ইসলাম ধর্মের ৫টি স্তম্ভের অন্যতম হল যাকাত। বছর শেষে যাদের সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা ৫২ ভরি রূপা বা তাদের সমপরিমাণ অলস অর্থ বা সম্পদ থাকে, তাদের যাকাত দেয়া ফরজ । উদ্বৃত্ত সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ হল যাকাত।
আমি যতটুকু বুঝেছি, যাকাত হল দারিদ্র বিমোচনের একটা পন্থা। সে জন্যই যাকাতের প্রাপকের তালিকায় প্রথম অগ্রাধিকার হল দরিদ্র আত্মীয় স্বজন। তারপর দরিদ্র প্রতিবেশী।
এই দুই কিসিমের মধ্যে দরিদ্র মানুষ পাওয়া না গেলে তারপর অন্য লোকেরা যাকাত পাওয়ার কথা। যারা যাকাত দেয়ার সামর্থ্য রাখে না, তারাই যাকাত পাওয়ার হকদার।
যাকগে, আমরা কিন্তু দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ারকে ভিক্ষুক বানানোর হাতিয়ারে পরিণত করেছি। এটা হয়ে গেল ভিক্ষুক বৃদ্ধি প্রকল্প।
কিভাবে ?
যাকাতের টাকাটা একজনকে দিলে সে সেই টাকাটাকে কোন একটা কাজে লাগাতে পারত। ছোটখাট একটা ব্যবসা শুরু করতে পারত। সে নিজের পায়ে দাড়িয়ে যেতে পারত সহজেই। হয়তো পরের বছর থেকে সে নিজেই যাকাত দিতে পারত।
কারো কারো যাকাত এত বেশি হয় যে, অনেক মানুষ সারা বছর এত টাকা আয়ও করে না। তারা ইচ্ছে করলে যাকাতের সমূদয় টাকা একজনকে দিয়ে অনায়াসে একজনের জীবন বদলাতে পারে।
যাকাতের টাকা ভাগাভাগি করে দিতে হবে এই কথা কোথাও লেখা নাই।
অথচ আমরা কী করি ?
যাকাতের শাড়ি লুঙ্গি নামে একটা অদ্ভুত জিনিস আমরা আবিষ্কার করেছি। কোরান হাদিস কোথাও এই উদ্ভট জিনিসের কথা লেখা নাই।
যাকাতটাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করতে করতে এটাকে ভিক্ষাবৃ্ত্তি বানিয়ে ফেলেছি। এখন ভিক্ষুক ছাড়া কেউ যাকাত নিতে যায় না। এর ফলে যাকাত দারিদ্র বিমোচনের বদলে ভিক্ষুক বৃদ্ধি প্রকল্পে রূপ নিয়েছে।
কেন এভাবে যাকাত বিলাচ্ছি ?
প্রথম কারণ হল ফুটানি। আমার বাড়ির সামনে যাকাতের কাপড়ের জন্য ৫ হাজার লোক দাড়িয়ে আছে - এটা জেনে মানুষ আমার সম্পর্কে উচু ধারণা পোষণ করবে। সবাই জানবে আমার অনেক মাল হয়েছে। মাল প্রদর্শন করার জন্য যাকাতকে আমরা ভিক্ষাবৃত্তিতে নামিয়ে এনেছি।
যারা রাজনীতি করেন, তারা ভোট বাক্স ভরার জন্য যাকাতকে ব্যবহার করেন। তারা হিসেব করেন কোন বস্তি তাদের ভোট বাক্স। সুতরাং সেই বস্তির প্রত্যেক ঘরে একটা করে শাড়ি ও লুঙ্গি পৌছে দিতে হবে। তাহলে আগামী দিনে ভোট ব্যাংক সুরক্ষিত থাকল।
কী করা দরকার ?
যাকাতের শাড়ি লুঙ্গি নামক বস্তুটাকে আইন করে নিষিদ্ধ করা দরকার। কেবল তা-ই নয়। যাকাতের শাড়ি লুঙ্গি বিতরণও নিষিদ্ধ করা দরকার।
আর যদি যাকাতের শাড়ি লুঙ্গি আনতে গিয়ে কোন দরিদ্র নারী পুরুষ পদদলিত হয়ে মারা যায়, তাহলে যিনি ওই শাড়ি লুঙ্গি বিলিয়ে ফুটানি মারাচ্ছিলেন, তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে ফাসিতে লটকিয়ে দেয়া দরকার। তাহলে এই ফুটানি দূর হয়ে যাবে।
যাকাত দারিদ্র বিমোচন করার হাতিয়ার। ভিক্ষুক বৃদ্ধির কোন প্রকল্প নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:০৬