চলতে-ফিরতে আমরা কমবেশি বিব্রত বোধ করি। অনেক সময় তা মুখে প্রকাশ করা যায় না। এদিকে মহামান্য হাইকোর্ট কিন্তু বিব্রত হলে ঘোষণা দেন। তাই ঘোষণাসহকারে কিছু বিব্রতবোধের নমুনা আজকের রস আলোর আমার আইডিয়া থেকেঃ
ভাষণ দিতে
একজন উঠতি নেতা হিসেবে কমবেশি নানা জায়গায় ভাষণ দিতে হয় আমাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার ভাষণ শুনে লোকে হাততালি দেয় না। উল্টো কিছু লোকে আড়ালে গালিগালাজ করে। এ অবস্থায় ভাষণ দেওয়ার ফলে দলের লোকজনের কাছে আমার দাম দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই নতুন কোনো সভা-সমাবেশে ভাষণ দিতে বিব্রত বোধ করছি। আজ থেকে ভাষণ দেওয়া বন্ধ, শুধু মঞ্চে উঠে বসে থাকব।
পরীক্ষা দিতে
ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দেওয়া আমার কর্তব্য। শুধু পরীক্ষা দিলেই হয় না, রেজাল্ট ভালো করতে হয়। এত দিন রেজাল্ট খারাপের জন্য মানুষের সামনে বিব্রত হতাম। এখন পরীক্ষা হলে গিয়েও বিব্রত বোধ করি। সবাই যখন সমানতালে লিখে চলে, আমি তখন প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে বসে থাকি। অনেক সময় শিক্ষক নিজেই এমনকি ছাত্ররা পর্যন্ত পরীক্ষা বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। এই বিব্রতকর পরিস্থিতি আর সহ্য হচ্ছে না। তাই দ্ব্যর্থহীনকণ্ঠে পরীক্ষা দিতে বিব্রত বোধ করার কথা বলছি।
স্ট্যাটাস দিতে
হাজার হাজার লাইক, শত শত কমেন্ট পাওয়ার আশায় প্রতিদিন ফেসবুকে দিই নানা স্ট্যাটাস। কষ্ট করে কত ঘটনা বানিয়ে স্ট্যাটাস হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার স্ট্যাটাসে কমেন্ট তো দূরে থাকুক লাইকের ঘরে নিজের লাইক ছাড়া আর কারও লাইক থাকে না। এই কারণে ফেসবুক মহলে আজ আমি হাসির পাত্র। তাই অফিশিয়ালি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে বিব্রত বোধ করার ঘোষণা দিলাম।
জেলে যেতে
আমি একজন সন্ত্রাসী। এলাকার লোকজন আমাকে ভয় পায়। কিছুদিন পরই শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা আমার বাসনা। মনের খেদ একটাই, কিছু করলেই আমি ধরা পড়ি। পুলিশ সোজা ঢুকিয়ে দেয় জেলে। আমার চেয়ে ছোটখাটো কত সন্ত্রাসী জীবনে জেলের মুখ দেখল না, আর আমাকে কিনা বারবার দেখতে হচ্ছে! তারপর জেলে আমার স্থান হয় সামান্য চোর-ছিনতাইকারীদের সঙ্গে। এই কারণে অপরাধজগতে আমার ইজ্জত বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমি আজ থেকে জেলে যেতে বিব্রত বোধ করার ঘোষণা দিচ্ছি। আমার সঙ্গে যা ইচ্ছা করুন কিন্তু জেলে যেতে আমি পারব না।
প্রপোজ করতে
প্রপোজ করা আমার একটা শখ। যেকোনো মেয়েকেই প্রপোজ করতে আমি পছন্দ করি। সে জন্য আজ আমার নাম পল্টু থেকে মজনু পল্টুতে পরিণত হয়েছে। মনে আশা ছিল, কেউ হয়তো আমার ডাকে সাড়া দেবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ সাড়া দিল না। বরং অনেকেই আমার দিকে চড়-থাপ্পড় ও স্যান্ডেল ছুড়ে দিল। এই নিয়ে মানবসমাজে আমার অবস্থান বিব্রতকর অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। বিব্রত বোধ করার কারণে আমি আর কোনো প্রপোজ করব না।
সংসদে যেতে
একজন মন্ত্রী হওয়ার দরুন নিয়মিত সংসদে যাওয়া আমার দায়িত্ব। কিন্তু সংসদে গেলেই আমাকে নানা প্রশ্ন করা হয়। এই কাজ করেছি কেন? এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কেন? সবচেয়ে যে প্রশ্ন আমাকে শুনতে হয়েছে, সাংবাদিকদের সামনে উল্টাপাল্টা কথা বলেছি কেন? আর সবচেয়ে বিব্রতকর অবস্থা হচ্ছে প্রশ্নগুলো করেন আমার নিজের দলের সাংসদেরা। সংসদে বসে একজন মন্ত্রীকে তাঁরা কী করে বিব্রত করতে পারেন! বিব্রত বোধ করার কারণে সংসদমুখে আমি আর পা বাড়াব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।