আমি তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। তখন আমাদের ক্লাসে ছিল এক দুষ্টু ছেলে। তার নাম মনির হোসেন মিন্টু। সে সব সময় স্যারদের ক্লাসে পড়া জিজ্ঞাসা করলে উল্টাপাল্টা জবাব দিত। অবশ্য তার জবাবে যুক্তি থাকে। একদিন ক্লাসে বিজ্ঞান স্যার আমাদেরকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সর্ম্পকে বোঝাচ্ছিলেন। তিনি অনেকবার বুঝানোর পর স্যার একে একে সবাইকে বললেন, আম পাকলে আকাশের দিকে না উঠে মাটিতে পড়ে কেন?
আমরা সবাই যে যার মতো বুদ্ধি খাটিয়ে উত্তর দিলাম। যখন স্যার মিন্টুকে প্রশ্ন করলেন মিন্টু তখন জবাব দিল, স্যার আকাশেতো খাওয়ার কেউ নেই, তাই আম আকাশের দিকে না উঠে মাটিতে পড়ে যায়।
তার উত্তর শুনে আমরা সবাই তখন খিল খিল করে হাসতে লাগলাম।
স্যার আর কোন কথা না বলে ক্লাস থেকে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর বাংলা স্যার ক্লাসে আসলেন। তিনি আমাদের সবাইকে কাল কত প্রকার ও কি কি? বলতে বললেন। আমরা সবাই কালের প্রকারভেদ গুলি বলি। কিন্তু মিন্টুকে বলতেই মিন্টু চট করে উত্তর দিল স্যার ওদের উত্তর হয়নি।
স্যার বললেন, কেন হয়নি?
কারণ স্যার কাল হচ্ছে ১২ প্রকার। আর তারা উত্তর দিচ্ছে ৩ প্রকার। তারা ৯ প্রকার কম বলেছে।
স্যার মিন্টুর কথায় আশ্চার্য হয়ে বললেন, বলতো দেখি তোমার প্রকারভেদগুলো।
ঠিক আছে স্যার বলছি।
১. অতীত কাল
২. বর্তমান কাল
৩. ভবিষ্যৎ কাল
৪. গতকাল
৫. সকাল
৬. বিকাল
৭. আগামীকাল
৮. ইহকাল
৯. পরকাল
১০. একাল
১১. সেকাল
১২. যৌবনকাল
মিন্টুর এ প্রকারভেদগুলো শুনে স্যারসহ আমরা সবাই খিলখিল করে হাসলাম।
পড়া শেষে আমাদের সাবাইকে উদ্দেশ্য করে স্যার বললেন, তোমরা সবাই মনযোগ দিয়ে শোন, কখনো পরের উপকার করতে ভুলবে না। যে উপকার করে না সে মানুষ না।
মিন্টু তখন জবাব দিল, স্যার আপনার ক্ষেত্রেও কি সেটা প্রযোজ্য?
স্যার বললেন, অবশ্যই। তবে একথা বললে কেন তুমি?
স্যার, সেদিন পরীক্ষার হলে কি বিপদে পড়েছিলাম। কিন্তু উত্তর বলে দিয়ে আপনি একটুও উপকার করেননি।
চুপ বেয়াদব, কিসের সাথে কি মিলাচ্ছ।
মিন্টু তখন লজ্জা পেল। চুপ করে মাথা নিচু করে রইল।
পরিশেষে স্যার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দেখ তোমরা জীবনে কু-অভ্যাস, কু-কথা, কু-নেশা কু-পরামর্শ হতে বিরত থাকবে। কারণ এগুলো মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।
আমরা সবাই বললাম, ঠিক আছে স্যার। কিন্তু দুষ্টু মিন্টু বলে উঠল, স্যার আমার পক্ষে এক কু-ত্যাগ করা সম্ভব নয়।
স্যার রাগান্বিত স্বরে বললেন, তুমি সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি কর, কেন কু-ত্যাগ করা সম্ভব নয়?
স্যার আমার বাড়ি কুমিল্লা। কু-ত্যাগ করলে বাড়ির ঠিকানাটাই যে ভুলে যাব!
এ কথা শুনে আরেকজন ছাত্র বলে উঠল, স্যার আমার বাড়ি কুষ্টিয়া।
স্যার দুই ছাত্রের কথা শুনে বোকা হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর স্যার বললেন, ঠিক আছে তোমরা সবাই কু-অভ্যাস নিয়েই থাক আমি চললাম। বলেই স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে আসলেন।
স্যার ক্লাস থেকে বের হওয়ার পর নরসিংদীর ছেলে ছোটন বললো, কিরে মিন্টু তুই স্যারদের সাথে এভাবে উল্টাপাল্টা কথা বলছ কেন?
মিন্টু বললো, কেন কি হয়েছে তোর?
আমার কিছু হয়নি। আমার জানতে ইচ্ছে করছে তোর বাড়ি কোথায়?
কেন? শুনলি না আমার বাড়ি কুমিল্লা।
কিন্তু তোর গ্রাম কোথায়?
শুনবি নাকি আমার গ্রামের নাম?
হ্যাঁ শুনব।
আয় দেখিয়ে দেয়।
এখান থেকেই দেখাবি?
হ এখান থেকেই দেখাব।
আচ্ছা দেখাতো দেখি তোদের গ্রাম।
এ কথা বলার সাথে সাথে মিন্টু ছোটনকে সজোরে ধাক্কা দিল। ধাক্কা খেয়ে ছোটন মাটিতে পড়ে গেল। তখন তার একটি দাঁত ভেঙ্গে গেল।
ছোটন তখন কাঁদতে কাঁদতে হেডস্যারের কাছে গিয়ে মিন্টুর নামে নালিশ করল। হেডস্যার ছোটনের অভিযোগ শোনার পর মিন্টুকে স্যারের রুমে ঢেকে আনলেন। মিন্টু আসামীর মতো হেডস্যারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হেডস্যার জিজ্ঞেস করলেন, মিন্টু তুমি ওকে ধাক্কা দিয়েছ কেন?
মিন্টু বললো, স্যার ও আমাদের গ্রাম দেখতে চেয়েছিল, তাই।
তাই বলে কি ধাক্কা মারতে হবে?
স্যার আমাদের গ্রামের নাম ধাক্কামারা। সে আমাদের গ্রাম দেখতে চেয়েছে তাই ধাক্কা দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি!
মিন্টুর এই খামখেয়ালিপনা কথা শুনে হেডস্যার খুবই রাগান্বিত হলেন। অন্য একজন ছাত্রকে বললেন একটা বেত আনতে। একজন ছাত্র একটি বেত এনে দেয়। হেড স্যার বেত হাতে নিয়ে মিন্টুকে সামনে আসতে বললেন। মিন্টু সামনে আসতেই কয়েকটি বেত মারল আর বললেন, আর কখনো দুষ্টামী করবে?
মিন্টু কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, না স্যার। এখন থেকে আমি ভাল হয়ে যাব। আর কখনো এমন দুষ্টামী করবো না। আমাকে মাফ করে দেন স্যার। হেডস্যার তখন মিন্টুকে মাফ করে দিলেন এবং ছোটনের সাথে মিলিয়ে দিলেন।
সেদিনের সেই ঘটনার পর থেকে মিন্টু আর দুষ্টামী করে না। এখন থেকে খুব ভাল মানুষ হয়ে গেছে। নিয়মিত ক্লাসে আসে। প্রতিদিনের পড়া মুখস্থ করে আসে। ইতিমধ্যে সকল ছাত্রদের মধ্যে সে একজন প্রিয় ছাত্র হয়ে গেল এবং ছোটন তার প্রিয় বন্ধু হয়ে গেল।
রচনাকাল-জুলাই ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৮