জীবন নিয়ে বড্ড সিরিয়াস সাব্বির। নো হাঙ্কি পাঙ্কি, নিজের ইচ্ছে মত বাঁচো আর মাঝে মাঝে পড়াশোনা কর। এই দর্শন নিয়ে ছাত্র জীবন কাটিয়েছে। দেখতে দেখতে সেই ছাত্র জীবন শেষ করে কর্ম জীবনে প্রবেশের সময়। চিরায়ত প্রথার মত খুলনা থেকে সাব্বিরের ঢাকায় আগমন। নিষ্ঠুর এই ঢাকা শহরে যখন টিকে থাকা দায়, সাব্বির যেন দেখলো আশীর্বাদ হয়ে আসছে তার ঢাকা জীবন। দেশের এক নামকরা কোম্পানি তাঁকে স্টার্টিং ৪০ হাজার বেতনে নিয়ে ফেললো। হুজুগে চাকরিটা হয়ে গেলো কিনা এই ভাবতে ভাবতে তিনমাস পর যখন পরিচালক পক্ষে থেকে চিঠি চলেই আসলো, " Mr. Sabbir, You are one of the most talented persons in our company. After one year we will increase your salary to 60% rate with accommodation facility. Hope you will continue with us"।
এই অবস্থা যে কোন বাঙ্গালী পুরুষ ভাবে যে ভবিষ্যৎ নিশ্চিত। আর বাসা থেকে চাপ আসে জীবনে আরেকজন কে নিয়ে আসার। সাব্বির এর লাইফেও ব্যতিক্রম ঘটলো না। সেই সাথে পরিবার থেকে বলা হল, "নিজের পছন্দ মত একজন কে বেছে নে"। এইবার ধরা খেলে সাব্বির। জীবনে পছন্দ করে... ভাবতেই পারছে না সে। স্নিগ্ধ বাতাসে ভরা এক সন্ধ্যায় কফির কাপ হাতে নিয়ে জীবনের ডায়েরি উল্টাতে থাকলো। কেউ কেউ এসেছিল ক্ষণিকের জন্য, কেউ নাড়া দিয়ে চলে গেছে। যার প্রতি আকর্ষণ ছিল সে তো হারিয়ে গেছে কালের অতল গহ্বরে।
ঢাকায় সাব্বিরের এক চাচা থাকেন। সেই চাচা মেডিকেল ভর্তি। চাচা কে দেখতে গেল সাব্বির। কে জানতো এই দেখতে যাওয়া ওলট পালট করে দিবে সব। চাচার অবস্থা মোটামুটি, কিন্তু ডাক্তার বলেছেন কিছুদিন ওয়েট করতে। সাব্বির যেয়ে দেখে চাচার বেড থেকে একটু দূরে এক লাস্যময়ী নারী বসে আছে। প্রথমে খেয়াল না করলেও কিছুক্ষণ পর খালি ওর দিকে চোখ সাব্বিরের। কে এই মেয়ে? এই ভাবতে ভাবতে চাচার কাছ হতে বিদায় নিয়ে ফেললো সেদিনকার মত।
পরের দিন বিকেলে অফিস থেকে আবার হাসপাতালে ছুট সাব্বিরের। চাচার প্রতি ভালোবাসা নাকি কোন মোহ কে জানে? আজও সেই মেয়ে দাঁড়িয়ে। একটু দূরে অবশ্য।
- আপনি কি চাচার কেউ হন?
- জি আপনার চাচা আমার খালু হন।
- ও আচ্ছা আমার নাম সাব্বির। আপনি?
- বললাম না আপনার চাচা আমার খালু হন।
- না না, আপনার নাম আর কি...
- ও, আমার নাম চৈতি।
- থাকেন যায়
আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো সাব্বির। সমস্যা হল যে সাব্বিরের কণ্ঠ দিয়ে বেড়িয়ে আসছে, " Ek ladki ko dekha to aisa laga/Jaise khilta gulaab/Jaise shaayar ka khwaab/Jaise ujli kiran... "
বিকেল করে হাসপাতালে ঢু মারতে থাকলো সাব্বির। এরই মধ্যে চৈতি সম্বন্ধে মোটামুটি খোঁজ লাগিয়ে ফেললো সাব্বির, মেয়ে বিবিএ ফাইনাল ইয়ার। মোটামুটি ভদ্র। চাচীর কল্যাণে জেনে ফেলল চমৎকার মুরগির মাংস রাঁধে সে। সুযোগ পেলেই অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতো। এই মেয়ে কেমন জানি একা একা। চুপ করে বসে আছে। চাচার কিছু লাগলে এগিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। সে সময় সূর্যের আলো মেয়েটার মুখে এসে পরে। এক অপরূপ দৃশ্য! আর অজান্তেই সাব্বিরের কণ্ঠ দিয়ে বের হয় আসে, " Ek ladki ko dekha..."। ইচ্ছে হয় মেয়েটার সাথে গল্প করতে। নরমাল গল্প গুজব। কিন্তু হয়ে উঠে না।
আজ চাচার রিলিজ। সাব্বির আজকেও এসেছে। ফর্মালিটিস গুলো ঐ পূরণ করছে। যাওয়ার পথে চৈতি ডেকে বলল,
- সাব্বির সাহেব শুনেন
- বলো মানে বলেন চৈতি
-আপনি তো একদিন কথা বলে আর বললেন না
- না আপনি যদি কিছু মনে করেন
মুচকি একটা হেসে চৈতি বলল, " আপনার সবই ভাল বুঝলেন, খালি বেসুরে গলায় হিন্দি গানটা গাইবেন না আর। বলে রাখি কথা বলতে আসলে কিছু মনে করতাম না। যাই হোক দেখা হবে আবার, বাসায় বেড়াতে আসবেন।"।
হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের হাতে একটা লাল গোলাপ না থাকার অভাব টা অনুভব করল সাব্বির।