অনেকদিন ধরেই একটা বিষয় মন এবং মাথা দুটোকেই পীড়া দিচ্ছে। বলি বলি করে বলা হয় না আর লিখি লিখি ভেবে লেখা হয় না । অনেকটা অলসতা অনেকটা বিরক্তি । তো শুরু করা যাক , প্রসঙ্গ হল কারো অনুমতি ব্যতিরেকে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়াটা কি সামাজিকতা নাকি অনধিকার চর্চা ?
যেমন ধরা যাক , বন্ধুদের সাথে কোথাও ঘুরতে গেলাম, পরিবারের স্বজনদের সাথে মিলিত হলাম , এমনকি অফিসের কলিগরা কোনো অনুষ্ঠানে দেখা করলাম আরও অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। এখন দিন শেষে অথবা ছবি তুলতে তুলতে আমরা ছবি আপলোড দিয়ে ফেলি ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে )। এবং আমরা আমাদের ছবি আমাদের নিজেদের ওয়ালে শেয়ার দেই এবং সাথে থাকা মানুষ গুলোকে ট্যাগ করে দেই যাতে করে বাকিরাও ছবি গুলো নিজেদের ওয়ালে পেয়ে যায় । এতে করে একসাথে অনেকের স্মৃতি থাকে।
কিন্তু অামরা যখন ছবি শেয়ার দেই নিজেদের ওয়ালে তখন কেউ পাবলিক ভাবে দেই, কেউবা প্রাইভেট করে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি । অনেকেই আছে যারা শুধু গুটি কয়েক মানুষের সাথে শেয়ার করতে চায় অথবা করতেই চায় না। অনেক মানুষকেই আমরা ফেসবুকে সামাজিকতার জন্য বন্ধু করে নেই যদিও তারা বন্ধু নন এদের অনেকের সাথেই আমরা হয়ত পারিবারিক প্রোগ্রামের ছবি শেয়ার করতে চাই না অথবা চাই না পরিবারের অন্য কেউ তা করুক । এখন আমরা যদি তা পাবলিক ভাবে শেয়ার করি অথবা আমার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি তাতে কিন্তু আমার পরিবারের কারো কারো আপত্তি থাকতেই পারে এবং এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি অনুমতি ছাড়া ছবি দেয়া উচিত না। আমরা যখন ছবি শেয়ার দেই অনুমতি নেয়া কিন্তু উচিত যে বাকিদের ছবি আপলোড দেয়া যাবে কিনা ? এটা ন্যূনত্বম ভদ্রতা । প্রশ্ন আসতে পারে যারা ছবি ফেসবুকে দিতে চান না তারা ছবি তুলে কেন ? আমি অনেক প্রোগ্রামে যেয়ে বিব্রত হয়েছি ছবি তুলতে চাই না বলে। সবাই তুলছে সেখানে না করলে পরিবেশটাই বদলে যায়। কিন্তু ছবি তুললাম নিজের জন্য সেটা কেন ফেসবুকে দিতে হবে? আর অনুমতি না নিয়ে আরেকজনের ছবি তুলা এবং শেয়ার করা দুইটাই অনধিকার চর্চা এবং অন্যায়।
এবার আসা যাক কিছু ঘটনায় ,
ঘটনা ১ঃ আমার এক বড় ভাইকে দেখলাম তার মায়ের সাথে ছবি দিয়েছেন যিনি কিনা হজ্জ করে এসেছেন এবং খালাম্মা হয়ত জানেনই না যে তার ছেলে ফেসবুকে তার ছবি দিয়েছেন জানলে উনি কোনোদন মেনে নিতেন বলে মনে হয়না ।
ঘটনা ২ঃ আরেক বড়ভাই যিনি এবং তার পুরো পরিবার ধার্মিক এবং মহিলারা পর্দা করা , উনি সবাইকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেয়ে দেয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েেছেন , আমার ধারনা ছবির মানুষগুলোর ফেসবুকের সাথে যোগাযোগই নেই অথচ সবাই তাদের চিনছে জানছে। এটা কি অন্যায় নয় ?
ফেসবুক একটা বাজার সেই বাজারে যার তার সামনে ঘরের কাপড় পরে যাওয়া যায় না অথচ আমরা সেই ঘরের কাপড়ে ছবি দিয়ে দেই ফেসবুকে (উদাহরন স্বরূপ মাছ কাটার ছবি ) । আবার সেলফি তুলছি হয়তো আমার পেছনে কেউ আছে আমি পাত্তাই দিলাম না তুলে ফেললাম ছবি।
ঘটনা ৩ঃ আমার এক জুনিয়র একটা ছবি এভাবে তুলে ফেসবুকে দিল যেখানে পাশ থেকে অন্য আরেকটা মেয়ের ছবি উঠলো এবং সবাই ওই মেয়েকেই নিয়েই মন্তব্য করতে থাকলো , অথচ মেয়েটা জানলো না তার অগোচরে এসব হল। এটা কি অন্যায় হল না? মেয়েটার ছবি ঝাপসা করে দিলে কিন্তু সমস্যা হয়না ।
আরও তো আছে মজা করার উদ্দেশে হাতে ফোন আছে তুলে ফেলল ছবি, দিয়ে দিল সামাজিক মাধ্যমে , লাইক কমেন্টে ভরে যায় সেই অজানা মানুষটার ছবিতে। অথচ মানুষটা হয়ত জানেই না।
ঘটনা ৪ঃ কিছুদিন আগে একদিন বাসে করে ফিরছি আমার সামনে এক মহিলা তার বাচ্চা সহ উঠেছেন , তার সীট এমন যে আমি সামনে না ঝুঁকে তাকালেই তার ফোনে কি করছে তা দেখা যায়। মহিলা একটা সেলফি তুলল এবং কাউকে মেসেজে পাঠিয়ে দিল যখন সে সেন্ড করল আমি দেখতে পেলাম আমার চেহারা পুরো দেখা যাচ্ছে তার সেই ছবিতে , এমন সময় আমার মনে চাচ্ছিল মহিলাকে কিছু বলি কিন্তু কি বলব ? আমি তার ফোনে দেখেছি এটাও তো অন্যায় যদিও তার সীটের পজিশানটাই এমন । সেদিন খুব রাগ হচ্ছিল কিন্তু এই মহিলার মত বহু বেআক্কেল আছে যারা এই ভাবে সেলফি তুলে অন্যকে বিপদে ফেলে।
ঘটনা ৫ঃ আমার আম্মু একবার তার খালা (আমার নানী হবে ) , তিনি টিভি দেখেন না , পর্দা করেন খুব বেশি , এবং হজ্জ করে এসেছেন তাঁর ছবি ফেসবুকে দিয়ে দেন। দেখার সাথে সাথে আমি বুঝিয়ে বলি যে উনি পর্দা করেন জেনেও আপনি ফেসবুকে দিলেন কি বুঝে ? উনি তো কাওকে মুখ দেখান না আর আপনি সবাইকে উনার মুখ দেখাচ্ছেন ! পরে আম্মু তা সরিয়ে ফেলেন। এই ভাবে অতি ভালোবাসা দেখাতে যেয়ে বয়স্ক নানীর দাদীর ছবি ফেসবুকে দিয়ে তাদের সাথে অন্যায় করছি ,যেটা আদৌ আমাদের মাথায় ধুকছে না ! এখন আমরা যদি সময় থাকতে না বুঝি এবং প্রতিবাদ না করি, সচেতন না হই তবে বেশিদিন দুরে নয় যেদিন আপনি অথবা আপনার কাছের কেউ এই সমস্যার শিকার হবে।
ঘটনা ৬: মৃত ব্যক্তির ছবি দিয়ে ফেসবুক ভালোবাসা দেখানো । এই ভালোবাসা কি সে মৃত ব্যক্তি দেখতে পাচ্ছে ? আপনি কি তার অনুমতি নিয়েছেন তার ছবি দেয়ার আগে ? না হয়ে থাকলে আপনি অনধিকার চর্চা করছেন এবং অন্যায় করছেন। পোস্টটি লেখার সময় একজন ঠিক এই কাজটি করল ! কিভাবে বুঝাবো যে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে তো অন্যায় হচ্ছেই সেই মানুষটার সাথে পাশা পাশা অনধিকার চর্চাও হচ্ছে , ছবি ছাড়াও স্মৃতিচারণ করা যায় !
অনেকেই অনুরোধ করলে ছবি মুছে দেয় অনেকে আবার খুব বিরক্ত হন।
তাই এখন থেকে দয়া করে সামাজিক মাধ্যমে ছবি শেয়ারের আগে যেনে নিন কার ছবি শেয়ার করছেন , তার অনুমতি নিয়ে নিন। সে বাচ্চাই হোক আর বুড়োই হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫১