আহমদ যাহবী رحمة الله عليه বলেন, “গর্ভবর্তীকে খেজুর আহার করানো হলে إنشاء الله عزوجل যে সন্তান প্রসব করবে, সে সুশ্রী, ধৈর্য এবং পরম স্বভাবের হবে।”

৭. যে ব্যক্তি উপবাসের কারণে দুর্বল হয়ে গেছে, তার জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী, কেননা, এটার মধ্যে খাদ্যপ্রাণ (খাদ্যের উপাদান) ভরপুর। তা আহার করলে তাড়াতাড়ি শক্তি ফিরে আসে। সুতরাং খেজুর দ্বারা ইফতার করার মধ্যে এ রহস্যও রয়েছে।

৮. রোযায় তাৎক্ষণিকভাবে বরফের ঠান্ডা পানি পান করে নিলে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে পাকস্থলী ও কলিজা ফুলে যাবার আশংকা বেশি থাকে। খেজুর খেয়ে ঠান্ডা পানি পান করলে ক্ষতির আশংকা মুক্ত হওয়া যায়। অবশ্য, খুব বেশি ঠান্ডা পানি পান করা যে কোন সময়েই ক্ষতিকর।
৯. খেজুর ও শষা, অনুরূপভাবে খেজুর ও তরমুজ একসাথে খাওয়া সুন্নত। এতে ও হিকমতের মাদানী ফুল রয়েছে।
اَلْحِمْدُ لِلّٰه عَزَّوَجَل আমাদের পালনের জন্য এ সুন্নতটাই যথেষ্ট। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে, “এতে জৈবিকগত ও দৈহিকগত দূর্বলতা দূর হয়ে যায়। মাখনের সাথে খেজুর খাওয়াও সুন্নত। (সুনানে ইবনে মাজাহ খন্ড-৪,পৃ-৪১, হাদীস নং-৩৩৩৪) এক সাথে পুরানা ও তাজা খেজুর আহার করাও সুন্নত। ‘ইবনে মাজাহ’ শরীফে আছে-যখন শয়তান কাউকে এমন করতে দেখে তখন এ বলে (আফসোস করে) “পুরানার সাথে নতুন খেজুর খেয়ে মানুষ মজবুত দেহ বিশিষ্ট হয়ে গেলো।” (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, খন্ড-৪র্থ, পৃ-৪০, হাদীস নং-৩৩৩০)

১০. খেজুর খেলে পুরানো ‘কোষ্টকাঠিন্য’ দূর হয়ে যায়।

১১. হৃদরোগ এবং যকৃত মুত্রথলী, প্লীহা ও অন্ত্রের রোগ-ব্যাধির জন্য খেজুর উপকারী। এটা কফ্ বের করে দেয়। মুখের শুষ্কতা দূর করে। যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে এবং প্রস্রাব সহজে বের হতে সাহায্য করে।

১২. হৃদরোগ ও চক্ষুর কালো ছানি রোগের জন্য খেজুরকে দানা সহকারে পিষে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

১৩. খেজুরকে ভিজিয়ে সেটার পানি পান করে নিলে, কলিজার রোগ-ব্যাধি দূর হয়ে যায়। আমাশয় রোগের জন্যও এ পানি উপকারী। (রাতে ভিজিয়ে ভোরের নাস্তায় ওই পানি পান করবেন, কিন্তু ভেজানোর জন্য ফ্রিজের মধ্যে রাখবেন না।)

১৪. খেজুরকে দুধের সাথে গরম করে খাওয়া সর্বোত্তম শক্তিশালী খাদ্য। এ খাদ্য রোগের পরবর্তী দূর্বলতা দূর করার জন্য সীমাহীন উপকারী।

১৫. খেজুর আহার করলে আঘাত তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়ে যায়।

১৬. প্লীহা রোগীর জন্য খেজুর উত্তম ঔষধ।

১৭. তাজা-পাকা খেজুর ‘হলদে’ (যা বমির সাথে তিক্ত পানি বের হয়) ‘এসিডিটি’ শেষ করে।

১৮. খেজুরের বিচিগুলোকে আগুনে পুড়ে সেগুলো দিয়ে মাজন তৈরী করে নিন। এটা দাঁতগুলোকে উজ্জ্বল করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।

১৯. খেজুরের পোড়া বিচির ছাই লাগালে আঘাতের রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং আঘাত তাড়াতাড়ি ভরে ওঠে।

২০. খেজুর বিচিকে আগুনে ফেলে ধোঁয়া নিলে অর্শ্বরোগের ক্ষতগুলো শুকে যায়।

২১. খেজুর গাছের শিকড়গুলো কিংবা পাতাগুলোর পোড়া ছাই দ্বারা মাজন তৈরী করে দাঁত মাজলে দাঁতের ব্যথা দূর হয়। শিকড় ও পাতাগুলো সিদ্ধ করে তা দ্বারা কুলি করলেও দাঁতের ব্যথা দূর হয়।

২২. যে ব্যক্তির খেজুর খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (SIDE EFFECT) দেখা দেয়, সে আনারের রস কিংবা পোস্তা-দানা অথবা কালো মরিচের সাথে খেলে, إنشاء الله عزوجل উপকার পাওয়া যাবে।

২৩. আধ-পাকা ও পুরানা খেজুর একসাথে খেলে ক্ষতি করে। অনুরূপভাবে, খেজুরের সাথে আঙ্গুর কিংবা কিসমিস বা মুনাক্কা মিলিয়ে খাওয়া, খেজুর ও ডুমুর ফল একসাথে খাওয়া, রোগ উপশম হবার সাথে সাথেই দূর্বলতার সময় বেশী
খেজুর খাওয়া এবং চোখের রোগে খেজুর খাওয়া ক্ষতিকর। একই সময়ে পাঁচ তোলা (অর্থাৎ- প্রায় ৬০ গ্রাম) অপেক্ষা বেশী খেজুর খাবেন না।

২৪. পুরানা খেজুর খাওয়ার সময় ছিড়ে ভিতরে দেখে নেয়া সুন্নত। কেননা, তাতে কখনো কখনো ছোট ছোট লাল বর্ণের পোকা থাকে। সুতরাং পরিস্কার করে খাবেন। যেই খেজুরের ভিতর পোকা হওয়ার সম্ভাবনা হয় তা পরিস্কার ছাড়া খাওয়া মাকরূহ। (আউনুল মাবুদ, খন্ড-১০ম, পৃ-২৪৬) বিক্রেতা খেজুরকে উজ্জল করার জন্য বেশীরভাগ সময় সরিষার তেল লাগায়। সুতরাং উত্তম হচ্ছে খেজুরকে কয়েক মিনিট পানিতে চুবিয়ে রাখা। যাতে মাছির আবর্জনা ও ধুলো-বালি আলাদা হয়ে যায়। গাছ-পাকা খেজুর বেশী উপকারী।

২৫. মদীনা মুনাওয়ারার খেজুরের বিচি এদিক-সেদিক ফেলবেন না। কোন আদব সম্পন্ন জায়গায় অথবা সমুদ্রে ফেলবেন কিংবা বপন করে দেবেন। অথবা যাঁতাকল দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে ডিব্বায় ভরে রেখে দেবেন এবং সুপারীর স্থলে ব্যবহার করে সেগুলোর বরকত লুফে নিবেন। ‘মদীনা মুনাওয়ারা ’ হয়ে আসা যে কোন জিনিস চাই তা দুনিয়ার যে কোন ভূখন্ডের হোক না কেন, মদীনা পাকের আকাশের নিচে প্রবেশ করতেই সেটা মদীনার হয়ে যায়। সুতরাং আশেকগণ সেটার প্রতি আদব করেন।

♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
লিখাটি রযমান মাসের বিস্তারিত মাসাইল সম্পর্কিত “রমযানের ফযিলত” নামক কিতাবের ১৩০-১৩৩ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন। যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন

কমেন্টে জানাবেন আপনার অভিমত। ভাল থাকুন সুস্থ্য থাকুন।
আরো লিখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৭ রাত ১২:৩৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×