খুব ছোট ছিলাম তখন,তবুও যতদূর মনে পড়ে আমার প্রথম হলে গিয়ে দেখা সিনেমা ছিল “আগুনের পরশমণি”। তখন এতকিছু বুঝতাম না,, শুধু মুগ্ধ হয়ে বিপাশা হায়াত আর শিলা আহমেদকে দেখার কথাই মনে পড়ে

পরে অনেকবার দেখেছি মুভিটা, খুব ভালোলাগা বাংলা মুভিগুলোর মধ্যে “আগুনের পরশমণি”র নাম সবসময়ই থাকবে!
এরপর দেখা হয়েছে আপনার নির্মিত প্রায় সবগুলো সিনেমাই – “শ্রাবণ মেঘের দিন” বেশ ভালো লেগেছিল, কিন্তু “দুই দুয়ারি”-“চন্দ্রকথা”-“নয় নাম্বার বিপদ সংকেত”-“আমার আছে জল” কিংবা “শ্যামল ছায়া”—কোনটাই খুব বেশি ভালো লাগেনি।তাই হয়তো কিছুটা কম প্রত্যাশা নিয়েই আজ বলাকা সিনেমা হলে দেখতে গিয়েছিলাম আপনার সর্বশেষ চলচ্চিত্র “ঘেঁটুপুত্র কমলা”।কিন্তু সত্যি স্যার,আপনার শেষ ম্যাজিক যে এতটা দুর্দান্ত হবে তা একদমই ভাবতে পারিনি!
খুব স্পর্শকাতর একটা বিষয় নিয়েও যে হাসি-কান্না-গান আর নাচের মিশেলে একটা চমৎকার সিনেমা তৈরি করা সম্ভব তার বাস্তব একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে আপনার “ঘেঁটুপুত্র কমলা”।উচ্চবিত্তের বিনোদনের নামে কি নির্মমভাবে ধ্বংস করে দেয়া হত সহজ সরল কিছু গ্রাম্য কিশোরের জীবন-তা আশ্চর্য সাবলীলতায় তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়।কাহিনীর কোথাও খুব একটা এলোমেলো বা অবাস্তব লাগেনি, হাওড়ের দৃশ্যায়ন – জমিদারবাড়ির সাজসজ্জা যথাযথ লেগেছে। কয়েকটা জায়গায় ক্যামেরার কাজ ছিল অসাধারণ – ২ ভাই-বোন তুমুল বৃষ্টির মাঝে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে লড়াই করছে আর পানিতে রংধনুর ছায়া পড়েছে- এই চমৎকার দৃশ্যটা অনেকদিন চোখে ভাসবে!
এই সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী ২ টি দিক মনে হয়েছে অভিনয় আর সম্পাদনা।বিশেষ করে জহির/কমলা(মামুন) আর জমিদারকন্যা ফুলরানী (প্রান্তি) – এই দুই শিশুশিল্পীর অভিনয় ছিল দারুণ। জহির/কমলার কষ্ট-আনন্দ-শুন্যতা সবকিছুই মামুনের চেহারায় কম-বেশি এসেছে।জমিদার চরিত্রে তারিক আনাম খান চমৎকার।শামীমা নাজনীন, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়,মুনমুন আহমেদ,প্রাণ রায় সবাইকেই সাবলীল মনে হয়েছে নিজ নিজ চরিত্রে।
গানগুলো যথারীতি ভালো এবং ‘যমুনার জল দেখতে কালো’ গানটা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই হল ভর্তি দর্শকদের হাত তালি জানান দেয় আপনার বইগুলোর সূত্র ধরে এই গানের জনপ্রিয়তার।
অনেকদিন পর একটা বাংলা সিনেমা দেখে সত্যিকার অর্থে ভালো লাগলো – সুনির্মিত মনে হল।সেই সাথে মনটা খারাপ হয়ে গেল এটা ভেবে যে আপনার আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিল আমাদের মুভি ইন্ডাস্ট্রিকে

মানুষ হিসেবে এখনও আপনাকে খুব একটা পছন্দ করি না,কিন্তু আপনার সৃষ্টিগুলোকে অসম্মান করার স্পর্ধা আমার নেই – সেগুলো সত্যিই আমাদের দেশের-আমাদের ভাষার সম্পদ হয়ে থাকবে।
মেঘের ওপর যে বাড়িতেই থাকুন না কেন,ভাল থাকবেন স্যার...
(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যারা অনন্ত কিংবা শাকিবের বাণিজ্যিক মুভি দেখার জন্যে হলে যাওয়ার দরকার মনে করেন না কিংবা ফারুকির মুভি দেখে আঁতলামি মনে হয় বলে হলে যান না তারা একটু কষ্ট করে এই মুভিটা হলে গিয়ে দেখুন।আমাদের সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান কথার জাদুকরের শেষ জাদুটা দেখে আসুন- আশা করি হতাশ হবেন না......)