একজন মানুষ কতভাবে বিখ্যাত হতে পারে ? তার কাজের দ্বারা , কথার দ্বারা এবং তার আচরণ দ্বারা। একজন মানুষ ঠিক এই উপায় দিয়েই কুখ্যাত হতে পারে । আগে একটা সময় ছিল যখন পাড়ার ভাবীরা / মা খালারা একে অন্যের সাথে গীবত নামক গাল গল্পে মেতে উঠতেন আর এলাকার কার ছেলে কার মেয়ে কি করেছে (অবশ্যই মন্দ কাজ) এর আলোচনা করতেন। একটা সময় ডিশ এলো তাদের আলাপের বিষয় হল সিরিয়াল । তাও ভালো ছিল।
সেই সময় খুব দ্রুত চলে গেল আর একটা অদ্ভুত গ্লোবালাইজেশনের ফাঁদে পড়ে সবাই সোশ্যাল হয়ে উঠলাম। যার সাথে কোন দিন কথাও হয়নি তার সব কিছুই এখন এই সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আমার চোখের সামনে। হয়ত আমার ১০ বছর আগের স্কুলের বান্ধবী এখন মডেল তার সাথে আমার হাই হ্যালো সম্পর্কও ছিল না এখন এই সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তাকে আমি ফলো করি, তার কাজে অকাজে টিপ্পনী কাটি , লাইক দেই, শেয়ার দেই। হয়তো এই কাজটাই আগের মা খালারা এক চায়ের আড্ডায় করতেন। আর এখন এই কাজ সবাই করছে , শিশু থেকে বৃদ্ধ সব সময় ।
আবার ,
১) সেদিন এক মডেল আত্মহত্যা করলেন, এটা এতোই শেয়ার হল যে আমরা যারা চিনতামই না তারাও তাকে চিনলাম।
২)এই নায়লা নাইমকে আগে কয়জন চিনত ? সালমান ইউটিউবারে নোংরা গানের কল্যাণে সবাই তাদেরকে এখন চিনে। সালমানকেও আমি সেভাবে চিনেছি।
৩)ইদানিং প্রায়ই ফেসবুকে দেখি কিছু নেকা মেয়ে নেকামি করছে আর বাকিরা সেটা শেয়ার দিয়ে বলছে ছি কিভাবে এমন করে ? এই মেয়েগুলা এত বেহায়া কেমনে হয় ?? আরও কত কি , অথচ এই মেয়েটার ভিডিও ভিউ বারিয়েছে এই শেয়ার অ্যান্ড এই কমেন্ট করে, আরও দশ জন সেটা দেখেছে। আমার ওয়ালে যখন এসেছে তখন শেয়ার ১০/২০ , কতক্ষন পর দেখি ১০০০০ এটা এমন না যে শুধু শেয়ারের জন্যই হচ্ছে, আমাদের নিচু মন মানসিকতার দরুন আমরা এদেরকে ফলো করে রাখি যাতে ভবিষ্যতে তার সব মন্দ পোস্টও আমাদের ওয়ালে আসে । আর আমি গালি দিয়ে দুনিয়া উদ্ধার করতে পারি। এতে কি লিসেনার বেড়ে গেলো না ? ভিউ বারলো না? তার তো উপকারই হচ্ছে তাই না?
৪) ব্লগেও দেখেছি কেউ হয়ত একটা মন্দ/আক্রমণাত্মক পোস্ট দিয়েছে কাউকে হেয় করে , অথবা কোন জাতি / কোন ধর্মকে হেয় করে। কিছু মানুষ আছে যারা পোস্টে যেয়ে মন্তব্য দিয়ে আসছেন , এটা উত্তম। কেউ রিপোর্ট করছেন এটাও উত্তম। আর কেউ সেই পোস্টের সুত্র ধরে আরেকটি পাল্টা পোস্ট দিলেন ক্লারিফাই করার জন্য । আমার মতে তৃতীয় কাজটাই বর্জনীয় । পোস্ট যদি মনে হয় কারো মতাদর্শে আঘাত হানছে তবে রিপোর্ট করুন রিপোস্ট কেন? এতে কি রিডার বেড়ে গেলো না ? ভিউ বারলো না? তার তো উপকারই হচ্ছে তাই না?
৫) এবার বুঝলেন তো আমরা কিভাবে কুখ্যাতিকে আমরা বানাই খ্যাতি ?এভাবেই আমরা প্রতিনিয়ত ফেসবুকে , ইউটিউবে , ব্লগে নেগেটিভ রেটিং এর জিনিসকে উচ্চ রাঙ্কিং এ পৌছে দিচ্ছি ।
৬) এ শুধু ফেসবুক নয় সকল অনলাইন মিডিয়ার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । বর্জনীয় যদি হয় তবে আমার আপনার দায়িত্ব জিনিসটা আমাদের নজরে আসলেই রিপোর্ট করা , গালাগাল করে তার খ্যাতি না বাড়ানো ।
আমার লেখার উদ্দেশ্য কাউকে হেয় করা নয়, আমার উদ্দেশ্য সচেতনতা । শুধু সমালোচনা না করে সমান ভাবে যদি আমরা উদ্যোগ নেই তবে এই কুখ্যাতি কুখ্যাতিই রবে , খ্যাতি হয়ে আমাদের সামনে ঘুরবে না ।
ভালো থাকবেন সবাই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ২:৩২