শিবলিঙ্গ অর্থাৎ লিঙ্গ বা প্রতীক কে বুঝায় । তবে হিন্দু ধর্মে শিবলিঙ্গ কে অনেক ক্ষেত্রে পু লিঙ্গই বুঝানো হয়েছে অথবা হিন্দু দেবতা শিবের একটি প্রতীকচিহ্ন কে বুঝানো হয়েছে । হিন্দু মন্দিরগুলিতে সাধারণত শিবলিঙ্গে শিবের পূজা হয় । শিবলিঙ্গকে অনেক সময় যৌনি চিহ্ন বা পুলিঙ্গের আক্রিতি সরূপ তৈরি করা হয়ে থাকে । আর হিন্দু ধর্মে যৌনী হল একটি মহাশক্তির প্রতীক শিবলিঙ্গ এবং যৌনির সম্মিলিত রূপটিকে নারী এবং পুরুষের অবিচ্ছেদ্য ঐক্যসত্ত্বা অথবা জীবনসৃষ্টির উৎস পরোক্ষ স্থান ও প্রত্যক্ষ কালের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে বা হয় । উনবিংশ শতাব্দীর শেষের ভাগে পাশ্চাত্য গবেষকরা লিঙ্গ এবং যৌনিকে নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । তবে হিন্দুরা শিবলিঙ্গকে সৃষ্টির পিছনে নারী ও পুরুষ উভয়ের অবদানের কথা স্মরণ করেই শিবলিঙ্গের পূজা করেন । একটি সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী শিবলিঙ্গ শিবের আদি অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক এক আদি এবং অন্তহীন স্তম্ভের রূপবিশেষ । নৃতাত্ত্বিক ক্রিস্টোফার জন ফুলারের মতামত অনুযায়ী হিন্দু দেবতাদের মূর্তি সাধারণত মানুষ বা পশুর অনুষঙ্গে বা রূপে নির্মিত হয় । সেক্ষেত্রে প্রতীকরূপী শিবলিঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যতিক্রম । আবার হিন্দুধর্মেরই কেউ কেউ মনে করেন লিঙ্গপূজা ভারতীয় আদিবাসী ধর্মগুলি থেকে হিন্দুধর্মে গৃহীত হয়েছে । তবে এর আবির্ভাব সে সঠিক তথ্য কেউই বলতে পারেন না । আর যত দূর ধারণা এটিই হল সম্ভবত হিন্দুদের লিঙ্গপূজার উৎস ।
কারোর কারোর মতামত অনুযায়ী যূপস্তম্ভ বা হাড়িকাঠের সঙ্গে শিবলিঙ্গের যোগ রয়েছে । উক্ত স্তবটিকে আদি অন্তহীন এক স্তম্ভ বা স্কম্ভ এর কথা বলা হয়েছে । এই স্কম্ভ চিরন্তন ব্রহ্মের স্থলে স্থাপিত । যজ্ঞের আগুন, ধোঁয়া, ছাই, মাদক সোমরস এবং যজ্ঞের কাঠ বহন করার ষাড় ইত্যাদির সঙ্গে শিবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং নানান গুণাবলির যোগ লক্ষিত আছে । কেউ কেউ বা মনে করেন কালক্রমে যূপস্তম্ভ শিবলিঙ্গের রূপ নিয়েছিল । লিঙ্গপুরাণে এই স্তোত্রটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি কাহিনির অবতারণা করা হয় । এই কাহিনিতে উক্ত স্তম্ভটিকে শুধু মহানই বলা হয়নি বরং মহাদেব শিবের সর্বোচ্চ সত্ত্বা বলে উল্লেখ করা হয়েছে । ভারত এবং কম্বোডিয়ায় প্রচলিত প্রধান শৈব সম্প্রদায় এবং অনুশাসন গ্রন্থ শৈবসিদ্ধান্ত মতে উক্ত শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান উপাস্য দেবতা পঞ্চানন পাঁচ মাথা বিশিষ্ট এবং দশভূজ দশ হাত বিশিষ্ট সদাশিব প্রতিষ্ঠা ও পূজার আদর্শ উপাদান হল শিবলিঙ্গ ।
এখনও পূজিত হয় এমন প্রাচীনতম লিঙ্গটি রয়েছে গুডিমাল্লামে । ক্লস ক্লোস্টারমায়ারের মতে এটি স্পষ্টতই শিশ্নের অনুষঙ্গে নির্মিত । লিঙ্গটির নির্মাণকাল খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী । শিবের একটি অবয়ব লিঙ্গটির সম্মুখভাগে খোদিত রয়েছে । আধুনিক ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে যা পাওয়া যায় তা হলঃ
১৮১৫ সালে আ ভিউ অফ দ্য হিস্ট্রি, লিটারেচার, অ্যান্ড মিথোলজি অফ দ্য হিন্দুজ গ্রন্থে লেখক ব্রিটিশ মিশনারি উইলিয়াম ওয়ার্ড হিন্দুদের অন্যান্য ধর্মীয় প্রথার সঙ্গে লিঙ্গপূজারও নিন্দা করেছিলেন । তার মতে লিঙ্গপূজা ছিল মানুষের চরিত্রিক অবনতির সর্বনিম্ন পর্যায় । শিবলিঙ্গের প্রতীকবাদটি তার কাছে ছিল অত্যন্ত অশালীন সে সাধারণর রুচির সঙ্গে মেলানোর জন্য এর যতই পরিমার্জনা করা হোক না কেন । ব্রায়ান পেনিংটনের মতে, ওয়ার্ডের বইখানা ব্রিটিশদের হিন্দুধর্ম সম্পর্কে ধারণা এবং উপমহাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্বের মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছিল । ব্রিটিশরা মনে করত শিবলিঙ্গ পুরুষ যৌনাঙ্গে আদলে নির্মিত এবং শিবলিঙ্গের পূজা ভক্তদের মধ্যে কামুকতা বৃদ্ধি করে । অবশ্য ১৮২৫ সালে হোরাস হেম্যান উইলসন দক্ষিণ ভারতের লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি বই লিখে এই ধারণা
খণ্ডানোর চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু তা সে পারেন নাই ।
ওয়াট ফো লিঙ্গম মনিয়ার উইলিয়ামস তার ব্রাহ্মণইজম অ্যান্ড হিন্দুইজম বইয়ে লিখেছেন লিঙ্গ প্রতীকটি শৈবদের মনে কোনো অশালীন ধারণা বা যৌন প্রণয়াকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয় না । জেনেন ফলারের মতে লিঙ্গ পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে নির্মিত এবং এটি মহাবিশ্ব রূপী এক প্রবল শক্তির প্রতীক । ডেভিড জেমস স্মিথ গবেষকেরা মনে করেন শিবলিঙ্গ চিরকালই পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গটি বহন করছে ।
এবং তাই করে যাবে এবং এর ব্যতিক্রম আর কিছুই না ।
অন্যদিকে এন রামচন্দ্র ভট্ট গবেষকেরা মনে করেন পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গটি অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের রচনা । এম কে ভি নারায়ণ শিবলিঙ্গকে শিবের মানবসদৃশ মূর্তিগুলি থেকে পৃথক করেছেন । তিনি বৈদিক সাহিত্যে লিঙ্গপূজার অনুপস্থিতির কথা বলেছেন এবং এর যৌনাঙ্গের অনুষঙ্গটিকে তান্ত্রিক সূত্র থেকে আগত বলে মতামত প্রকাশ করেছেন । রামকৃষ্ণ পরমহংস জীবন্ত লিঙ্গপূজা করতেন । ১৯০০ সালে প্যারিস ধর্মীয় ইতিহাস কংগ্রেসে রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন শিবলিঙ্গ ধারণাটি এসেছে বৈদিক যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ ধারণা থেকে । যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ হল বলিদানের হাড়িকাঠ । এটিকে অনন্ত ব্রহ্মের একটি প্রতীক মনে করা হত । জার্মান প্রাচ্যতত্ত্ববিদ গুস্তাভ ওপার্ট শালগ্রাম শিলা এবং শিবলিঙ্গের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে তার গবেষণাপত্রে এগুলিকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে সৃষ্ট প্রতীক বলেই উল্লেখ করা আর তা পাঠ করলে তারই প্রতিক্রিয়ায় বিবেকানন্দ এই কথাগুলো বলেছিলেন । বিবেকানন্দ বলেছিলেন শালগ্রাম শিলাকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গ বলাটা এক কাল্পনিক আবিষ্কার মাত্র । তিনি আরও বলেছিলেন শিবলিঙ্গর সঙ্গে পুরুষাঙ্গের যোগ বৌদ্ধধর্মের পতনের পর আগত ভারতের অন্ধকার যুগে কিছু অশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির মস্তিস্কপ্রসূত গল্প ।
স্বামী শিবানন্দও শিবলিঙ্গকে যৌনাঙ্গের প্রতীক বলে স্বীকার করেননি । ১৮৪০ সালে এইচ এইচ উইলসন একই কথা বলেছিলেন । ঔপন্যাসিক ক্রিস্টোফার ইসারউড লিঙ্গকে যৌন প্রতীক মানতে চাননি । ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়ায় Lingam ভুক্তিতেও শিবলিঙ্গকে যৌন প্রতীক বলা হয়নি । মার্কিন ধর্মীয় ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ওয়েনডি ডনিগারের মতে "For Hindus, the phallus in the background, the archetype (if I may use the word in its Eliadean, indeed Bastianian, and non-Jungian sense) of which their own penises are manifestations, is the phallus (called the lingam) of the god Siva, who inherits much of the mythology of Indra (O'Flaherty, 1973). The lingam appeared, separate from the body of Siva, on several occasions... On each of these occasions, Sivas wrath was appeased when gods and humans promised to worship his lingam forever after, which, in India they still do. Hindus, for instance, will argue that the lingam has nothing whatsoever to do with the male sexual organ, an assertion blatantly contradicted by the material "
এর অর্থ হলঃ
"হিন্দুদের, ব্যাকগ্রাউন্ডে পুংজননেন্দ্রি়, আদিরূপ (আমি তার Eliadean প্রকৃতপক্ষে Bastianian শব্দ ব্যবহার করতে পারি, এবং অ Jungian অর্থে) তাদের নিজস্ব penises প্রকাশ হয়, যার মধ্যে এর (লিঙ্গ বলা) পুংজননেন্দ্রি় হয় ইন্দ্র (ও'ফ্লাহের্তি তে, 1973) পুরাণ অনেক আহরণ করে যারা ঈশ্বরের শিব,. শিবলিঙ্গের, Sivas ক্রোধ শান্ত ছিল এই অনুষ্ঠান প্রতিটি ... বেশ কয়েকবার, শিবের শরীর থেকে পৃথক হাজির যখন দেবতা এবং মানুষের লিঙ্গ পুরুষ যৌন অঙ্গ সঙ্গে করতে সবটা কিছুই আছে ভারতে তারা এখনও. হিন্দু, উদাহরণস্বরূপ, তর্ক করবে না, যা, পরে সব সময় প্রবেশ তার লিঙ্গ উপাসনা করার প্রতিশ্রুতি, একটি বিবৃতি ক্রমেই অজ্ঞতা উপাদান "অসঙ্গতি
যদিও অধ্যাপক ডনিগার পরবর্তীকালে তার দ্য হিন্দুজ অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি বইতে তার বক্তব্য পরিষ্কার করে লিখেছেন । তিনি বলেছেন কোনো কোনো ধর্মশাস্ত্রে শিবলিঙ্গকে ঈশ্বরের বিমূর্ত প্রতীক বা দিব্য আলোকস্তম্ভ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । এই সব বইতে লিঙ্গের কোনো যৌন অনুষঙ্গ নেই । হেলেন ব্রুনারের মত অনুযায়ী লিঙ্গের সামনে যে রেখাটি আঁকা হয় তা পুরুষাঙ্গের গ্ল্যান্স অংশের একটি শৈল্পিক অনুকল্প । এই রেখাটি আঁকার পদ্ধতি মধ্যযুগে লেখা মন্দির প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত অনুশাসন এবং আধুনিক ধর্মগ্রন্থেও পাওয়া যায় । প্রতিষ্ঠাপদ্ধতির কিছু কিছু প্রথার সঙ্গে যৌন মিলনের অনুষঙ্গ লক্ষ্য করা যায় ।
যদিও গবেষক এস এন বালগঙ্গাধর লিঙ্গের যৌন অর্থটি সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেছেন ।
সর্ব শেষ যা বুঝা যায় আসলে লিঙ্গ পুজা বলে যে পুজাটি হিন্দুরা করেন এটাও তাদের হাতে বানানো একটি পুজা ।