রাজন সুইসাইড করবে ,
ঠিক করেছে সে রাত ৯ টায় সুইসাইড নোট লিখবে আর ঠিক সাড়ে দশটায় সুইসাইড করবে ।
এখন বাজে সকাল এগারো টা , সে এটা ঠিক করেছে সকাল ৯টা ২৩ মিনিটে ।
তখন থেকে সে তার রুম তন্ন তন্ন করে একটা জিনিস খুজতেছে । কি খুজতেছে ?
কি যে খুজতেছে সে নিজেও মনে করতে পারতেছে না । এর মধ্যে তার দুইটা পুরোনো প্রেম পত্র ,একটা নস্ট ঘড়ি, একটা লাইটার আর তিন টা এক টাকার পয়সা খুজে পেয়েছে । খোজাখুজি কিছুক্ষন বাদ দিয়ে সে প্রেম পত্র পড়া শুরু করলো ,
প্রেম পত্র ১ঃ
ঐ ,
তুই জানিস তোকে আমি কতো ভালোবাসি ? আমি যখন রাস্তার ধারে দ্বাড়িয়ে বার্গার খাই তখন লোম পোড়া কুকুর এসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে বার্গারের লোভে । আমি সেটা তাকে না দিয়ে তোর জন্য রেখে দেই । কারন আমার বিশ্বাস তুই আসবি ।
তোর এসে কিছু বলার আগেই আমার হাতের শক্ত একটা থাপ্পড় খাবি । আচ্ছা তুই কবে আসবি ? যাইহোক আই লাভ ইউ ।
তুই আমার কাছে পোষা কুত্থার মতো যদিও তোকে আমি আমি মানুষের মতই ভালোবাসি ।
রাখলাম ,
রাজন
চিঠিটা অপ্রিয় রিনা কে তার ১৯ তম জন্মদিনের ঠিক পরের দিন লেখা । অনেক ইচ্ছে ছিল দেওয়ার কিন্তু ডাক টিকেট কেনা হই নি বলে তাকে পাঠানো হয় নি ।
মনে কেমন এক আক্রোশ জমে গিয়েছিলো তার জন্য আর একটা আধুলিও খরচ করবো না ।
প্রেম পত্র ২ঃ
ভালো আছো ,
অনেক দিন একসাথে বসে বাদাম খাই না । জানো আজকে আমি পার্কে গিয়েছিলাম কিছুক্ষন বসে বসে সিগারেট খেলাম । আজকে না খুব মজা করে সিগারেট খেয়েছি কেউ বাধা দেবার ছিলো না । তারপরেও কেন যেন শান্তি ছিলো না । কিছুক্ষন পর পিচ্চি মাসুদ এসেছিলো । মাসুদ কে মনে আছে তো নাকি ? যে মাসুদ আমাদের প্রথম ডেটের দিন আমাদের কে ২৫ টাকার বাদাম গিফট দিয়েছিলো । আজকে সে এসে বললো রাজন ভাই বাদাম খাবেন ? আমি আজকেও ২৫ টাকার বাদামই নিয়েছিলাম ।
ইতি,
রাজন
এ চিঠিটা রিনার ১৮ তম জন্মদিনে লেখা । এ সময় রিনার ঠিকানা জানা ছিলো না তাই দেওয়া হয় নি । শেষে জায়গা হয়েছে সিগারেটের প্যাকেট ভর্তি ড্রয়ারের এক কোণে ।
রাজন চিঠি দুইটা পড়া শেষ করে বেড়িয়ে পড়লো । রাতে সে সুইসাইড করবে এখনো তার অনেক কাজ করা বাকি । আগে যাওয়া যাক শাম্মি দের বাসায় অন্তত তার কাছে কেবার ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার ইচ্ছা তার । শাম্মি এক কালে রাজনের প্রেমিকা হবার জন্য গোটা কয়েক ইন্টারভিউ দিয়েছিলো । কিন্তু রাজন সে সব ইন্টারভিউ অগ্রাহ্যই করে দিয়েছিলো । শাম্মির লেখা কয়েক টা চিঠিও ছিলো রাজনের কাছে । রিনার ১৮ তম জন্মদিনে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলেছে । তার একটা আবছা মনে করতে পারছে সে ।
শুনছো ,
আমি জানি তুমি পৃথিবীকে শূনতে পেলেও আমার ডাক কখনোই শুনতে পাও না । আমি এখনো তোমার অপেক্ষায় একা বারান্দায় জোড়া চেয়ার পেতে দুই মগ কফি নিয়ে বসে থাকি । রাত বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে চাঁদ এসে আমার কফির মগের দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকাই আমি তার দিকে মিষ্টি হাসি দেই । একসময় জোছনা এসে আমার বিপরীত এ থাকা চেয়ার টায় পড়ে । আমার তার সাথেই বসে গল্প করি ।
ভালো থেকো ,
শাম্মী
তখন চিঠিটাকে কেমন যেন অসহ্য ফালতু মনে হয়েছিলো । আর এখন সেগুলো মনে করেও হালকা হালকা রোমান্টিক ফিল হচ্ছে । । আসলে মেয়ে জিনিস টাই এরকম আপনার মধ্যে রোমান্টিকতার জন্ম দেয় । কিন্তু দিন শেষে নীল আকাশের মতোই ভ্রান্ত ধারনার জন্ম দেয় । এসব ভাবতে ভাবতেই শাম্মির বাসা যাবার প্লান বাদ দিয়ে দিলো রাজন ।
রাজন রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে পাশের চায়ের দোকানে এসে দ্বাড়ালো এক কাপ চায়ের সাথে একটা বেন্সন ব্লু গোল্ড সিগারেট ধরালো । সারাজীবন আড়াইটাকা দামের সিগারেটই খেয়ে এসেছে । মাঝে মাঝে সে এটা খায় । যেহেতু সে আজকে সুইসাইড করবে সেহেতু আজকে ব্লু গোল্ড খাওয়াই যায় ।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০৭