০১.
ভেকশিনেশন সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞাপন দেখাত টেলিভিশনে। একটা ছবির মাঝখানে সবাই আছে কেবল একজন মুছে গেছে। হারিয়ে গেছে চিরতরে। একটা আনন্দঘন মুহূর্ত ধরা আছে ছবিতে। কিন্তু বাস্তবে সেটা এখন বিষাদের ছবি।
বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু মহামারি হওয়ার আগের লেভেলে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দেশে সোয়াইন ফ্লুতে মারা গেছে একজন। আজ পর্যন্ত দেশে এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২১৩ জন।
যে কোন সময় আমাদের কোন প্রিয়জন আক্রান্ত হতে পারে এই ভাইরাসে। সতর্ক না হলে হারিয়ে যেতে পারে চিরতরে। কেবল ছবি ও স্মৃতি হয়ে যেতে পারে এক লহমায়।
০২.
আমাদের দেশের সরকার ও প্রশাসন যন্ত্রের টনক জিনিসটা ভীষণ ভারি। তাই সেইটা নাড়ানো খুব কঠিন। ওদের টনক নড়তে নড়তে পাবলিকের টনক ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে যায়।
সোয়াইন ফ্লু নিয়া সরকারের কী প্রস্তুতি ও জনগণের প্রতি সরকারের কী আহবান তা জানতে হলে ঢুকুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে।
http://www.mohfw.gov.bd/
সোয়াইন ফ্লু সংক্রান্ত একটা শব্দও নাই ওই ওয়েব সাইটে। সরকারের এত ভারী টনক নড়ানোর সাধ্য আমাদের মতো আম-জনতার নাই। তারচেয়ে বরং আসেন আমাদের নিজেদের টনক নাড়াই।
০৩.
আমার মোবাইল ফোনের অপারেটর বাংলা লিংক। তারা ৫০০০ এস.এম.এম ফ্রি দিয়েছে। তাই আজ সকালে গ্রুপ এস.এম.এস পাঠালাম।
এস.এম.এস এ যা ছিল :
সোয়াইন ফ্লু থেকে বাঁচতে হলে :
# রুমাল ব্যবহার করুন।
# হ্যান্ড ওয়াশ ও সাবান ব্যবহার করুন।
# হাঁচি-কাশি হলে ভীড়ে যাবেন না।
# মাস্ক ব্যবহার করুন।
# ঘর পরিষ্কার রাখুন। জানালা খুলে প্রচুর বাতাস ঢুকতে দিন।
# থুথু ফেলবেন না।
# ভালোভাবে ঘুমান।
# হালকা ব্যায়াম করুন।
# টেনশন করবেন না।
# প্রচুর পানি ও পুষ্টিকর খাবার খান।
# ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।
# স্পর্শ করে অভিনন্দন জানাবেন না।
এই রকম এস.এম.এস পাঠিয়ে সচেতন করা যেতে পারে মানুষকে।
০৪.
আরও তথ্য :
কিভাবে আমি জানব আমার সোয়াইন ফ্লু হয়েছে ?
মেডিক্যাল পরীক্ষা ছাড়া আপনি বুঝতে পারবেন না কোনটি মৌসুমী ফ্লু ও কোনটি সোয়াইন ফ্লু । সোয়াইন ফ্লুর ক্ষেত্রেও মৌসুমী ফ্লুর মত লক্ষণ দেখা যায়। যেমন : জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, গলায় ব্যথা এবং নাক দিয়ে সর্দি পড়া। জ্বরে আক্রান্ত হলেই সোয়াইন ফ্লু হয়েছে- এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। কারও শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি এবং সেইসঙ্গে মাংসপেশীতে ব্যথা, তীব্র মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, হাঁচি-কাশি, বমি ও ডায়রিয়া হলে সেই ব্যক্তি সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। একমাত্র মেডিক্যাল পরীক্ষাই নিশ্চিত করতে পারে সেটা সোয়াইন ফ্লু কি না।
কারা বেশি ঝুঁকিতে আছে ?
অ্যাজমা রোগী, ডায়াবেটিস রোগী, গর্ভবতী মহিলা, ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু, ৬৫ বা ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি এবং ফুসফুস আক্রান্তজনিত যে কোনো রোগী সোয়াইন ফ্লু ঝুঁকিতে থাকে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার ?
দ্রুত শ্বাস বা তীব্র শ্বাস কষ্ট অথবা ৩ দিন জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎকের কাছে যাবেন। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে পাঁচ দিন পরে সোয়াইন ফ্লু শনাক্ত হয়। বেশিরভাগ সমস্যায় বাসাতে থেকেই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। তবে শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার সমস্যা থাকলে জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা আর বেশি দরকার।
কিভাবে সঠিক পন্থায় মাস্ক ব্যবহার করব ?
০১) এমনভাবে মাস্ক পরবেন যাতে মাস্ক ও মুখমণ্ডলের মধ্যে কোন ফাঁক না থাকে।
০২) ব্যবহারের সময় মাস্ক স্পর্শ করবেন না। খুলে ফেলার জন্য বা ধোয়ার সময় কোন ব্যবহৃত মাস্ক স্পর্শ করলে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন অথবা এলকোহলযুক্ত হ্যান্ড রাব ব্যবহার করতে পারেন।
০৩) আর্দ্র ও স্যাতসেতে মাস্ক দ্রুত বদলে ফেলুন। ব্যবহার করুন পরিষ্কার ও শুষ্ক মাস্ক।
০৪) কাপড়ের মাস্ক প্রতিবার ব্যবহারের আগে ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
০৫) প্রতিবার রোগীর সংস্পর্শে আসার পর মাস্ক বদলান।
০৬) মাস্ক মুখ থেকে সরানোর পর প্রতিবার ভালো করে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোন।
আমি অসুস্থ হলে কী করব ?
যদি আপনি অসুস্থতা বোধ করেন, প্রচণ্ড জ্বর থাকে এবং গলা ব্যথা হয় :
০১) বাসায় থাকুন। কর্মস্থল, স্কুল ও ভীড়ে যাবেন না।
০২) বিশ্রাম নিন ও প্রচুর পানি খান।
০৩) হাচি, কাশির সময়ে আপনার নাক মুখ ঢেকে নিন। যদি টিস্যু ব্যবহার করেন, তবে সেগুলো নষ্ট করার ব্যপারে সতর্ক হোন। প্রতি বার হাচি কাশির পর আপনার হাত সাবান পানি দিয়ে ধোন। এলকোহলপূর্ণ হ্যান্ড ওয়াশ বা সাধারণ হ্যান্ড ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
০৪) যদি হাচির সময়ে আপনার সামনে টিস্যু পেপার না থাকে, তবে যতটুকু সম্ভব আপনার আপনার নাক মুখ কনুইয়ের খাজ দিয়ে ঢেকে নিন।
০৫) রোগ ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। কিন্তু অবশ্যই সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন।
০৬) আপনার অসুস্থতা সম্পর্কে আপনার পরিবার ও বন্ধু বান্ধবকে জানান। অন্য মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
০৭) যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। মেডিক্যাল পরীক্ষা দরকার কি না জেনে নিন।
চিকিৎসা নিতে কোথায় যাব ?
নিচের হাসপাতালগুলোতে সরকারীভাবে সোয়াইন ফ্লুর স্বাস্থ্যসেবার যোগাযোগ করতে হবে :
১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২.স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৩.সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৪. স্বাস্থ্য অধিদফ্তর, মহাখালী, ঢাকা
সরকারীভাবে ফ্রি H1N1 টেস্ট করাতে স্বাস্থ্য অধিদফ্তরের "রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (IEDCR)"তে যোগাযোগ করতে হবে নিচের নম্বরে: +8801937000011
শেষ কথা :
পৃথিবীতে আমরা কেউ চিরকাল থাকব না। কিন্তু তাই বলে আমরা কেউ চাই না, অসচেতনতার কারণে অকালে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাক আমাদের প্রিয়জন। আমরা তাদের বাঁচাতে চাই, যত দিন আমরা বেঁচে আছি।
সোয়াইন ফ্লু সংক্রান্ত আরও তথ্যের জন্য :
Click This Link
বাংলায় লেখা কিছু চমৎকার পরামর্শ
আরও কিছু দরকারী পরামর্শ
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
সোয়াইন ফ্লু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশে
সোয়াইন ফ্লুঃ সবার এখনই সচেতনতা দরকার
বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু : মৃত্যু, আতংক নাকি সচেতনতা ???
সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা এ এইচ১এন১/০৯: যা কিছু জানা জরুরি (পর্ব ১)
ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ( এইচ ১ এন ১) ( সোয়াইন ফ্লু ) হতে নিজেকে নিরাপদ রাখুন
সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস (Swine Flu Virus- AH1N1) - কিছু কথা!
আপনার সচেতনতা যেন আপনার জীবন নাশের কারণ না হয়। "মুখে মাস্ক ব্যবহারে সচেতন হউন"
**** সোয়াইন ফ্লু : কিছু জরুরি বিষয় ****
[link|http://www.somewhereinblog.net/blog/nirbikar/29005960|H1N1 (সোয়াইন ফ্লু) [সাবধানতা, উপসর্গ]]
ছবি সূত্র : রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট