ফোটায় ফোটায় ড্রপার হতে চোখে ওষুধ নিলেন যুবায়ের। ডন যুবায়ের। এই শহরে সকলে তাঁর নাম জানে। ভাবছেন চোখে অসুখ, না তা না। সাল ২০১০। শহরে চলছে ৩য় গ্যাং ওয়ার। বহু পক্ষের লোক মরছে। একদিন ডন যুবায়েরের এরিয়ার সামনে হল ভয়ংকর হামলা। কাছের তিনজন কে হারালেন ডন। অস্ত্র হাতে নিজেই চলে আসলেন ফ্রন্ট লাইনে। ঠিক সেসময়ে চোখে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। ভাল কথা, সেদিন অপর পক্ষের আটজন মারা গেছিল ডনের হাতে। ডনের ঠিক বাম পাশে বসে একজন, নাম সরকার। ঢাকা থেকে আসা। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ৩য় ক্ষমতাধর ব্যক্তির রেফারেন্সে তিনি এসেছেন। বড়ই রহস্যময়। ঠিক তার পিছনে K নামের একজন। ইনি ঢাকার সেকেন্ড ডনের মেয়ের প্রেমিক। ঠিক কি কারনে এই শহরে ডনের ছায়ায় রয়েছেন তিনি তা বুঝা দায়।
স্বয়ং মঙ্গোলিয়া থেকে ডন যুবায়েরের অফিসিয়াল কাজ সামলানোর জন্য এসেছেন একজন। তাঁর হাত অনেক গভীরে যেতে পারে বলে ডনের তার প্রতি আস্থা। ভয়ংকর এক কিলার নিয়ে আসা হয়েছে বরিশাল থেকে। দুর্দমনীয় একজন। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছে ডন , তাই ভবিষ্যতের বিজনেস সামলানোর জন্য উচ্চতর শিক্ষায় অ্যামেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডনের কাছের এক মানুষ। রাজধানীতে তিনি ডনের একজন বড় লিঙ্ক। ভাবছেন এত কিছু কি করে জানলাম ডন যুবায়ের সম্বন্ধে??? আমি বসে আছি ঠিক তাঁর পিছনে। আমি ডন যুবায়েরের প্রধান কনসিলিওর!
শহরে ডন যুবায়েরের যতটা প্রভাব ছিল বলে ভাবা হয়, তা কিন্তু একদিন গড়ে উঠেনি। ২০০২ সালে ডনের শহরে আসা, প্রভাব বিস্তার ডন কে ধীরে ধীরে যেমন জনপ্রিয় করে তোলে তেমনই ডনের শত্রুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ব্যক্তি জীবনে ডন যুবায়ের এক বিচিত্র চরিত্র। কখনও সাহায্যকারী কখনও দয়ালু। কিন্তু বিজনেস এর ক্ষেত্রে যেমন ছিল ধূর্ত, তেমনি ভয়ংকর। শহরের পশ্চিম অংশ টুকু তে ডনের প্রভাব বাড়লেও অন্যান্য অংশের মাফিয়া গুলো ডন যুবায়েরের প্রভাব কখনই মেনে নেয় নি। বরং ধীরে ধীরে তারা শক্তি বাড়াতে থাকে, সমূলে ডন যুবায়ের কে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য। তারা সফল হয়ত হয়ে যেত ২০১০ সালের গ্যাং ওয়ারে, কিন্তু তাঁদের সিদ্ধান্ত তাদের ডুবিয়ে দেয়।
২০১০ সালে শহরের পুরো মাফিয়াদের মধ্যে লেগে যায় যুদ্ধ। অবস্থা এমন, রাস্তায় সাধারন লোকের পাশে মারা যাচ্ছে মাফিয়া দলের কোন সন্ত্রাসী। সরকার থেকে নির্দেশ ছিল প্রশাসনের উপর; মরুক কিছু কুত্তা। পুলিশ ছিল চুপ করে। ডন যুবায়েরের দল মার খাচ্ছিল ভাল করেই। বিজনেসের অবস্থা ছিল খারাপ। সে সময় আমি ডনের কনসিলিওর হয়ে উঠিনি। বর্তমান টিমের কেউ ছিল না ডনের দলে। যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে ডন একাই ছিলেন যথেষ্ট। তার উপর খুলনা শহরে ছিল ডনের যথেষ্ট পরিমাণ সম্মান ও প্রভাব। আর্থিক দিক দিয়ে ভাল ভাবে সাহায্য করছিল খুলনার মাফিয়ারা। ডন যুবায়ের এই সময় দেখিয়েছিলেন তার কু বুদ্ধির একটা চমক। আমি ঠিক জানি না কি ছিল তার প্ল্যানে, তবে রাজশাহী শহরের মাফিয়াদের বিজনেস চরম ভাবে মার খেতে শুর করল। এমনকি ডনের নিজের বিজনেসও। একদিকে গ্যাং ওয়ারে সবার হচ্ছিল চরম ক্ষতি, আরেকদিকে ডনের কারনে বিজনেস এ আসল বিশৃঙ্খলা। হঠাত করেই প্রত্যেক দলের আয় চলে আসলো শূন্যের কোঠায়। একমাত্র ডন যুবায়ের খুলনা থেকে পেতে থাকলো মোটা অংকের সাহায্য। ঢাকার ডনেরা আমাদের উপর ছিলেন যথেষ্ট বিরক্ত, তারা চেয়ে চেয়ে বসেছিলেন কে জিতে শেষ পর্যন্ত।
কফিনের শেষ পেরেক ঠুকার জন্য ডন প্রচুর পরিমান টাকা দিলেন প্রশাসনের সবাই কে। নির্দেশ দিতে অভ্যস্ত ডন অনুরোধ জানালেন, যে জঞ্জাল দূর করেন। শুরু হল মাফিয়াদের উপর স্পেশাল ফোর্সের হামলা। শহরের পূর্বাঞ্চলের মাফিয়া দল গুলো পথে বসে থাকাটাই বাকি ছিল। ডন যুবায়েরের অঞ্চলে তার শত্রুরাও নিশ্চুপ হয়ে গেল একেবারে। এমনকি ডনের ২য় স্ট্রিট ফাইটার টিমের গ্যাংস্টার গামা সহ গোটা দল টা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। ২০১০ সালের সেই দিনের কথা ভুলব না, চোখে আঘাত পেলেন ডন যুবায়ের।
শেষ শক্তি টুকু নিয়ে সব মাফিয়া দল মিলে আঘাত করতে আসলেন ডন যুবায়ের কে। ডন জানতেন প্রশাসন তাঁকে সাহায্য করবে না। এই আঘাতে মারা গেল আমাদের প্রধান স্ট্রিট ফাইটার টিমের গ্যাংস্টার মোহায়মেন। মোহায়মেন ছিল ডনের পুরনো পাপের সাথী। সেই সাথে মারা গেলেন এ শহরে ডন কে যিনি শিক্ষা দিয়েছিলেন চলার এবং ডনের খুলনা থেকে আসা একমাত্র সাথী। সেই প্রথম আমার দেখার সৌভাগ্য হল অস্ত্র হাতে ফ্রন্ট লাইনে ডনের নেমে আসা। আটজন মারা গেলেন ডন যুবায়েরের হাতে।