রোমান্টিক ছেলেদের জন্য চমৎকার দিন। সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাবটা আছেই। আরিফের মনে এসবের কোন প্রভাব নেই। বাসায় খিচুড়ি রান্না হয়েছে। বড় আপা আসছেন, মা তাই শত ঝামেলার মধ্যেও খিচুড়ি রাঁধবেই। আরিফ ভাবছে অন্য কথা, আত্মহত্যা টা আজকে সেরে ফেললেই কেমন হয়? অনেকদিন ধরেই তো ভাবছে...
গলায় দড়ি দেওয়া ওল্ড ফ্যাশন, একতলা বাড়ি, ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে লাভ নাই, ব্যস্ত শহরে ট্রেনের তলে পরার আগে পাবলিকে টেনে তুলবে। তার চেয়ে চমৎকার জিনিস আছে, চকচকে ক্ষুর টা। কুট করে হাতের ভেইন টা কেটে ফেললেই কাজ শেষ। কেটে ফেলার আগে পানির বোতলে কয়েকটা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে নেওয়া, কাজ শেষে ঘুমে যাওয়া। বাকি কাজটা বাসার লোক না করতে চাইলেও পাড়ার লোকে উৎসাহের সাথে করবে। জানাযা, দাফন,মিলাদ আর কি। আরিফের ঘরে কারো মরন ডাক না আসলে কেউ ঢুকে না। সো আর বেঁচে যাওয়ার কোন ঝামেলা নেই। আজকেই সেরে ফেলা যাক, শুভ কাজে দেরি করতে নেই।
শুভ কাজ, জীবনে শুভ কাজের দেখা কি পেয়েছে আরিফ। জন্মের পর থেকেই বাসায় অভাব জিনিসটা দেখছে। ওর বেলায় খালি টাকার সমস্যা থাকে। তাই তো বন্ধুরা যখন নেপাল গেলো, ঐ চেয়ে থাকলো। সুবিরের আব্বা তো ছোট চাকরি করে, তাও কোথা থেকে টাকা জোগাড় করে সুবির কে বিদেশে পাঠালো। ওর বেলায় কিছু না। অথচ সুবিরের চেয়ে আরিফের যোগ্যতা বেশি ছিল। চাকরির জন্য রাজনীতি করতে চেয়েছিল সেটাও করতে দেয় নি তার মা। সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসা সেদিন জেগে উঠেছিল অনেক গুনে।
ভালোবাসা, হ্যা একবার দেখা পেয়েছিল আরিফ। সামিয়াকে মনে হয়েছিল তার জীবনের আশীর্বাদ। স্বপ্নের মত কেটে যাচ্ছিল রঙিন দিন গুলি। সামিয়া বার বার বলত, “আরিফ একটা চাকরি যোগাড় করে ফেলো, বেশিদিন তো আমাকে অপেক্ষা করতে দিবে না”। আরিফ হতাশ হয়ে দেখল, সমাজ সামিয়া কে অপেক্ষা করতে দেয়নি। গোলগাল ডাক্তারি করা ছেলেটা হাসতে হাসতে সামিয়া কে নিজের বউ বানিয়ে ফেলল। আরিফ সেদিনও তাকিয়ে ছিল। কিছুটা হতাশ হয়ে।
হতাশ, আরিফ আসলেই হতাশ। নিজের উপর, সমাজের উপর। পরিবারের উপর, বন্ধুর উপর। বন্ধুরা সবাই ব্যস্ত, ফোন দিলে সময় হয় না। পরিবার কি জানে আরিফ নামে একটা ছেলে ওদের বাসায় থাকে? মনে হয় না। তাই এখন মৃত্যু ছাড়া গতি নাই। সৃষ্টিকর্তা তো হুট করে একটা জোয়ান ছেলে কে উঠে নিবে না, তাই আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নাই। সিদ্ধান্ত টা পাকাপাকি ভাবে নিয়ে ফেলল আরিফ। এই কাজ টা ভাল করে করি। নিজে বেঁচে যাবো ঝামেলা থেকে। সমাজ বেঁচে যাবে ঝামেলা থেকে। সুন্দর দিন, চমৎকার ব্লেড। একবার পোঁচ মারলেই হবে। একটু চেপে ধরে গভীরে বসিয়ে একটা টান।
দরজা দিয়ে কে যেন ঢুকছে। চমকে গেল আরিফ। গুটি গুটি পায়ে ঘরে ঢুকলো মাহিন। ফোলা ফোলা গালে হাসি লেগে আছে। আরিফ কে দেখে, “মাম্মা মাম্মা” করে কাছে আসতে থাকলো। “সিউর কোলে উঠবে” ভেবে হাসি চলে আসলো আরিফের মুখে। এই পিচ্চি একমাত্র সদস্য যে নিয়মিত আরিফের ঘরে আসে। বয়স কত হল দুই বা আড়াই। হয়ত ঠিকই বুঝে এই লোকটার কাছে যাওয়া উচিত তার দুঃখ কমানোর জন্য। বিছানা থেকে নেমে মাহিন কে কোলে তুলে নিলো আরিফ। ভাবলো পিচ্চি টা কে বারান্দায় নিয়ে যেয়ে বৃষ্টি দেখায়।
কেউ যদি আরিফ আর মাহিন কে দেখতো, কল্পনাও করতে পারতো না যে এই আরিফ ছেলেটা আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিল কিছুক্ষণ আগে।
ডিসক্লেইমারঃ এই ধরনের গল্প লিখার জন্য যে পরিমান গল্প লেখনীর ক্ষমতা থাকা লাগে তা আমার নেই। তাই সেই রকম হয়নি সম্ভবত। তাও আজকের ডামাডোলের মাঝে মাথায় আসলো বলে লিখলাম।