ইউনিভার্সিটি লাইফের শেষ ক্লাস পার্টি। যথারীতি আয়োজক জয়। তবে সে মুচকি মেরে হাসছে কিছুক্ষণ ধরে। ছেলে মেয়ে গুলো হা করে দেখছে যে তাদের প্রিয় চকলেট কেক গুলো মানুষের পেটে যাচ্ছে। কেক তো মুখে মাখার জন্য, খাওয়ার জন্য কি? একমাত্র জয় জানে শুধু ক্রিম দিয়ে একটা কেক বানানো আছে, সবার মুখে আজ মাখানো হবে। এর পর তো শুরু হবে বিদায়ের পালা...
মোবাইলের ভাইব্রেসনে চমকে উঠল, এসএমএস দিলো কে? অবন্তী এসএমএস দিয়েছে। হাসি মুখে পড়তে যাবে, কিন্তু চমকে উঠল, কি লিখেছে অবন্তী? “জয় আমাকে ক্ষমা কর,কথাটা মুখে বলার সাহস আমার নাই, কিন্তু কিছুতেই রিলেশনশিপ আমি কন্টিনিউ করতে পারছি না, কিছুতেই না”। থমকে গেলো জয়ের সময় টুকু। মাথায় আসলো না কল দেয় কিংবা রিপ্লাই এ কিছু বলে। ক্লাসের ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে হাঁটা দিল বাসার উদ্দেশ্যে। পিছনে বন্ধুদের উৎসব শুরু হয়েছে। অনেকেই জয় কে খুঁজল, কিন্তু ক্লাসে নেই সে।
একটু পিছনে ফিরে চাইলে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মারকুটে ছেলে জয়। পাশ করে বের হয়ে ফার্ম খোলার ইচ্ছা তার। শৃঙ্খলতায় বিশ্বাস নাই। জুনিয়র এক ছেলের গালে চড় বসিয়ে দিয়েছিল একবার। সবকিছু বদলে গেলো অবন্তী আসার পর। রিলেশনে শুরু হয়েছিল ধীরে ধীরে। কোন এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পরিচয়, বাধ্যে হয়ে বৃষ্টির দিনে এক ছাতার নিচে, শরতের সেই মুগ্ধ করা বিকেলে সাদা মেঘ কে সাক্ষী মানা। বদলে গেল জয়। সেই জুনিয়র ছেলের কাছে ক্ষমা চাওয়া, নিজেকে শৃঙ্খলতায় আনা। শুধু অবন্তীর জন্য প্রথমে একটা চাকরি পেতে হবে। ফার্মের চিন্তা বাদ।
একটু আলাদা ছিল তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। মটর বাইকে না, কে এফসি না। রিক্সায় হাত দুটো ধরে ঘুরে আসা, মাসে একবার নিয়ম ছোট্ট কোন হোটেলে বিরিয়ানি খাওয়া। গোধূলি বেলায় হাঁটতে হাঁটতে স্বপ্ন গুলো বুনে চলা। নতুন করে ছোট্ট জীবন কে চেনা।
পরের দিন সন্ধ্যা বেলায় ফোন আসলো জয়ের কাছে:
- জয়?
- জি বলছিলাম
-অবন্তীর বড় ভাই
-ও ভাইয়া কেমন আছেন
- ভাইয়া, আমার বোন কে, আমার পরিবার কে ক্ষমা করে দাও। সত্য ভালোবাসার যোগ্য না আমরা।
- ভাইয়া আমি তো ওর জন্য...
- জানি জয়, কিন্তু বাদ দাও। ও তো তোমার সাথে কথা বলতে পারবে না, তাই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
- আমার কি দোষ ছিল?
- না অনেক কিছু বললে হয়ত পরিস্থিতি বুঝবা, কিন্তু বলে কোন লাভ নাই। আজকে রাখছি।
সেদিন রাত্রি বেলায় নীল ফেসবুকের হোমপেজে অবন্তীর একটা স্ট্যাটাস ভেসে উঠল, “ সারা জীবন পাপী হয়ে থাকব একজনের কাছে। ক্ষমা চাইবো না, ক্ষমা পাবার যোগ্যতাটুকু কেড়ে নেওয়া হয়েছে”। ঐটায় ছিল ফেসবুকে অবন্তীর শেষ স্ট্যাটাস। অ্যাকাউন্ট ডি একটিভ করে দেয় সে।
“স্যার, ঐ দেড় লক্ষ টাকার প্রজেক্ট টা আমরা পাচ্ছি বুঝছেন”। তার ফার্মের কর্মকর্তা ফারুকের কথায় বাস্তবে ফিরে আসলো জয়। কয়েকটা বছর কেটে গেছে। “ও, তাহলে তো ভালই ফারুক, আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করে দেয় নাকি?”। “জি স্যার, স্যার একটু ছুটি নিতাম দুপুরে, একসাথে লাঞ্চ করার কথা, ও অপেক্ষা করছে”। জয় হেসে বলল, “ও তা যান তাড়াতাড়ি। কাজ তো হয়ে গেছে”। হাসতে হাসতে স্যারের রুম থেকে বের হল ফারুক, ওর রিলেশনের ব্যাপারে স্যার জানে, পজিটিভ সাপোর্ট দেন তিনি।
অপেক্ষা, করে যাচ্ছে জয়। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস আছে তার। কত অলৌকিক কিছু না ঘটে এই পৃথিবীতে, তার জীবনেও ঘটতে পারে। হয়ত এমন কোন এক দুপুরে আসবে ফোন, অবন্তী বলে উঠবে, " কি ব্যাপার, ফার্ম নিয়ে বিজি, আমার কথা কি মনে আছে? সময় হবে আজকে একটু হাঁটতে বের হবার"। জীবনে আশীর্বাদ হয়ে ফিরে আসবে অবন্তী, এই অপেক্ষায় কেটে যায় জয়ের ব্যস্ত সময় গুলি।